সঙ্ঘ ব্যতীত কোনো বড় কাজ হতে পারে না : স্বামী বিবেকানন্দ

স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার এক কায়স্থ দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন যোগী, দার্শনিক, লেখক, সুবক্তা ও সংগীতজ্ঞ।

মা-বাবা

পিতা বিশ্বনাথ দত্ত কলকাতা উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী ছিলেন। মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী ছিলেন সিমলার সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা।

বিবেকানন্দের পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। ডাকনাম ছিল বীরেশ্বর বা বিলে।

গীতা পাঠ করার চেয়ে ফুটবল খেলা বেশি উপকারি

ছেলেবেলায় বিবেকানন্দ অত্যন্ত দুরন্ত ছিলেন। সুঠামদেহের অধিকারী বিবেকানন্দ খেলাধুলায় খুবই আগ্রহী ছিলেন।

নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন। কুস্তি ও বক্সিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। কর্মক্ষেত্রে সবল ও নিরোগ দেহের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই তিনি বাঙালিকে উদ্দেশ্যে বলেছিলেন- “গীতা পাঠ করার চেয়ে ফুটবল খেলা বেশি উপকারি।”

অবশ্য ছেলেবেলা থেকে আধ্যাত্মিকতার দিকেও তার বেশ ঝোঁক ছিল। প্রায়ই ধ্যানে বসতেন। সাধু সন্ন্যাসীদের প্রতি আগ্রহ বোধ করতেন।

স্বামী বিবেকানন্দ : তার জীবন ও শিক্ষা (গুরুজীর আলোচনা)

পড়াশোনা

১৮৭১ সালে বিবেকানন্দ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

এরপর তিনি জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনস্টিটিউশনে এফএ পড়ার জন্যে ভর্তি হন। সেখানকার অধ্যক্ষ উইলিয়াম হেস্টির সান্নিধ্যে তিনি পাশ্চাত্য যুক্তিবিদ্যা, ইউরোপীয় ইতিহাস অধ্যয়ন ও দেশ বিদেশের দর্শনশাস্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন। দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সাহিত্য বিষয়ে বই পড়া শুরু করেন।

বেদ, উপনিষদ, ভাগবদগীতা, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের মতো ধর্মগ্রন্থ পাঠেও বিবেকানন্দের আগ্রহ ছিল।

এছাড়া তিনি সমাজসেবামূলক কাজকর্মে অংশ নিতেন, মানুষের উপকার করতেন।

তার বিখ্যাত উক্তি- “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সাথে সাক্ষাত : যে সাক্ষাত তার জীবনকে পাল্টে দিয়েছিল পরবর্তীকালে

১৮৮০ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সাথে বিবেকানন্দের সাক্ষাত হয়। রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের সম্ভাবনা বুঝতে পেরে তাকে দক্ষিণেশ্বরে যাবার আমন্ত্রণ জানান।

এর আগে বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা প্রথম শোনেন জেনারেল এসেম্বলী ইনস্টিটিউশনে পড়ার সময়। অধ্যাপক উইলিয়াম হেস্টি একটি সাহিত্যের ক্লাসে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘দ্য এক্সকারশন’ কবিতাটি পড়ানোর সময় রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা বলেছিলেন।

সংসার জীবনে আবদ্ধ হবার কোনো আগ্রহই তার ছিল না

এফ.এ. পরীক্ষার পর পিতা বিশ্বনাথ দত্ত পুত্র বিবেকানন্দের বিবাহের জন্যে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।

কিন্তু সংসার জীবনে আবদ্ধ হবার কোন আগ্রহই তার ছিল না। তিনি জীবনের প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে চেয়েছিলেন। সত্য পথের সন্ধানে তিনি দক্ষিণাশ্বরের ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সান্নিধ্যে চলে যান।

মন্দিরে গিয়ে জাগতিক প্রয়োজনের জন্যে প্রার্থনা করতে পারছিলেন না!

১৮৮৪ সালে পিতা বিশ্বনাথ দত্ত মারা যান। এরপর তার পরিবার তীব্র অর্থকষ্টের মধ্যে পড়ে। আত্মীয়স্বজনরা তাদের পৈতৃক বাসস্থান থেকে উৎখাত করার চেষ্টা শুরু করে।

একদা সচ্ছল পরিবারের সন্তান বিবেকানন্দ কলেজের দরিদ্রতম ছাত্র হিসেবে চাকরির অনুসন্ধান শুরু করেন এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে ওঠেন।

কিন্তু একই সাথে দক্ষিণেশ্বরে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সান্নিধ্যে তিনি প্রশান্তি পেতে থাকেন।

বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কাছে অনুরোধ করেন, তিনি যেন তার পরিবারের আর্থিক উন্নতির জন্য প্রার্থনা জানান।

রামকৃষ্ণ বলেন, তিনি যেন নিজে মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করেন। পরামর্শ অনুসারে, নরেন্দ্রনাথ তিনবার মন্দিরে যান। কিন্তু জাগতিক প্রয়োজনের জন্য প্রার্থনার পরিবর্তে তিনি জ্ঞান বিবেক ও বৈরাগ্য প্রার্থনা করেন।

এরপরই তিনি ঈশ্বর-উপলব্ধির জন্যে সংসার ত্যাগ করতে মনস্থ করেন এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে 'গুরু' বলে মেনে নেন।

রামকৃষ্ণ তার প্রতিভা ও আধ্যাত্মিক শক্তি উপলব্ধি করে তাকে ‘বিবেকানন্দ’ নাম দেন। 

গুরু রামকৃষ্ণদেবের অসুস্থতা এবং বিবেকানন্দ ও সহশীষ্যদের সন্ন্যাস লাভ 

১৮৮৫ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের গলার ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে প্রথমে উত্তর কলকাতায় শ্যামপুকুর ও পরে কাশীপুরের একটি বাগানবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এসময় বিবেকানন্দসহ রামকৃষ্ণদেবের অন্যান্য শিষ্যগণ তার সেবা-যত্ন করেন।

বিবেকানন্দ ও আরো কয়েকজন শিষ্য এসময় রামকৃষ্ণদেবের কাছ থেকে সন্ন্যাস ও গৈরিক বস্ত্র লাভ করেন। এভাবে রামকৃষ্ণ শিষ্যমণ্ডলীতে প্রথম সন্ন্যাসী সংঘ স্থাপিত হয়।

বুদ্ধগয়ায় এক অপার্থিব মুহূর্ত

১৮৮৬ সালের এপ্রিলে বিবেকানন্দ গুরু রামকৃষ্ণদেবের নির্দেশে গয়া অভিমুখে যাত্রা করেন। এরপর যান বুদ্ধগয়ায়।

সেখানে বোধিসত্ত্বের মন্দিরে ধ্যানস্থ হন। তিনদিন পর তার ধ্যান ভঙ্গ হলে তিনি ফিরে যান গুরুর কাছে।

রামকৃষ্ণদেব বিবেকানন্দকে জিজ্ঞেস করেন- “তুই কী চাস?” বিবেকানন্দ উত্তর দেন- “শুকদেবের মতো সর্বদা নির্বিকল্প সমাধিযোগে সচ্চিদানন্দ সাগরে ডুবিয়া থাকিতে চাই।”

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এ কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন- “ঐ কথা বলতে তোর লজ্জা করে না? কোথায় বটগাছের মতো বেড়ে উঠে শত শত লোকের শান্তির ছায়া দিবি তা না! তুই নিজের মুক্তির জন্যে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিস, এত ক্ষুদ্র আদর্শ তোর!”

নিজের ভ্রান্তি অনুভব করলেন বিবেকানন্দ। প্রতিজ্ঞা করলেন, মানবসেবায় জীবন উৎসর্গ করবেন।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বিবেকানন্দকে শিক্ষা দেন- মানব সেবাই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সাধনা। তিনি বিবেকানন্দকে সন্ন্যাসী সংঘের নেতা নির্বাচিত করেন ও অন্যান্য সন্ন্যাসী শিষ্যদের দেখভাল করার নির্দেশ দেন।

গুরুর দেহত্যাগ ও প্রতিকূলতা

১৮৮৬ সালের ১৫ই আগস্ট রামকৃষ্ণ দেহত্যাগ করেন। তার ভক্ত ও অনুরাগীরা তার শিষ্যদের সাহায্য করা বন্ধ করে দেন।

বাড়িভাড়ার টাকা জোগাড় করতে না পারায় কয়েকজন শিষ্যকে নিয়ে বিবেকানন্দ উত্তর কলকাতার বরাহনগর অঞ্চলে একটি ভাঙা বাড়িতে নতুন মঠ প্রতিষ্ঠা করার কথা চিন্তা করেন।

বরাহনগর মঠের এই বাড়িটির ভাড়া কম ছিল। মাধুকরী অর্থাৎ সন্ন্যাসীদের ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে এই বাড়িভাড়ার টাকা জোগাড় করা হত।

বরাহনগর মঠ হল রামকৃষ্ণ মঠের প্রথম ভবন। এই মঠে বিবেকানন্দ ও অন্যান্য শিষ্যেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধ্যান করতেন এবং কঠোর ধর্মানুশীলন অভ্যাস করতেন।

শুরু হলো পরিব্রাজকের জীবন : দেশে-বিদেশে

১৮৮৮ সালে বিবেকানন্দ ভারতবর্ষ ভ্রমণ শুরু করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভারতবর্ষের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে বেড়ান। একে একে উত্তর ভারত, হিমালয়, রাজপুতানা, পশ্চিম ভারত, দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ করেন।

১৮৯৩ সালে তিনি জাপান ভ্রমণ করেন। জাপানের তিনটি বড় শহর ওসাকা, কিয়োটো এবং টোকিও ভ্রমণ করে তিনি জাপানীদের পৃথিবীর সবচেয়ে ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জনগণের অন্যতম’ বলে অভিহিত করেন।

তিনি শুধু তাদের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরের পরিচ্ছন্নতার দ্বারাই চমৎকৃত হননি। তাদের কর্মচাঞ্চল্য, মনোভাব ও ভঙ্গি দেখেও চমৎকৃত হন। যাদের সকল কিছু্কেই তার মনে হয়েছিল ‘চিত্রবৎ বা ছবির মতো’।

শুধু ভারতবর্ষে নয়, বিশ্বের মানুষের কাছে নিজের বিশ্বাসের কথা প্রচার করতে চাইলেন স্বামী বিবেকানন্দ। পরাধীন ভারতবর্ষের প্রতিনিধি হিসেবে দৃপ্ত কন্ঠে বললেন- I have a message to the west.

পাশ্চাত্য ভ্রমণে যাবার আগে বিবেকানন্দ গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের পত্নী এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সংঘজননী গুরুমা সারদা দেবীর অনুমতি নিতে যান। সারদা দেবী তখন রান্নাঘরে ছিলেন। তিনি বিবেকানন্দকে রান্নাঘরে রাখা একটি ছুরি এগিয়ে দিতে বলেন। বিবেকানন্দ সারদা দেবীকে ছুরিটি এগিয়ে দেন। তিনি ছুরিটি গ্রহণ করে বিবেকানন্দকে পাশ্চাত্য ভ্রমণের অনুমতি দিলেন।

বিবেকানন্দ বিষ্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি তো আমার কোনো পরীক্ষা নিলেন না। সারদা দেবী বললেন, তোমার পরীক্ষা হয়ে গেছে। তুমি ছুরিটি দেয়ার সময় ধারালো পাশটা তোমার নিজের দিকে রেখেছো আর হাতলের পাশটা আমার দিকে দিয়েছ। তোমার দ্বারা যে কারো কখনো অকল্যাণ হবে না এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

বেলুর মঠে কিছুক্ষণ (কোরাম লেখা)

১৮৯৩ সালের ৩১ মে বিবেকানন্দ শিকাগো অভিমুখে যাত্রা করেন। চীন, কানাডা হয়ে তিনি আমেরিকার শিকাগো পৌঁছান ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে।

একঘণ্টা পর এ বইটি থেকে যে-কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারেন

বিবেকানন্দ আমেরিকায় এক জার্মান দার্শনিকের গৃহে কিছুদিন অবস্থান করেন। এক সন্ধ্যায় তিনি দেখেন জার্মান দার্শনিক বিশাল এক দর্শনশাস্ত্র খুব বিচলিত হয়ে পাঠ করছেন।

বিবেকানন্দ এক ঘন্টার জন্যে বইটি ধার চাইলেন। দার্শনিক ভদ্রলোক বিষ্মিত ও বিরক্ত হয়ে বললেন বইটি এতই জটিল আর দুর্বোধ্য যে গত এক সপ্তাহ ধরে বইটি পড়ে আমি কিছুই বুঝতে সক্ষম হইনি; আর আপনি এক ঘন্টায় পড়ে ফেলবেন? যেখানে আপনি জার্মান ভাষাই জানেন না?

বিবেকানন্দ বললেন, এক ঘন্টা পর আপনি এ বই থেকে আমাকে যে কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারেন। বিবেকানন্দ নিজের রুমে যেয়ে বইটি দুই হাতের তালুবন্ধি করে ধরলেন এবং চোখবন্ধ করলেন।

একঘন্টা পর তিনি বইটি ফেরত দিয়ে বললেন, শেখার মতো তেমন কিছুই নেই এই বইতে। কোনো বই না পড়েই তার মর্ম উপলব্ধি করার বিষ্ময়কর ক্ষমতা ছিল স্বামী বিবেকানন্দের মধ্যে।

শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে ভাষণ

১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে বিবেকানন্দ তার প্রথম সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। 

সম্মেলনে তার ‘Sisters and Brothers of America’- সম্ভাষণ শুনে সাত হাজার দর্শক-শ্রোতা দুই মিনিট দাঁড়িয়ে তাকে সংবর্ধনা জানান।

নীরবতা ফিরে আসার পর তিনি তার বক্তৃতা শুরু করেন।

বিবেকানন্দ প্রায় দুই বছর আমেরিকায় ছিলেন। এসময় তিনি আমেরিকার বড় বড় শহর ঘুরে বেড়ান এবং বক্তৃতা দেন।

১৮৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ইংল্যান্ডে যান। কয়েকমাস থেকে আবার আমেরিকা যান এবং চার মাস পর পুনরায় ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। প্রায় সাত মাস তিনি ইংল্যান্ডে ছিলেন। এসময়ে তিনি অভূতপূর্ব খ্যাতি অর্জন করেন।

১৮৯৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চার বছরের বিদেশ ভ্রমণ শেষে তিনি ভারতবর্ষে ফেরত যাত্রা করেন। ১৮৯৭ সালের ১৫ই জানুয়ারি তিনি কলম্বো এসে পৌঁছান।

স্বামী বিবেকানন্দ শুধুমাত্র প্রাচ্যের বাণীকে পাশ্চাত্যে তুলে ধরে দেশের সম্মান বৃদ্ধি করেননি, তার এই ঐতিহাসিক সাফল্যে ভারতবর্ষের মানুষ ফিরে পেয়েছিল তাদের আত্মবিশ্বাস আর আত্মমর্যাদা।

সঙ্ঘ ব্যতীত কোনো বড় কাজ হতে পারে না

১৮৯৭ সালের ১লা মে স্বামী বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভক্ত ও শিষ্যদের সাথে মিলিত হন। তিনি বলেন, “নানান দেশ ঘুরে আমার ধারণা হয়েছে সংঘ ব্যতীত কোনো বড় কাজ হতে পারে না।”

তিনি ১৮৯৮ সালের ৯ই ডিসেম্বর কলকাতায় ধর্ম প্রচারের জন্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রামকৃষ্ণ মঠ’ এবং সামাজিক কাজের জন্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রামকৃষ্ণ মিশন।’ এটি ছিল শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক, চিকিৎসা-সংক্রান্ত এবং দাতব্য কাজের মধ্য দিয়ে জনগণকে সাহায্য করার এক সামাজিক-ধর্মীয় আন্দোলনের সূচনা।

বিবেকানন্দ ভারতে ও ভারতের বাইরে হিন্দুধর্মকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে সফল হয়েছিলেন। তিনিই প্রথম যোগী যিনি পাশ্চাত্য সমাজে যোগ, ধ্যান ও আত্মবিকাশের অন্যান্য ভারতীয় পদ্ধতিগুলি নিয়ে যান।

বিবেকানন্দ ছিলেন নয়া-বেদান্তের প্রধান প্রতিনিধিত্বকারী, যা মূলত পশ্চিমী অভ্যন্তরীণ ঐতিহ্য, অতীন্দ্রিয়বাদ, নতুন চিন্তাধারা ও ধর্মতত্ত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হিন্দুধর্মের নির্বাচিত দিকের একটি আধুনিক ব্যাখ্যা।

স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন-
“যতক্ষণ পর্যন্ত আমার দেশের একটি কুকুরও ক্ষুধার্ত, আমার সমগ্র ধর্মকে একে খাওয়াতে হবে এবং এর সেবা করতে হবে, তা না করে অন্য যা-ই করা হোক-না-কেন তার সবই অধার্মিক।”
“জেগে ওঠো, সচেতন হও এবং লক্ষ্যে না-পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না।”
“শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে থাকা উৎকর্ষের প্রকাশ।”
“ধর্ম হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে থাকা দেবত্বের প্রকাশ।”
“মানুষের সেবা করা হচ্ছে ঈশ্বরের সেবা করা।”

অসুস্থতা ও মৃত্যু

১৯০১ সালের শুরু থেকেই স্বামীজী সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেন। অত্যধিক পরিশ্রমে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল।

তিনি বেশিরভাগ সময়ে ধ্যানমগ্ন থাকতে শুরু করেন।

১৯০২ সালের ৩রা জুলাই বিবেকানন্দ ভক্ত-শিষ্যদের খাওয়ার পর নিজে হাত ধুইয়ে দেন। পরদিন ৪ঠা জুলাই সকাল থেকেই তিনি খুব প্রফুল্ল ছিলেন। সবার সাথে একসাথে খাওয়া-দাওয়া করে সন্ধ্যার পর তিনি নিজ ঘরে ধ্যানমগ্ন হন।

রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ধ্যানের মধ্যেই স্বামী বিবেকানন্দ মহাসমাধিতে চলে যান। এসময় তার বয়স হয়েছিল ৩৯ বছর ৬ মাস।

ভারতে স্বামী বিবেকানন্দকে ‘বীর সন্ন্যাসী’ নামে অভিহিত করা হয় এবং তার জন্মদিনটি ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়।