রাগ তা ক্ষণিকের হলেও আনে বিপদ

শিক্ষাবিদ, লেখক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের সাবেক ডীন। সুস্বাস্থ্য, মেডিটেশন, সুস্থ জীবনাচার ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বিষয়ে নিয়মিত লিখছেন কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে।

 

রাগ। এ হয়তো স্বাভাবিক আবেগ যা হতেই পারে। কিন্তু একে সংযত করা যে খুব কাজের তা আমরা জানি না। কয়েক মিনিটের রাগ যে বড় স্বাস্থ্য বিপর্যয় আনে তা-ও আমরা অনেকে জানি না। এই একটু রেগে যাওয়া রক্তনালীর ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো ঘটনা।

অনেকের ক্রোধের বিস্ফোরণের সময় হয়েছে হার্ট অ্যাটাক। আবেগের এমন উত্তাল সময়ে ঘটে এমন বিপর্যয়। এমনকি তরুণদের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। আর ইতোমধ্যে ভগ্ন স্বাস্থ্য যাদের, তাদের মধ্যে রয়েছে তীব্র আবেগ বিশেষ করে রাগ। এই রাগ বিশেষ প্রভাব ফেলে রক্তনালীর কাজকর্মের ওপর। আর তা থেকে আসে হার্ট অ্যাটাক আর স্ট্রোকের মতো পরিণতি।

তাই প্রয়োজন অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট বা রাগকে সামলানো। এটি সহজ ব্যাপার নয়। জীবনছন্দে গরমিল, সংসারে, ঘরে-বাহিরে, চাকরিতে ক্ষোভ হতাশা—এ সবকিছু উৎপন্ন করতে পারে রাগ।

আমরা জানি, রাগ সহজাত প্রবৃত্তি তবে পরিস্থিতি আর অবস্থা বিশেষে এর প্রকাশ ঘটে। কেবল কি অসুখ? রাগলে ওজন বাড়ে কিন্তু। অনেকের খুব রাগ হলে খিদে বাড়ে আর খাওয়া হয় অনেক। আর তাই ওজন বাড়ে।

খুব রাগলে বাড়ে রক্তচাপ। করে বুক ধড়ফড়। পেশিতে পড়ে টান। অনেকে মূর্ছা যান।

কী করে সামলাবেন?

  • আগে বোঝার চেষ্টা করতে হবে কী কারণে রেগে যাচ্ছেন আপনি। এর কারণ বের করতে পারলে সামলানো হবে সহজ।
  • হঠাৎ খুব রেগে গেলে জোরে বড় বড় শ্বাস নিন। ধীরলয়ে গভীর শ্বাস। মন স্থির না হওয়া পর্যন্ত এমন শ্বাস নিতে থাকুন।
  • নিজের সঙ্গে কথা বলুন। নিজেকে বোঝান রাগ করলে নিজেরই ক্ষতি।
  • নিয়মিত যোগাভ্যাস রাগ বেশ দমিয়ে রাখতে পারে।
  • হঠাৎ রেগে গেলে কারো সাথে চেঁচামেচি না করে বাইরে বেরিয়ে দৌড়ান। কিংবা হেঁটে আসুন জোরকদমে। রাগ পড়ে যাবে।

কথা হলো, রাগ চড়ে গেলে রিল্যাক্স করার কৌশল কাজ দেয়। আগে কিছুটা উল্লেখ করেছি। আরো কিছু বলছি—

  • ডিপ ব্রিদিং ব্যায়ামে কাজ হয়, রাগ সামাল দেয়া সম্ভব হয় অনেক সময়।
  • অবলোকন করুন শিথিল শান্ত কোনো দৃশ্য।
  • বার বার একই শব্দ উচ্চারণ করুন।
  • যে-কোনো পরিস্থিতিকে সহজে নিন, একে ভয়ের কী আছে?
  • শুনতে পারেন কোনো সংগীত যা মন শিথিল করে।
  • বিশেষ যোগমুদ্রা সহায়ক হতে পারে রাগ প্রশমনের জন্য।
  • রেগে কিছু বলার আগে ভাবুন। নিজেকে সংবরণ করুন।
  • শরীরচর্চা, হাঁটা, দৌড়ানো ও সাঁতার কাটা করতে পারে রাগ প্রশমন।
  • দিনে কিছু সময় বিরতি নিন।

রাগ ক্ষোভ বিদ্বেষ মনে পুষে রাখা ঠিক নয়। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।