কী করে বাড়াবেন মগজের শক্তি?

শিক্ষাবিদ, লেখক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের সাবেক ডীন। সুস্বাস্থ্য, মেডিটেশন, সুস্থ জীবনাচার ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বিষয়ে নিয়মিত লিখছেন কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে।

 

মনে থাকছে না কিছু—কারো নাম, কোথায় রেখেছেন চাবির রিং, মোবাইল, নোটবুক। মনে পড়ছে না কোথায় চশমা। ভেবে আকুল—কী হলো! ডিমেনশিয়ার হলো কি সূত্রপাত?

বয়স হলে ভুলোমন হতেই পারে। তবে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো মগজের শক্তিও যে বাড়াতে হয়, তা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। এরও যে চর্চা লাগে তা আমাদের খেয়ালে থাকে না। মগজের সুতো টান টান থাকবে, সব মনে থাকবে, তার জন্যে তো মগজে শান দিতে হয়! কারণ মগজের কোষেও পড়ে জরার ছাপ। বুড়ো হয় মগজ।

তাই ব্রেন জিম বা মেন্টাল অ্যারোবিক্সের কথা আজকাল বেশ বলা হচ্ছে। ব্রেন গেম হলো নতুন কিছু পড়া বা শেখা, শখের চর্চা করা, লেখালেখি, সংস্কৃতি চর্চা, সংগীত চর্চা, ইয়োগা করা। মগজ খাটাতে হয়, চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়, ঝুঁকি নিতে হয়—এতে মগজ হয় খোলতাই। মগজ যদি প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ে, সমাধানের পথ খোঁজে তাহলে মগজে শান দেওয়া হয়। এসব চর্চায় অনেক কমে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমারের ঝুঁকি।

কী সে-সব উপায়?

১. বিচিত্র স্বাদের বই পড়ুন—বিজ্ঞান, সাহিত্য, রহস্য গল্প, উপন্যাস বা ইতিহাস। এরকম নানা স্বাদের বই পড়লে মগজে শান দেয়া হয়। একদিন হয়তো পড়লেন কোয়ান্টামের সাময়িকীর কোনো প্রবন্ধ, আবার একদিন পড়ুন কোনো মনীষীর জীবনকাহিনী।

২. মাঝে মাঝে ছোটবেলার মতো জোরে জোরে পড়ুন। এতে বিষয়টি মগজে ভালো ঢোকে। সব গল্প কেচ্ছা বা ছড়া বাচ্চাদের শোনান, জোরে জোরে বলুন। এতে দারুণ লাভ হবে।

৩. শিখুন নতুন ভাষা—শুনে পড়ে চর্চা করুন। মগজ হবে উদ্দীপ্ত।

৪. লেখালেখি করুন। এজন্য বড় লেখক হতে হবে তা কেন! যা মনে আসে লিখুন—গল্প কবিতা বা আত্মস্মৃতি, মজার কোনো ঘটনা। বন্ধুবান্ধব মিলে জমিয়ে করুন স্বরচিত গল্প-কবিতার আসর।

৫. আপনারও আছে নিশ্চয়ই কোনো শখ। হয়তো আগে সময় পান নি। এবার শখের ঘোড়ার সওয়ারি হোন। কোথাও বেড়াতে যান বন্ধুরা মিলে। সমাজসেবার কাজ করুন। স্বেচ্ছাসেবী হোন সন্ধানী, কোয়ান্টাম ইত্যাদি সংগঠনের। ক্যান্সার সচেতনতা বাড়াতে অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে। শিশুদের স্কুল করতে পারেন।

৬. গলা ছেড়ে গান গাইতে পারেন। হতে পারে হেঁড়ে গলায়, তাতে কী? হোক না! স্নানঘরে পুরনো দিনের গান মনে করুন আর গাইতে থাকুন।

এবার মগজের খেলা :

  • বাজারের ফর্দ লিখবেন না। চেষ্টা করুন মনে রাখতে। ১০টির মধ্যে ৫টি বাদ যাবে, তাতে কী! আস্তে আস্তে স্মরণশক্তি বাড়বে।দাদখানি চাল মসুরির ডাল—মনে আছে না সেই ভুলোমন ছেলের কথা?
  • এবার অন্য খেলা : একেকজন তিনটি করে নাম বলুন, আরেকজনেরটিও যোগ করুন। এভাবে চলবে। যোগ করতে করতে কত মনে রাখতে পারেন, দেখুন। শুরু করতে পারেন মৌসুমি ফলের নাম দিয়ে।
  • অন্তক্সরি খেলা খেলতে পারেন। গানের লাইনের শেষ বর্ণ দিয়ে পরের জন গাইবেন একটি নতুন গান। মজা হবে, মগজের চর্চাও হবে।
  • শব্দজব্দবা ওয়ার্ড মিনিং খেলুন প্রায় দিন। অনলাইনে আছে বিভিন্ন রকম ব্রেন ট্রেনিং অ্যাপ। সেগুলোর সাহায্য নিয়ে ব্রেনকে খেলান।

কেবল তা নয়, জীবনযাপনের নিয়ম হতে হবে সঠিক :

  • ভালো ঘুম চাই ৭-৯ ঘণ্টা।
  • নিয়মমতো ঘুমাতে যান এবং সকালে নিয়মমতো ওঠুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করলে মগজেরব্যায়াম হয়।
  • বন্ধুরা মিলে হাঁটুন, সাঁতারকাটুন, যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম করুন।
  • দৌড়ান, সাইকেল চালান।
  • বক্তৃতা বা প্রেজেন্টেশনে হেঁটে হেঁটে অঙ্গভঙ্গি করে বলুন।
  • চাই স্বাস্থ্যকর খাবার। শর্করা চর্বি আমিষ আঁশ ভিটামিন খনিজ সব মিলে আহার (টাটকা শাকসবজি, ফল, কচি আমিষ, মাছ, ডিম,দুধ, দই, আতা, লাল চাল, জলপাই তেল)
  • খুঁজে নিতে হবে অবসর।
  • কেবল কাজে মগজে পড়ে চাপ। তাই চাই বিরতি, চাই অবসর।
  • আর নতুন কিছু করতে হবে, নতুন কিছু।
  • ঘুম ভাঙলেঅবগাহন করে নিতে হবে রোদের আলোয়।
  • সুরের মাঝে আছে শক্তি। তাইশুনতে হবে গান, গাইতে হবে গান।