সাফল্যসূত্র-৩ : সবর

published : ১১ নভেম্বর ২০১৫

প্রচলিত অর্থে সবর বা সবুর করা বলতে মুখ বুঁজে কারো দুর্ব্যবহার, গালি গালাজ অথবা খুব বেশি হলে শারীরিক প্রহারকে সয়ে যাওয়া বোঝায়। কোনো বিপদ বা কষ্টের মুখেও একটু সবর করো’ এ বাক্যটি এখন হয়ে গেছে দুর্বলদের একমাত্র সান্তনাবাক্য। কিন্তু সবর মানে সক্রিয় কর্মতৎপরতা এবং নীরব অপেক্ষা। সবর মানে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ঠান্ডা মাথায় নীরব সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। সত্যিকার অর্থে সবর করতে পারলে জীবনের আপাত অনেক অসম্ভবও সম্ভব হতে পারে। কঠিন প্রতিকূলতা রূপান্তরিত হতে পারে স্বতঃস্ফূর্ত আনুকূল্যে। সাফল্যের প্রাকৃতিক সূত্র অনুসারেই তখন কাজের ভিত্তিতে ফল আসতে শুরু করবে।


সবর করার জন্যে-

১. প্রো-একটিভ থাকুন

সমস্যা বা প্রতিকূলতা চলে এলে তাকে স্বাগত জানান। এতে পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ হবে না। বরং সম্ভাবনা বেরিয়ে আসবে। বাস্তব বিজয়ের আগে মানসিকভাবে নিজেকে বিজয়ী ভাবুন। সবসময় মনে রাখুন আপাত বা সাময়িক অনেক ব্যর্থতাও আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

২. প্রতিকার করুন:

দুর্বলরা প্রতিবাদ করে, হৈ চৈ করে দাবি জানায়। বুদ্ধিমানরা প্রতিকার করেন। এজন্যে অভিযোগ নয়, সমাধানের উদ্যোগ নিন। যা চান তা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ আগে তা নির্ধারণ করুন। এবার পরিকল্পনা করুন কীভাবে তা পাওয়া যেতে পারে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের প্রধান কারণ হলো তারা ভুল থেকে শেখে না। স্বভাব বা কৌশলের যে ত্রুটি তাকে বার বার ব্যর্থ করছে তা শোধরানোর কোনো উদ্যোগ সে নেয় না। তাই প্রতিনিয়ত শিখুন। আপনার ব্যর্থতার কারণগুলোর প্রতি সচেতন হোন। দেখুন কী কী কারণে সমস্যা হচ্ছে। আপনার আচরণ দৃষ্টিভঙ্গি সিদ্ধান্ত কর্মপন্থার কোনো ভুল বা ব্যক্তিগত বদঅভ্যাস নাকি অন্য কিছু। প্রয়োজনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকৌশল গ্রহণ করুন। সাফল্য তখন আপনার দিকে ছুটে আসবে।

৩. লেগে থাকুন:

হাল ছাড়বেন না। থামবেন না, তাহলে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়বেন। বিজয় না আসা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান, সংগ্রাম করুন। কোনো কাজের উদ্যোগ নিলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকুন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনার শেষ শক্তিটুকু সে কাজে নিয়োজিত করুন। একটি শিশুকে দেখুন। জন্মের পর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকার পর একসময় সে কাত হয়, উপুড় হয়। তারপর শুরু হয় হামাগুড়ি দিয়ে হাতে পায়ে হাঁটা। এরপর সে উঠে দাঁড়ায়, হাঁটি হাঁটি পা পা করে। এভাবে হাঁটতে গিয়ে সে বারবার পড়ে, বারবার উঠে দাঁড়ায়, আবার হাঁটতে শুরু করে। এবং একসময় সে কারো সাহায্য ছাড়াই হাঁটে এবং দৌড়ায়। অর্থাৎ বার বার শুরু করুন। জীবন বার বার শুরু করারই আরেক নাম।

৪. বিকল্প পথে চলুন

আসলে বাধা বা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে বলেই মানুষ সবসময় নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পেরেছে। আপনি যদি ডানদিকের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার জন্যে মনস্থির করেন, ব্যারিকেড পেলে বামদিকের রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করুন। এতে বিরোধ এড়াতে পারবেন। আহাম্মক প্রথম ভুলটিই করে বিরোধে জড়িয়ে। তার যেটুকু বুদ্ধি আছে তাকে বিতর্কে জয়ী হওয়ার জন্যে। আর বুদ্ধিমান তার বুদ্ধি কৌশল ও সাহস কাজে লাগান বিরোধ এড়ানোর জন্যে।

৫. শ্রমানন্দে কাজ করুন

আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্যে মেধা শ্রম সময় এমনকি নিজেকে উৎসর্গ করে দিলে তা কোনো একসময় বাস্তবায়িত হবেই। লক্ষ্যের পথে এ ত্যাগ ও মেহনতই অসামান্য অর্জন এনে দিতে পারে। যে কেউ তার বিশ্বাস ও পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো অবস্থান থেকেই সফল হতে পারেন। আত্মপরিচয় সৃষ্টি করতে পারেন। কারণ কষ্ট ও পরিশ্রমনির্ভর করেই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যত কাজ করবেন তত শারীরিক-মানসিকভাবে ভালো থাকবেন। আর আরাম যত করবেন, ব্যারাম তত বাড়বে। যত পরিশ্রম তত সুস্থতা, সাফল্য ও প্রশান্তি। এ পরিশ্রমই আপনাকে সফল করবে, সহিষ্ণুতা বাড়াবে।


আপনি সবর করছেন কি না তা বুঝবেন কীভাবে?

  • যখন বড় আনন্দ পাওয়ার জন্যে ছোট ছোট আনন্দের সুযোগকে হাসিমুখে ‌না' বলতে পারবেন।
  • কাজ ও ফলাফলের মধ্যবর্তী অপেক্ষার সময়টুকু যখন আরো বড় কাজের প্রস্তুতি নিতে কাজে লাগাবেন।
  • কষ্ট, পরিশ্রম ও মেহনতকে যখন রূপান্তরিত করবেন শ্রমানন্দে।
  • ভাগ্যে নেই বা কপালে লেখা নেই মনে করে যখন নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থাকবেন না।
  • কারো বা কোনো কিছুর সাহায্যের আশায় বসে না থেকে যখন এই মুহূর্তে যা আছে তাই নিয়ে শুরু করবেন।
  • যখন আপনার বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনের জন্যে ক্রমাগত নীরব সংগ্রাম বা নিরলস প্রচেষ্টা চালাবেন।
  • যা চান তা পাওয়ার জন্যে যখন ধাপে ধাপে নিজেকে প্রস্তুত করবেন।
  • রাতারাতি বা চটজলদি পাওয়ার আশা না করে যখন প্রতিটি অর্জনকে তার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে দেবেন।
  • ফলাফল নয়, আপনার করণীয়সমূহের প্রতি মনোযোগী হবেন।
  • যখন কারো উসকানি, কথা বা আচরণে আপনি প্রভাবিত হবেন না। আপনি সে কাজটিই করবেন যে কাজটি আপনি আপনার লক্ষ্যের জন্যে সঠিক মনে করবেন।
  • ভুল বা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেবেন এবং এর পুনরাবৃত্তি এড়াবেন।
  • কারো ভুলকেও আপনি যখন ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং শাস্তি নয়, শুধরে দেবেন।