ইতিবাচক হোন, সুস্থ থাকবেন আপনি

published : ৩০ আগস্ট ২০১৬

গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক মানুষদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ ভালো। রোগ থেকে তারা দ্রুত সেরে ওঠেন এবং তারা দীর্ঘজীবন লাভ করে থাকেন। হার্টের বাইপাস সার্জারি করা হয়েছে এমন কিছু রোগীর ওপর একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, যারা মানসিকতায় ইতিবাচক, নিরাময়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন, অন্যদের চেয়ে বেশ দ্রুতই তারা সেরে উঠেছেন। 

আর দীর্ঘজীবনের ব্যাপারটা সুস্থ ইতিবাচক মানুষদের ক্ষেত্রে যেমন ঘটেছে, তেমনি ঘটেছে ক্যান্সার, হৃদরোগ বা কিডনি জটিলতায় ভুগছেন এমন ইতিবাচক মানুষদের ক্ষেত্রেও। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে অ্যানালজ অব বিহেভাওরাল মেডিসিন, ভলিউম ৩৯, পৃষ্ঠা ৪, (Annals of Behavioral Medicine, vol 39, p 4).

আসলে নেতিবাচক চিন্তা এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণে মানুষ যে অসুস্থ হয়, এটা এখন আর নতুন কোনো তথ্য না। স্ট্রেসের শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়াটি ছিল প্রাণীদেহের একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া। বিপদে পড়লে আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যাতে তারা নিতে পারে, সেজন্যেই এর অস্তিত্ব। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে যখন এ অবস্থা চলতে থাকে, তখন ডায়াবেটিস এবং ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতার মতো রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন, ইতিবাচক চিন্তা, আশাবাদী হওয়া ইত্যাদি অভ্যাসগুলো শুধু যে স্ট্রেসের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে, তা নয়, দেহের নিজস্ব নিরাময় এবং মেরামতেও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অর্থাৎ স্ট্রেসের কারণে যে ক্ষতিগুলো দেহে হচ্ছিল তাতো কমেই, তার ওপরে ঘটতে থাকে আরো নানাবিধ ভালো শারীরিক প্রভাব।

এসময় কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ যেমন কমে, তেমনি ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ রেসপন্সের উল্টো ‘রেস্ট এন্ড ডাইজেস্ট’ সিস্টেম সক্রিয় হয় দেহের ভেতরে। ফলে রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় অনেকটাই। (সাইকোসোমাটিক মেডিসিন, ভলিউম ৭০, পৃষ্ঠা ৭৪১, Psychosomatic Medicine, vol 70, p 741)

শুধু পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে না, নিজের ব্যাপারেও যারা ইতিবাচক, নিজের প্রতি আস্থা ব্যক্ত করেন যারা, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তাদের কম, আর হলেও তা থেকে দ্রুত সেরে ওঠার ঘটনাই ঘটেছে তাদের ক্ষেত্রে। (Journal of Personality and Social Psychology, vol 85, p 605)

এখন কথা হলো, কেউ কেউ স্বভাবজাতভাবেই ইতিবাচক। কিন্তু যারা তা নন, তারা কী করবেন? ইতিবাচকতা আসলে একটা অভ্যাস। অনুশীলনের মাধ্যমে এ অভ্যাস সৃষ্টি সম্ভব।

১. আজকে থেকে খেয়াল করুন, সারাদিনে যে কথাগুলো আপনি বলেন, তার মধ্যে নেতিবাচক কি কি কথা আপনি বলেন। নেতিবাচক শব্দ বা বাক্যগুলোকে শনাক্ত করুন।

২. এরপর এ কথাগুলোকে পাল্টে দিন। প্রতিটি কথা ইতিবাচকভাবে শেষ করুন। যেমন, ‘কিছুই হয় নি’ না বলে বলুন ‘এটা এভাবে করলে ভালো হতো’। ‘ঝামেলার কাজ’ বা ‘চরম বিরক্তিকর কাজ’ না বলে বলুন ‘কাজটিতে বেশ বৈচিত্র আছে!’ ‘হায় আল্লাহ! এখন কী হবে?’ না বলে বলুন, আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যেই করেন ইত্যাদি।

৩. নিজের ব্যাপারে যে কথাগুলো আপনি বলেন, তা কি আশাবাদীর কথা না, একজন হতাশাবাদীর কথা। যদি হতাশাবাদীর মতো হয়, তাহলে বদলে ফেলুন বক্তব্য। ‘আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না’, না বলে বলুন, ‘আমি চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ’। বা ‘আমি পারব আমি করব’।

৪. নিয়মিত অটোসাজেশন দিন। ‘হাজার অটোসাজেশন’ বই থেকে নিজের জন্যে প্রয়োজনীয় অটোসাজেশনগুলো বেছে দিতে থাকুন।

৫. নিয়মিত মেডিটেশন করুন। মেডিটেশনের গভীর স্তরে আপনি নিজের প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস ব্যক্ত করবেন, তা-ই আসলে আপনাকে সত্যিকার অর্থে একজন আত্মবিশ্বাসী, প্রত্যয়ী ও ইতিবাচক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

ইতিবাচক হোন। ইতিবাচক মানুষকেই অন্যেরা শ্রদ্ধা করে, সমীহ করে, অনুসরণ করে। যিনি নিজের ওপর আস্থা ব্যক্ত করতে পারেন, হাজার মানুষও তখন তার ওপর আস্থা ব্যক্ত করে।