সফল হওয়ার সহজ পথ

published : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১

সফল হতে হলে সাফল্যের সাথে নিজেকে চিহ্নিত করতে হবে। সফল হওয়ার সহজ পথ এটাই। প্রাকৃতিক নিয়ম হচ্ছে, মনোশক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে মনই কাঙ্ক্ষিত বস্তুর দিকে আমাদের নিয়ে যাবে, এই প্রাকৃতিক নিয়মকে বুঝতে পারলে, এই নিয়মকে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করতে পারলে অগ্রগতির আকস্মিকতা ও দ্রুততা হবে বিস্ময়কর। এক অদৃশ্য শক্তি নিশ্চিতভাবেই আমাদের সাফল্যের পথে ঠেলে নিয়ে যেতে থাকে। সাফল্যের জন্যে সৃষ্টি হয় প্রয়োজনীয় অখণ্ড মনোযোগ। সাফল্য হয়ে ওঠে সুনিশ্চিত।

এই স্বতঃষ্ফূর্ত সাফল্যকে আকর্ষণ করার জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মনছবি। বিশ্বাসযুক্ত সৃজনশীল কল্পনার নামই হচ্ছে মনছবি। আসলে ইচ্ছাশক্তি নয়, মনছবিই সাফল্য সৃষ্টি করে। ইচ্ছাশক্তি হচ্ছে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হাতিয়ার। ইচ্ছাশক্তি হচ্ছে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে চিন্তা ও কাজকে নিয়ন্ত্রিত করার সচেতন ক্ষমতা। কিন্তু মনছবি ছাড়া ইচ্ছাশক্তি বেশিদূর এগুতে পারে না। আসলে অন্তর্চেতনাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য দিয়ে ইচ্ছাশক্তিকে জোরদার করে। আর এই অন্তর্চেতনা প্রচণ্ড শক্তি অর্জন করে মনছবি দ্বারা।

তাই সফল হতে হলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন হচ্ছে মনছবি। অর্থাৎ যে লক্ষ্য আপনি অর্জন করতে চান, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ধারণা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। লক্ষ্যের সাথে নিজেকে পুরোপুরি একাত্ম করতে হবে। অন্তরে লক্ষ্যকে সবসময় প্রজ্বলিত রাখতে হবে। আমাদের সমগ্র কল্পনা, চিন্তা ও অনুভূতিকে এই লক্ষ্যের সাথে একাত্ম করতে হবে। অর্থাৎ মানসিকভাবে নিজেকে সাফল্যের সাথে শনাক্ত করতে হবে।

সফল হওয়ার জন্যে সাফল্যের সাথে নিজেকে শনাক্ত করার জন্যে মনছবি করার পরই প্রয়োজন সাফল্যের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করা। অর্থাৎ সাফল্য গ্রহণ করার উপযুক্ততা অর্জনে নিজেকে পুরোপুরি সাফল্যের হাতিয়ারে রূপান্তরিত করতে প্রস্তুত হতে হবে। যা পেতে চান নিজেকে তা পাওয়ার যোগ্য করার জন্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাজ ও মনোযোগ প্রদানে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে ব্যবহার করতে হবে।

মনছবি যত দূরবর্তী বা যত কঠিন হোক না কেন আপনি যদি আপনার মনকে লক্ষ্যের জন্যে প্রস্তুত করতে পারেন এবং সফল প্রয়াসকে সেই লক্ষ্যে নিবেদিত করতে পারেন, আপনি সফল হবেনই। সাফল্যের প্রাকৃতিক নিয়মেই আপনি ক্রমান্বয়ে বিকশিত হবেন।

সাফল্যের ফুল সবসময় প্রাকৃতিক নিয়মেই ক্রমান্বয়ে প্রস্ফুটিত হয়। একটি ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় আরেকটি ধাপের দিকে। তাই আপনাকে প্রো-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শুরু করতে হবে। যেখানে আছেন সেখান থেকেই শুরু করতে হবে। ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবেন মনছবির চূড়ান্ত লক্ষ্যপানে। আপনি প্রথম কাজটি প্রথম করলেই আপনার অচেতন মন পরবর্তী ধাপে করণীয় সম্পর্কে সচেতন মনে তথ্য ও উদ্দীপনা প্রেরণ করবে। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্যের মনছবিকে সবসময় মনের সামনে রাখতে হবে এবং সে পর্যায়ে নিজেকে উত্তীর্ণ করার জন্যে প্রয়োজনীয় গুণ, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা অর্জনের প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই যে, প্রতিটি সফল মানুষ নিজের জ্ঞাতসারে হোক বা অজ্ঞাতসারে এই প্রাকৃতিক নিয়মকেই কাজে লাগিয়েছেন।

মনছবির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি অন্তরায় আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করি। বড় চিন্তা করতে গিয়ে, সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যস্থির করতে গিয়ে ছোট ছোট কাজ, ছোট ছোট পথের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি না। আমরা বুঝতে পারি না ছোট ছোট ইটই হচ্ছে বিশাল ভবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী, পায়ে চলা পথই গিয়ে মেশে রাজপথে, ছোট ঝর্ণাই নদী হয়ে পৌঁছে যায় বিশাল মহাসমুদ্রে। প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজ প্রতিদিন সমাপ্ত করলে মাস-বছর-যুগ শেষে তাই পরিণত হয় বিশাল সাফল্যে।

আমরা যদি শতাব্দী প্রাচীন বট গাছের দিকে তাকাই, তাহলে এর ডাল-পালা-কাণ্ড-মূল আমাদের মোহিত করে। কিন্তু যে বীজ থেকে এই মহীরুহ সৃষ্টি হয়েছে, সে কথা একবার ভাবুন। একটি বট গাছের ফল কাকের পেটে গিয়ে বিষ্ঠা আকারে এই মাটিতে পতিত হয়েছিল বীজটি। দিন মাস বছর পার হয়ে বিষ্ঠার মাঝে নির্গত ছোট বীজটিই দিগন্ত আচ্ছন্নকারী শতাব্দীর মহীরুহে পরিণত হয়েছে। আসলে জন্মগ্রহণ করেই কেউ সফল হয় না, সিঁড়ি বেয়েই একজন ধাপে ধাপে সাফল্যের শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছায়। আসলে বাস্তবতার আগে প্রয়োজন ধারণার। ধারণার সাথে বিশ্বাস, একাগ্রতা ও দৃঢ়তা যুক্ত হয়েই সাফল্য আসে।

এই মহাপ্রকৃতিতে মানুষই সফল হয়, স্মরণীয় হয়, বরণীয় হয়। কারণ মানুষের রয়েছে চেতনারূপী এক মহাশক্তিশালী চালিকা শক্তি। আর ব্যক্তি চেতনা বিশ্বজনীন মহাচেতনারই একটি ক্ষুদ্র অংশ। ব্যক্তি যেমন চেতনা দ্বারা পরিচালিত, মহাবিশ্বের সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে মহাচেতনার দ্বারা। সৎ, মঙ্গল ও কল্যাণ চিন্তার সাথে সাথে আমাদের চেতনায় নতুন শক্তি সঞ্চারিত হয় মহাচেতনা থেকে। মহাচেতনা তখন হয়ে ওঠে আমাদের নীরব সহযোগী। এই প্রাকৃতিক আইন ও নীরব সহযোগী সম্পর্কে সচেতনতা আপনার সাফল্যের সবচেয়ে বড় ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।