মাইন্ডফুলনেস আর মনের কুশল, সাথে শরীরচর্চা

শিক্ষাবিদ, লেখক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের সাবেক ডীন। সুস্বাস্থ্য, মেডিটেশন, সুস্থ জীবনাচার ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বিষয়ে নিয়মিত লিখছেন কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে।

 

বর্তমান সময়ে অবস্থান করা, সেইসাথে মগ্নভাবে থাকা—এটাই মাইন্ডফুলনেস। নির্মোহভাবে কোনোকিছুকে পর্যবেক্ষণ করাকে বলে মগ্নতা বা মাইন্ডফুলনেস। সহজ ভাষায়—একইসাথে চারপাশের সবকিছুকে দেখা এবং নিজের অন্তরকে অনুভব করা। এই মগ্নতা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। আজকাল অনেকে মাইন্ডফুল মেডিটেশন করছেন। বহু আগে থেকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের প্রবর্তিত মাইন্ডফুল ইটিং এখন আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও প্রয়োগ করা হচ্ছে। জনপ্রিয় হচ্ছে মাইন্ডফুল রানিং বা মগ্ন হয়ে দৌড়। এতে একইসাথে দুটি লাভ—মানসিক উন্নতি হয় আবার শরীরচর্চাও হয়।

‘মগ্ন হয়ে দৌড়’ নিয়ে আজ বলি :

১. মনোযোগ দিয়ে হোক শ্বাসপ্রশ্বাস। দৌড়ানোর সময় মনোযোগ থাকবে শ্বাস ছাড়া ও প্রবেশের দিকে। মন লাগিয়ে প্রতিবার শ্বাস নেবেন আর ছাড়বেন।

২. দৌড়ানোর সময় কানে যে যন্ত্রটি লাগিয়ে গান শোনেন, একে বাদ দিয়ে দৌড়ান। একেবারে অসুবিধা হলে নিজে গুনগুন করুন, তাহলে অন্তরে মন বসবে।

৩. ভাবুন অন্যদের কথা। কাল যে ছিল আপনার সাথে, সে আজ কোথায়? ভাবুন আপনার সেই বন্ধুর কথা, যে আজ অসুস্থ হয়ে দৌড় ছেড়ে দিয়েছে। ভাবুন ঐ তো সে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে, আপনাকে দেখে উজ্জীবিত হচ্ছে। এমন সদর্থক ভাবনা মনে হিত আনে।

৪. নিন বিরতি। দৌড়াচ্ছেন, এবার একটু ক্ষণকালের বিরতি নিন। থামুন, শ্বাস নিন বুক ভরে, এরপর আবার সেই দৌড়।

মাইন্ডফুলনেস নিয়ে গবেষণার সংখ্যা কম নয়। এমন একটি স্টাডি বের হলো ট্রান্সলেশনাল সাকিয়াট্রি জার্নালে ২০১৬ সালে, যার মূল কথা হলো—মেডিটেশনের সাথে মাইন্ডফুল রানিং যোগ করলে বিষণ্ণতা কমে ৪০% পর্যন্ত। আর ২০২০ সালে একটি গবেষণা রিপোর্ট বের হলো নিউরাল প্লাস্টিসিটি জার্নালে—মাইন্ডফুল রানিং দেহ-মনকে উজ্জীবিত করে। তাই এনড্যুরেন্স স্পোর্টস এন্ড এক্সারসাইজ সায়েন্সের বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেবল সাধারণ মানুষ নয়, অ্যাথলেট এবং খেলোয়াড়দেরও মাইন্ডফুলনেসের চর্চা করা উচিত।

সর্বোপরি মাইন্ডফুল হলে নির্দিষ্ট কাজে মন থাকবে নিয়োজিত এবং চিন্তা থাকবে বর্তমানে। মন বিক্ষিপ্ত হবে না।