published : ১২ অক্টোবর ২০২৩
শিক্ষাবিদ, লেখক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের সাবেক ডীন। সুস্বাস্থ্য, মেডিটেশন, সুস্থ জীবনাচার ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বিষয়ে নিয়মিত লিখছেন কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে।
আধ্যাত্মিকতা এমন এক প্রসঙ্গ, যা মানুষকে এর সম্বন্ধে কৌতূহলী করেছে। এ এক জটিল রহস্যময় বিষয়, একে বোঝা সত্যিই দুঃসাধ্য!
আমাকে প্রায়শ আধ্যাত্মিকতা আকৃষ্ট করত ছোটবেলা থেকেই।
বাবার জমিদারিতে নাট মন্দির, পণ্ডিত সাধুদের আনাগোনা, মন্ত্র উচ্চারণ, তান্ত্রিক, এরপর নানা স্থানে জীবনে অনেক তীর্থস্থানে, গঙ্গার পার ধরে হৃষিকেশ পর্যন্ত, অনেক আধ্যাত্মিক ব্যক্তির সংস্রবে আসা, অনেক ধর্ম সংস্কৃতি, তাদের আধ্যাত্মিক জীবন পালন দেখেছি। সীতাকুণ্ডের সাধু থেকে লালনের কুষ্টিয়া হয়ে হাইকোর্টের মাজার, পন্ডিচেরি থেকে হরিদ্বার হৃষিকেশ—সব জায়গায় একেকজন একেকভাবে আধ্যাত্মিকতার চর্চা করেছে। গিয়েছি আজমির শরীফে, সেখানেও অন্যরকম আধ্যাত্মিকতা।
সুফিদের কত কথা! এসব আমাদের আকৃষ্ট করে। এমন এক বিশ্বাস জন্ম নেয় যে, নিজেদের আধ্যাত্মিক অন্দর গভীরে যে অভিজ্ঞতা তা ঋদ্ধ করে জীবন।
আমাদের সত্যিকার সত্ত্বার উপলব্ধি দরকার জীবনে। এমন জটিল আর বিমূর্ত বিষয়ের ব্যখ্যা করা সত্যিই দুষ্কর। এ হলো ব্যক্তির অন্তরতর ভেতরের অভিজ্ঞতা।
জীবনের আধ্যাত্মিক দিক যেমন : ধর্ম, ধ্যান আর ব্যক্তিগত বিশ্বাসের অন্তর্গত জীবনের নিগুঢ় অর্থ, এর তাৎপর্য আর উদ্দেশ্য আবিষ্কার এবং এর অন্তর্গত বৃহৎ এক ছবির অন্তর্দৃষ্টি লাভ সম্ভব হয় এই চর্চায়। নিজের ভেতর পানে চাওয়াটাই বড়, কারণ বৃহৎ কিছুর অংশ আমরা। ‘বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি’—কবিগুরু যেমন বলেছেন।
কুশল বা ওয়েলনেস বলতে কেবল কি মন দেহ আর সামাজিক কুশল? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো বৃহত্তর সংজ্ঞাকে মেনে নিয়েছেন—স্বাস্থ্য মানে কেবল নীরোগ আর অটুট শরীর তা-ই নয়; স্বাস্থ্য মানে শারীরিক, মানসিক আর সামাজিক কুশল আর পরে যোগ হয়েছে আধ্যাত্মিক কুশল। স্পিরিচুয়াল হেলথ-কে এভাবেও দেখেছেন অনেকে—living with passion and purpose, in accordance with your core values and with a moral compass.
আধ্যাত্মিকতা হাজার হাজার বছর ধরে আছে পৃথিবীতে। এ নিয়ে অনেক অধ্যয়ন হয়েছে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। আধ্যাত্মিকতা বা স্পিরিচুয়ালিটি কথাটি প্রথম উল্লেখ করেছেন ফরাসি দার্শনিক রেনে ডিস্কারটেস।
১৬৩৭ সালে। ধর্ম আর বিশ্বাস সম্বন্ধে তার নিজের বিশ্বাস তিনি বর্ণনা করেছেন।
জীবনে আধ্যাত্মিকতা কেমন করে দেখা দেয়? এর রয়েছে নানা দিক আর প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনন্য। আর কেউ একে ধর্মচর্চা আর নিজ ধর্মের লোকদের গোষ্ঠীর সাথে মিলে চর্চা করেন। আবার অনেকে ব্যক্তিগত বিকাশের জন্যে ধ্যানের মাধ্যমে করেন আধ্যাত্মিকতার চর্চা।
আছে স্বনির্ভর চর্চা যেমন : যোগব্যায়াম আর মনযোগিতা বা মাইন্ডফুলনেস চর্চা। অভিনিবেশ সহকারে কোনোকিছুতে একান্ত মনোযোগ। অনেকে ধ্যান আর মৌনব্রতকে আধ্যাত্মিকতা মনে করেন।
ধর্মচর্চা আধ্যাত্মিকতাই বটে, তবে এর বাইরে আছে আধ্যাত্মিকতার ব্যাপ্তি যেমন : ধ্যান, যোগব্যায়াম, প্রকৃতি বীক্ষণকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তবে আধ্যাত্মিকতার মূল অর্থ নিজের ভেতরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন।
নিজের জন্যে নিন সময়। নিজের প্রতিফলনের জন্যে দিন সময়। নিজের ভেতরের ব্যক্তিটিকে অনুসন্ধান করুন। হতে পারে ধ্যান বা ইয়োগা বা তাইচির মাধ্যমে।
অন্যের সাথে যুক্ত হতেও সাহায্য করে আধ্যাত্মিকতা। এজন্যে এর এত মাহাত্ম্য। নিজের দর্শন বিশ্বাস আর মূল্যবোধ যখন অন্যের সাথে ভাগাভাগি করেন, তখন সমমনা এক বান্ধবগোষ্ঠী সৃষ্টি হয়। আজ পৃথিবীতে তা বড় কম।
আমরা সবাই আধ্যাত্মিক জীব আর একই সূত্রে বাঁধা আমাদের জীবন। যদি খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের মানে, কী উদ্দেশ্য জীবনের, তা জানা গেলে সঠিক পথে থাকা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা, সুস্থ জীবনযাপনে এ বড় সহায়ক।
স্বাস্থ্যের সংজ্ঞার মধ্যেও তাই আধ্যাত্মিক কুশলের কথা এসেছে।
আধ্যাত্মিকতার সাথে কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ থাকলে দুঃসময়ে পাবেন প্রবোধ, শান্তি। স্বাস্থ্য আর কুশলের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। পাবেন সুখী জীবন। পারবেন ধনাত্মক ধারণা নিয়ে জীবনে চলতে। থাকবেন অনুপ্রাণিত। নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হলেও বিচলিত হবেন না। নিজেকে নিয়ে এবং চারপাশের সবাইকে নিয়ে সহজে থাকতে পারবেন সুখে। পাবেন অন্তরে প্রশান্তি। তাই ধ্যান করুন নিয়মিত। you can walk and meditate being mindful of how your feet feel on the ground or the details of your surroundings.