published : ১ জুলাই ২০২২
দেশের বিখ্যাত জাদুকর জুয়েল আইচ একবার মঞ্চে জাদু দেখাচ্ছিলেন। গ্যালারিতে বসা শত শত দর্শকের নাম একবার শুনলেন। এরপর বংশ পদবীসহ নির্ভুলভাবে বলে গেলেন।
জুয়েল আইচের এই অসাধারণ প্রতিভাকে দর্শক জাদু ভেবে আশ্বর্যান্বিত হলেও সেটা কিন্তু জাদু ছিল না! আসলে তিনি ছিলেন অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী।
শাণিত স্মৃতিশক্তি এবং অখণ্ড মনোযোগের অধিকারী হতে চান সবাই-ই। তবে জন্মগতভাবে এই প্রতিভার অধিকারী না হয়েও একজন মানুষ যোগাসনের মাধ্যমে স্মৃতি ও মনোযোগ অনেকখানি বাড়িয়ে নিতে পারেন।
মস্তিষ্কের যে অংশটি দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিধারণে ভূমিকা রাখে তা হলো হিপোক্যাম্পাস। যোগচর্চার ফলে এই অংশটি উদ্দীপ্ত ও স্ফীত হয়ে উঠে। অনুশীলন যত নিয়মিত হবে হিপোক্যাম্পাসের গঠন ততো শক্তিশালী হবে। এতে বেড়ে যাবে দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি ধরে রাখা ও যে-কোনো সময় তা মনে করার ক্ষমতা।
অন্যদিকে, মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটারের সাথে সম্পর্কিত মনোসংযোগের ক্ষমতা। যোগাসন চর্চার ফলে এই গ্রে ম্যাটারের পুরুত্ব ও ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়; যা বাড়ায় মস্তিষ্কের সার্বিক সক্রিয়তা।
বুড়ো হলে স্মৃতিশক্তি কমে যাবে, আগের মতো দিন-ক্ষণ-তারিখ মনে থাকবে না- এই ভ্রান্ত ধারণাগুলো আছে অনেকেরই। বাস্তবতা হলো শারীরিক সক্রিয়তা জারি থাকলে স্মৃতি অটুট রাখা সম্ভব যে-কোনো বয়সেই।
সেডেন্টারি লাইফস্টাইল বা শারীরিক শ্রমবর্জিত জীবনযাপন করছেন এমন একদল বয়স্ক মানুষের ওপর একটি গবেষণা চালায় ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের একদল গবেষক। তাদের প্রতিদিন ২০ মিনিট করে যোগচর্চা করতে বলা হলো। মাত্র আট সপ্তাহ পর দেখা গেল তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকলাপে দারুণ উন্নতি হয়েছে। মনোযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে মনে রাখার ক্ষমতাও!
এই স্নায়ুবিক রোগগুলো সাধারণত ষাট বা সত্তরোর্ধ্ব প্রবীণদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও বর্তমানে স্ট্রেস, অবৈজ্ঞানিক জীবনাচার ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার বয়সসীমা নেমে এসেছে ৪০-এর কোঠায়!
আমাদের মস্তিষ্কে BDNF নামে একধরনের প্রোটিন উৎপন্ন হয়, যা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে ও এর ক্ষয় রোধ করে।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মাত্র তিনমাস নিয়মিত যোগাসন অনুশীলনের মাধ্যমে BDNF-এর মাত্রা বৃদ্ধি করা সম্ভব। যা কমায় আলঝেইমার্স ও পার্কিনসন্স ডিজিজের ঝুঁকি।
২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র এক দফা যোগাসন চর্চা করে বাড়ানো সম্ভব মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা, পড়ার গতি ও নির্ভুলভাবে পড়া মনে রাখার ক্ষমতা।
যোগচর্চাকালে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কের গতিশীলতা বাড়ে ও মনোসংযোগের কেন্দ্রগুলো সচল হয়ে ওঠে। তাই শিক্ষার্থীরা পড়ার গতি বাড়াতে এবং পড়া মনে রাখতে সফলভাবে কাজে লাগাতে পারে যোগচর্চাকে।
শিশুদের অতিচঞ্চলতা ও অমনোযোগিতা সংক্রান্ত জটিল একটি রোগ হচ্ছে Attention Deficit & Hyperactivity Disease (ADHD)। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় সপ্তাহে দুদিন করে মাত্র আট সপ্তাহ যোগচর্চায় ADHD-এর লক্ষণ রয়েছে এমন শিশুদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে দেখা গেছে।
১. শবাসন- শব অর্থ মৃতদেহ। এই আসনে আপনার দেহের অবস্থা হবে মৃতদেহের মতো শিথিল, নিশ্চল।
২. পদ্মাসন- এই আসনে দুই পায়ের পাতা একটি অন্যটির ওপর এমনভাবে অবস্থান করে, যা দেখতে অনেকটা পদ্মফুলের মতো।
৩. বৃক্ষাসন- এক পা ভাঁজ হয়ে অন্য পায়ের উরুর সাথে লেগে থাকবে, পুরো দেহের ভারসাম্য থাকবে অন্য পায়ের ওপর। দেখতে অনেকটা বৃক্ষ বা গাছের মতো হবে শরীরের অবস্থা।
১. শীর্ষাসন- শীর্ষ তথা মাথার ওপর থাকবে পুরো দেহের ভর। পা থাকবে ওপরের দিকে টানটান। শুরুর দিকে একটু কঠিন লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে পা পুরোপুরি শূন্যে না রেখে দেয়ালের বিপরীতে ঠেস দিয়ে রাখা যায়।
২. সর্বাঙ্গাসন- মাথায় ভর দিয়ে দাঁড়াতে বেশি কষ্ট হলে শীর্ষাসনের পরিবর্তে এই আসনটি করতে পারেন। অবশ্য এমনিতেও এই আসনটি করা যায়। পুরো দেহের ব্যায়াম হয়ে যায় বিধায় এই নামকরণ।
৩. অর্ধমৎস্যেন্দ্রাসন- একমাত্র এ আসনেই মেরুদণ্ডে মোচড় পড়ে। স্মৃতিশক্তির পাশাপাশি বাড়ায় মনোযোগও।
যে কোনো যোগাসন চর্চা শুরুর আগে অভিজ্ঞ ডাক্তার বা ইয়োগা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। যাদের হার্টের সমস্যা আছে, সার্জারি হয়েছে, উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস রয়েছে তারা এবং গর্ভাবস্থায় যোগ অনুশীলনের জন্যে অবশ্যই প্রশিক্ষকের দিকনির্দেশনা মেনে চলুন।