মাইন্ডফুল ইটিং না ইনট্যুইটিভ ইটিং?

published : ১০ জানুয়ারি ২০২৫

শিক্ষাবিদ, লেখক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের সাবেক ডীন। সুস্বাস্থ্য, মেডিটেশন, সুস্থ জীবনাচার ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বিষয়ে নিয়মিত লিখছেন কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে।

 

স্বাস্থ্যকর খাওয়ার কথা অনেক বলা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে খেলে স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো এবং ব্যক্তি বিশেষে এ নিয়ে আজকাল বেশ কথাবার্তা হচ্ছে এই শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। কথা হচ্ছে, মাইন্ডফুল ইটিং না ইনট্যুইটিভ ইটিং? এর মানে মনোযোগী আহার না সজ্ঞাত আহার? খাবার টেবিলে কীভাবে খাব?

ওজন নিয়ন্ত্রণের কথা এখন ভাবনার বাইরে থাক আপাতত। নিজের পছন্দের খাবার, ভালবাসার খাবার এবং নিজের ক্ষিদে—এসব নিয়ে ভাবব।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে, দু-রকম আহারেই শরীরের হিত হয়েছে, কমেছে বডি মাস ইন্ডেক্স মানে বিএমআই, ডায়েট হয়েছে ভালো, শরীর-মন ছিল প্রাণবন্ত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কী মানে এই দুই ধরনের আহার অভ্যাসের?

তাদের মধ্যে যেমন মিল আছে তেমনি আছে বেমিল। সজ্ঞাত আহার করার ভিত্তি হলো শরীরের ভেতর থেকে আসা ইচ্ছার সংকেত। ভেতর থেকে আসা ক্ষুধা আর তৃপ্তির সংকেত বলে দিচ্ছে—কী খেলে ও কখন কী পরিমাণ খেলে ক্ষুধার নিবৃত্তি হয়ে তৃপ্তি আসবে। এর ওপর বিশ্বাস করে যে আহার এটি সজ্ঞাত মানে ইনট্যুইটিভ বিষয়। অর্থাৎ মনের ডাকে আহার। মনোযোগী আহার মানে ধীরে ধীরে খাওয়া, মন লাগিয়ে খাওয়া, চেতনাকে জড়িত করে আহার করা।

কোনটা ভালো নিজের জন্য?

সজ্ঞাত আহারের কী স্বাস্থ্য হিত?

১৯৯৫ সালে বিখ্যাত ডায়েটিশিয়ান এভেলিন ট্রাইবোলে এবং এলসে রেস এই ডায়েটের উদ্ভাবক। এর আছে ১০টি সূত্র।

প্রথমত, প্রচলিত আহার সংস্কৃতির বদল। পেটের ক্ষুধা পাবে অগ্রাধিকার। শান্তিতে আহার। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা নয়। আহারের তৃপ্তিকে আবিষ্কার করা। দেহের সংকেত শোনা—‘পেট কি ভর্তি?’ এক্ষেত্রে খাদ্য পুলিশকে অগ্রাহ্য করা। নিজের আবেগকে আনন্দ ও যত্নের সাথে মোকাবেলা করা। নিজের শরীরকে সম্মান দিন। সক্রিয় ও সচল হোন। সাস্থ্যকে সম্মান করতে হবে। এই আহার সজ্ঞাত। মন বলে ‘ক্ষুধা লেগেছে’ তাই খাওয়া আর আহারের একসময় মনে হয় এবার তৃপ্তি হলো, তাই আহারের সমাপ্তি।

শরীরকে মর্যাদা দিয়ে সম্মান দিয়ে শরীরের ডাক শুনে আহার এবং একে উপভোগ করাই সজ্ঞাত আহার। বলা যেতে পারে, কেবল উদরপূর্তি নয়, বরং সন্তুষ্টির সাথে আহার করা।

এতে আসে পজিটিভ বডি ইমেজ, এ বড় কম কথা নয়। এখানেই শেষ নয়, সজ্ঞাত আহারের ফলে বিএমআই কমে, মন হয় প্রফুল্ল, কমে বিষণ্নতা। এতে আহারের বৈকল্য আর থাকে না। যেনতেন খাদ্যনীতি বা যথেচ্ছা খাদ্যনীতি থেকে আসে মুক্তি, কিটো থেকে মুক্তি।

কী হিত রয়েছে মনোযোগী আহারে?

খাবারে থাকবে অখণ্ড মনোযোগ। একান্ত মনে খাওয়া—এ যেন এক ধ্যান। আহার ধ্যান।

দেহের সব চেতনা হবে নিয়োজিত আর আহারের সময় ধীরে ধীরে খাবারের সম্পূর্ণ সংযুক্তি অনুধাবন করে আহার করা। মনকে অন্যদিকে বিচ্যুত করা যাবে না, হাতে থাকবে না মোবাইল ফোন, সামনে থাকবে না টিভি বা অন্য কোনো মন বিক্ষিপ্ত করার উপকরণ।

ডায়েবেটিস রোগীদের গ্লুকোজ মান কমে আসে, কমে বিএমআই আর কমে আসে এইচবিএওয়ান সি। রক্তে তিন মাসের গ্লুকোজের গড় মান যায় কমে। মানে ডায়েবেটিস আসে নিয়ন্ত্রণে।

এই চর্চায় অন্যান্য স্বাস্থ্য সূচক যেমন লিপিড প্রোফাইল, গ্লুকোজ প্রদাহ-সূচক আসে নেমে।

শুরু হোক চর্চা

সজ্ঞাত আহারে খাদ্যকে মান্য করে খেতে হবে আর শরীরের সংকেত শুনে খেতে হবে। ক্ষুধা আর তৃপ্তির সংকেতকে করতে হবে মান্য। ক্ষুধা হলে আহার আর পেট ভরার আগে আগে শেষ করা। পুরোটা যেন ভরা না হয়। আহারে তৃপ্তি হলেই সমাপ্তি টানতে হবে, পেট পুরো ভরবে না।

মনোযোগী আহারও চর্চার বিষয়। কী খাচ্ছি তা থেকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে কীভাবে খাচ্ছি সেদিকে। ধীরে ধীরে খাবার চিবিয়ে একে উপভোগ করে এর সংযুক্তি, বুনন, ফ্লেভার—সব থাকবে মনে। এভাবে আহার করা যেন কী আনন্দ! আহারে।

খাবারের সংযুক্তি, স্বাদ, গন্ধ, শব্দ—সব উপভোগ করা। শরীর আর মন দুটোই যেন উপভোগ করে আহার। একে চর্চা করে দেখুন। আহার করার এক নতুন আনন্দ আবিষ্কার অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।