পান্তা-ইলিশ নয়, পান্তাপিয়া

 শুভ নববর্ষ।  সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে বাংলা ১৪২০ সাল, একটি নতুন বছর। নতুন বছরের এই ক্ষণে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা-স্বাগতম।

পান্তা-ইলিশ। নানা আলোচনা সমালোচনার পরও বাঙালির বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ এখন এ খাবারের মেনুটি। অনেক পরিবারেই আজ শখ করে খাওয়া হবে এই পান্তা-ইলিশ, দোকানে দোকানে বিক্রি হবে চড়া দামে।     

কিন্তু পান্তা-ইলিশ কেন? কেন অন্য কিছু নয়? কজনই বা পারেন এ দুমূর্ল্যের বাজারে পান্তা ইলিশের সংস্থান করতে? এ প্রশ্নগুলো যদি করা হয়, উত্তর দিতে গিয়ে বোধ হয় খানিকটা ভাবনায়ই পড়তে হবে আমাদেরকে।

গতকাল পত্রিকায় দেখছিলাম ঢাকার কোনো এক বাজারে ১ হালি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকায়। একেকটি ইলিশ ৮ হাজার টাকা! ঢাকায় এমন অনেক মানুষ আছে যার সারামাসের  আয়ও ৮ হাজার টাকা নয়। অথচ এ টাকা দিয়েই তাকে খেতে হয়, পরতে হয়, বাসাভাড়া দিতে হয়, বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয় তার পরিজনের কাছে। যে সমাজে এরকম অস্বাভাবিক বৈষম্য থাকে, সে সমাজ নিয়ে বেশ ভাবতে হয় বৈকি।

আমরাও ভেবেছি। তবে একটু ভিন্নপথে। কোয়ান্টাম বরাবরই যা করে থাকে। পান্তা ইলিশের বদলে এবার পান্তাপিয়া হচ্ছে আমাদের বোশেখী মেনু। পান্তাভাত আর আস্ত তেলাপিয়া ফ্রাই, সাথে কড়া করে ভাজা আলুকুচি, পেয়াজ আর টালা শুকনো মরিচ—ব্যস এই হচ্ছে পান্তাপিয়া।

যে বাজারে একটা ইলিশ বিক্রি হয় ৮ হাজার টাকায়, যা কেনার সামর্থ্য শুধু একজন সুদখোর, ঘুষখোর বা হারামখোর ছাড়া আর অন্য কারো থাকা সম্ভব নয়, সেই একই বাজারে এককেজি তেলাপিয়া এখনো পাওয়া যায় মাত্র দেড়শ টাকায়। ৮ হাজার টাকা দিয়ে ইলিশ কিনে একজন হারামখোর যদি বুক চিতিয়ে বাড়ি যেতে পারে, তাহলে একজন সৎ উপার্জনকারী কেন তার ঘাম ঝরানো দেড়শ টাকায় তেলাপিয়া কিনে হীনম্মন্যতায় ভুগবেন? তার সৎ উপার্জন দিয়ে তিনি তেলাপিয়া কিনতে পারেন, তেলাপিয়া দিয়েই হোক না তার পান্তা খাওয়ার আয়োজন। পান্তাভাত আর তেলাপিয়ার এক অভিনব আয়োজন পান্তাপিয়া।

প্রিয় পাঠক, আসুন, ১৪২০ এর এ বছরটি থেকে পান্তা-ইলিশ নয়, পান্তাপিয়া হোক আমাদের বোশেখী মেন্যু। শামিল হই আমরা দুর্নীতি, অসততা আর অনৈতিকতার বিরুদ্ধে আমাদের এই অভিনব প্রতিকারে।