হাতের কাছে পাইনে খবর, খুঁজতে গেলাম দিল্লি শহর!

ফরাসি দার্শনিক মঁন্তের একটা কথা আছে, “ মাই লাইফ হ্যাজ বিন ফুল অফ টেরিবল মিসফরচুনস্, মোস্ট অফ হুইচ নেভার হ্যাপেনড্!” অর্থাৎ সারাজীবনে যত বিপদ-আপদ আমাকে বিপন্ন করেছে তার বেশিরভাগই কখনো ঘটে নি। কী চরম সত্যি কথা! একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, অমুকে শত্রুতা করতে পারে, এমনটা না হয়ে অমনটা হতে পারে, এরকম কত আশঙ্কা আমাদের দিনকে দিন বরবাদ হয়েছে, রাতের ঘুম হারাম হয়েছে। মাথা ব্যথায় ডজন-ডজন ওষুধ গিলেছি, নাওয়া-খাওয়ায় অনিয়ম করে রোগে ভুগেছি, জ্বরে পড়েছি। কারণ কী? স্রেফ অহেতুক টেনশন। বিপজ্জনক ঘটনা যে ঘটে না তা নয়, তবে মঙ্গলজনক ঘটনাই বেশি ঘটে। তাই টেনশন করে তো লাভ নেই বরং ঠান্ডা মাথায় সমস্যার প্রতিকারে কাজ করা ভালো।

এজন্যেই আমরা সবসময় বলি, ইতিবাচক চিন্তা করবেন। যাকে আমরা বাস্তবতা বলছি তা আপনার অন্তর্গত ধারণার প্রতিফলন ছাড়া আর কিছুই না। বাবা-মা'রা যে এতদিন বলে এসেছেন “ চিন্তা করিস্ না, সব ঠিক হয়ে যাবে” সেটা তো নিছক অভিজ্ঞতার আলোকেই; উল্টোদিকে পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদী মানুষরাও কিন্তু গবেষণাগারে হিসেব-নিকেশ করে একই কথা প্রমাণ করেছেন। ডা. ম্যাক্সওয়েল মলজ তো এ নিয়ে একটা বই লিখে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি দেখিয়েছেন যে নিজের ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তা করে একজন মানুষ তার জীবনকে আমূল পাল্টে দিতে পারে। ‘সাইকো-সাইবারনেটিকস্’ নামের সেই বইয়ে তিনি অজস্র উদাহরণে দেখিয়েছেন ‘অমুকে আমাকে দেখতে পারে না’–এমনটা ভেবে আমরা নিজেরাই ভুল পদক্ষেপের মাধ্যমে ঘটনাকে নিজের প্রতিকূলে তাড়িয়ে দেই। বরং আমরা যদি ভাবি ‘অমুকে আমাকে পছন্দ করে, আমার কাজ তার খুব পছন্দ হবে’–তাহলে আমার ভেতরে কাজের স্পৃহা ও আন্তরিকতা বেড়ে যাবে বহুগুণ, যা অপরপক্ষের প্রশংসার কারণ হবে। অর্থাৎ ঘটনাকে নিজের বিরুদ্ধ না ভেবে যখনই আমরা ভাবতে পারব যে ‘আমিই ঘটনার নায়ক, আমার ইচ্ছেতেই সব চলবে’–তখনই দেখব ফলাফল নিজের অনুকূলে আসছে।

আর এই ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে প্রথম পদক্ষেপটা খুব সহজ। নিজের ব্যাপারে সকল ‘ না’ কে পাল্টে দিন ‘ হাঁ’ দিয়ে। ‘ কোনোরকম আছি’ না বলে দিন শুরু করুন ‘ বেশ ভালো আছি’ দিয়ে। ‘ এটা আমি পারব না’–এর বদলে ভাবুন ‘চেষ্টা করে দেখতে দোষ কী!’ আস্তে আস্তে বদলাতে থাকবেন আপনি। কোনো একটি বদ অভ্যেস দূর করতেও ইতিবাচকতার এই শক্তিকে প্রয়োগ করা যায়। যেমন মনে মনে যদি সবসময় আওড়াতে থাকেন ‘আমি সাহসী! আমি নির্ভীক!’–একটা সময় নিজের সাহস দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।

আসলে ‘ আমিও পারব’–এই ধারণাই সাফল্যের পথে আপনার প্রথম পদক্ষেপ। তাই নিজের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা পাল্টে দিন আজই। যে অর্জনকে এতদিন লক্ষ যোজন দূর বলে মনে হয়েছিল দেখবেন আজ তা ধরা দিয়েছে একেবারে হাতের মুঠোয়। ঐ যে মিল্টনের কবিতা আছে না-“ দি মাইন্ড ইটসেলফ ক্যান মেক এ হেভেন অব হেল অ্যান্ড হেল অব হেভেন”; অর্থাৎ বেহেশত-দোযখ দুটোই আপনার মনের ভেতর। মনের শক্তিতে দোজখকে মানুষ বেহেশত্ বানাতে পারে, আবার উল্টোপথে হাঁটলে বেহেশতও দোজখে পরিণত হতে পারে।