জিনিস না, জিনিয়াস!

published : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১

আচ্ছা, আমার পক্ষে কী সম্ভব রেদওয়ানের মতো হওয়া? রেদওয়ান হলো রেদওয়ান শুভ, সারা জীবন ফার্স্ট হয়েছে, অনার্স পাশ করতে না করতে মাসিক ৪০,০০০ টাকা বেতনের চাকরির প্রস্তাব পেয়েছে। এখন, আমাকে যদি দিনরাত শুনতে হয়- অমুকে ফার্স্ট হয়, অমুকে এটা করে, ওটা করে –আমি কি রাতারাতি পাল্টে গিয়ে রোল-১ হতে পারব? আর তাহলে তো আমিও বলতে পারি রেদওয়ান কেন আমার মত গিটার বাজায় না? খালি পরীক্ষায় ফার্স্ট হলেই মেধা? যদি তাই হয় তো আমি পারব না অমন মেধাবী হতে।

অবশ্য এইখানে আমার একটা ভুল হলো। ‘পারব না’ বলাটা ঠিক হয় নি, বলা উচিত ছিল ‘চাই না’। কারণ চাইলে সবাই পারে ‘জিনিস’ থেকে ‘জিনিয়াস’ হতে। কারণ মেধা যে জন্মগত – প্রচলিত এই বিশ্বাসকে রীতিমতো গবেষণাগারে ভেঙেচুরে দেখা গেছে ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। বরং এতদিন ধরে যে ভাবা হতো ছবি আঁকা বা গান গাওয়ার মতো শিল্প প্রতিভা অথবা প্রখর স্মৃতিশক্তি কেবল জন্মসূত্রেই পাওয়া যায় সেটাও ঠিক নয়। হ্যাঁ, জিনগত কারণে অনেকেই এটা ‘এমনিতেই’ পেয়ে যায়; কিন্তু চর্চা আর অনুশীলনের মাধ্যমেও একই ফল লাভ সম্ভব। তার মানে এই নয় যে যে কেউ চাইলেই রোনালদো হতে পারে- সেটা পৃথিবীতে একজনই। কিন্তু রোনালদো আজকের ‘রোনালদো’ হয়েছে কারণ অমনটা সে হতে চেয়েছিল বলেই, যদি না চাইতো তাহলে সে হতে পারতো ব্যবসায়ী বা কলেজ শিক্ষক। অর্থাৎ মূল ব্যাপারটা হলো যেদিকে ঝোঁক আছে পরিশ্রমের মাধ্যমে সেক্ষেত্রেই দক্ষ হওয়া সম্ভব; এজন্য ‘আমার মেধা নেই’ – এমন দোহাই দিলে চলবে না।

এসব চমৎকার তথ্য নিয়ে একটা বই লিখেছেন ডেভিড শেঙ্ক। বইয়ের নামটাও দারুণ ‘The Genius in All of Us’। এতে তিনি বলছেন যে, অসাধারণ হওয়ার সবরকম সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা অধিকাংশই খুব সাদামাটা একটা জীবন কাটিয়ে দিই। এক্ষেত্রে আরেকটা মজার ঘটনা হলো IQ Test নিয়ে। আলফ্রেড বিনেট, যিনি সর্বপ্রথম IQ বা বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন যে বুদ্ধিমত্তা কখনই ‘নির্দিষ্ট’ নয়। কিন্তু একে তখনই প্রমাণ করা যায় নি। অবশেষে প্রায় ১০০ বছর পর আমেরিকার রবার্ট স্টার্নবার্গ ২০০৫-এ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করলেন যে বিনেট-ই ঠিক; আসলেই বুদ্ধিমত্তা ‘পূর্বনির্ধারিত’ নয়। বরং তা পরিবর্তিত হতে পারে চর্চা বা অনুশীলনের মাধ্যমে।

তাহলে মেধার উপর কি জিন-এর কোনো প্রভাব নেই? না, তা নয়। কিন্তু কয়েক শতাব্দি ধরে যে ভাবা হচ্ছে জিনগুলো কেবল একই ধারায় কাজ করে চলে- সাম্প্রতিককালে সেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। দেখা গেছে এগুলোও পরিবর্তিত হয় সময়ের সাথে, নতুন করে ‘প্রোগ্রাম’ করা যায় এদের, এবং তখন সেভাবেই কাজ করে চলে এরা। এজন্য প্রয়োজন মনটাকে বোঝানো ‘আমি কী চাই’। যদি বোঝান যে আর দশজনের মত মামুলি সাধারণ একটা জীবনই আমার নিয়তি– দেখবেন আপনি তা-ই হবেন। আবার যদি মনটা বুঝে যে - আমিও পারি অসাধারণ একজন হতে, আমাকেও হতে হবে কালজয়ী অনন্য মানুষ – দেখবেন প্রত্যেক দিন একটু একটু করে আপনি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাবেন, পরিণত হবেন এক আলোকিত নতুন ‘আমি’-তে।