মনছবি হলো মনের পর্দায় আঁকা আপনার ভবিষ্যৎ সাফল্যের ছবি। অর্থাৎ আপনি যা চান তা সুনির্দিষ্টভাবে চাওয়া, পাবো’ বলে বিশ্বাস করা, পাচ্ছি’ বলে অনুভবের পাশাপাশি বাস্তবে কাজ শুরু করে ফলাফলের জন্যে অপেক্ষা করার প্রক্রিয়ার নাম মনছবি। ইতিহাসে সফল মানুষরা কখনই বিরাজমান অবস্থাকে মেনে নিতে পারেন নি, অন্যের সাফল্য দেখে বিস্মিত হন নি; বরং বিশ্বাস করেছেন যে বিস্ময় সৃষ্টি করার শক্তি তার নিজের মধ্যেই রয়েছে। পরিবর্তনের ক্রমাগত স্বপ্ন তাদের প্রেরণা যুগিয়েছে জীবন বদলাতে, নতুন বাস্তবতা গড়তে। মনছবি শুধু আশা নয়, মনছবি হলো বিশ্বাস ও কর্মে লালিত ভবিষ্যতের বাস্তবতা।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের কারাগারে বন্দি ছিলেন ২৯ বছর। কারাগারের অতি নির্জন সেলে রাখা হয়েছিল, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছত না। কারাগার থেকে মুক্তির পর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কারাগারে কি করতেন আপনি। তিনি বললেন, মনছবি। সবসময় স্বপ্ন দেখেছি মুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার যেখানে কৃষ্ণাঙ্গরা শাসন করছে। আর আমি তার নেতৃত্ব দিচ্ছি। ম্যান্ডেলা আলোচনার টেবিলে শ্বেতাঙ্গদের পরাজিত করে কৃষ্ণাঙ্গ শাসন কায়েম করেন। আর তিনি হন প্রথম প্রেসিডেন্ট যা ৭০-এর দশকে ছিল এক অকল্পনীয় ব্যাপার।
সাফল্যের নীলনকশা মনছবি’ আঁকতে হবে প্রশান্ত মনের স্থির পর্দায়। শিথিল অবস্থায় বা শুধু নিজস্ব চিন্তার মাঝেই নিমগ্ন থাকলে মনছবি দেখুন। কল্পনায় লক্ষ্যস্থলে চলে যান। দর্শক নয়, মনছবির নায়ক/ নায়িকা হিসেবে খুঁটিনাটি বিষয়সহ নিজেকে দেখুন। আপনি যা হতে চান বা পেতে চান, তা হয়ে গেছেন বা পেয়ে গেছেন অনুভব করুন।
যেমন চাকরির মনছবি হতে পারে এরকম- কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে আবেদনপত্র দিয়েছেন। নির্দিষ্ট দিনে ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে সব প্রশ্নের সঠিক জবাব দেয়ায় আপনাকেই পছন্দ করেছেন কর্মকর্তারা। কিছুদিন পর এসেছে নিয়োগপত্র। আপনজনেরা অভিনন্দিত করছেন। নির্ধারিত দিনে কাজে যোগদান করে তৃপ্তির সাথে কাজ করছেন আপনি।
লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট করুন। আন্তরিকভাবে স্থির করুন কী হতে পারলে, কী করতে পারলে আপনি সবচেয়ে সুখী হতেন। কী কী করার যোগ্যতা আছে আপনার। যা হতে চান তাহলে ভালো হয়’ নয়; বরং লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এভাবে আমি .... হবো।’
যুক্তিসঙ্গত লক্ষ্য স্থির হলেই আস্থা আসবে। এ আস্থা হতে হবে শতভাগ।
লক্ষ্য অর্জিত হলে আপনার মনে আনন্দের যে অনুরণন হতো তা অনুভব করুন। আকাঙ্ক্ষা যত তীব্র হবে মনছবির বাস্তবায়ন তত স্বতঃস্ফূর্ত হবে।
মনছবির সাথে সার্বক্ষণিক একাত্ম থাকুন। শয়নে-স্বপনে আহারে-বিহারে দিনে-রাতে সবসময় সব কিছুর মাঝে মনছবিকে নিয়ে আসুন। পঞ্চইন্দ্রিয় যোগে মনছবি দেখুন, শুনুন, ঘ্রাণ নিন, স্পর্শের শিহরণ অনুভব করুন। অনুভব করুন- প্রতি মুহূর্তে আপনি এগিয়ে যাচ্ছেন তা পাওয়ার পথে।
লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাস্তবে নীরবে নিরলস কাজ করুন। প্রয়োজনীয় গুণ, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগান। এভাবেই আপনি সাফল্য গ্রহণের জন্যে প্রস্তুত হবেন।
শতাব্দী প্রাচীন বটগাছের দিকে তাকান, দেখবেন এর ডাল-পালা-কাণ্ড-মূল আপনাকে মোহিত করছে। কিন্তু যে বীজ থেকে এই মহিরুহ সৃষ্টি হয়েছে, সে কথা একবার ভাবুন। একটি বট গাছের ফল কাকের পেটে গিয়ে বিষ্ঠা আকারে বীজটি মাটিতে পতিত হয়েছিল। দিন মাস বছর পার হয়ে ছোট বীজটিই দিগন্ত আচ্ছন্নকারী শতাব্দীর মহিরুহে পরিণত হয়েছে।
আসলে জন্মগ্রহণ করেই কেউ সফল হয় না, সিঁড়ি বেয়েই একজন ধাপে ধাপে এগিয়ে যায় সাফল্যের শীর্ষে। নতুন বাস্তবতার আগে সবসময় প্রয়োজন বদলের স্বপ্ন| স্বপ্নের সাথে বিশ্বাস, মেধা, শ্রম যুক্ত হয়েই সাফল্য আসে। মনছবি শুরু হয় শূন্য থেকে শেষ হয় পূর্ণতায়।