আগে জানুন আপনি কেন বাঁচবেন

জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে হলে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য জানা প্রয়োজন। আপনি যদি আপনার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা করতে পারেন তাহলে পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুর অবাঞ্ছিত প্রভাব থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। কিন্তু যদি সরাসরি কাউকে প্রশ্ন করা হয় যে, আপনার জীবনের লক্ষ্য কী, তাহলে দেখা যাবে যে, শতকরা ৯৫ জনই আমতা-আমতা করছেন। কিছুই বলতে পারছেন না। অথচ জীবনের কাছ থেকে আপনি কী চান তা যদি আপনার কাছে সুস্পষ্ট না থাকে তাহলে জীবন আপনাকে কোথাও নিয়ে পৌঁছাবে না। আপনি হাল ছাড়া নৌকার মত জীবনসাগরে শুধু ঘুরপাক খাবেন।

আপনি যদি ইতিমধ্যেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করে না থাকেন তা হলে এখনই উদ্যোগ নিন। নিরিবিলি জায়গায় একটি টেবিলের সামনে কাগজ-কলম নিয়ে শান্ত হয়ে বসুন। হালকাভাবে চোখ বন্ধ করুন। ধীরে ধীরে লম্বা দম নিন। ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। ৫/৭ বার এভাবে দম নিন ও দম ছাড়ুন। এরপর এক মিনিটের মত দম খেয়াল করুন। অর্থাৎ, চোখ বন্ধ রেখেই নাক দিয়ে কিভাবে বাতাস ফুসফুসে যাচ্ছে ও বেরিয়ে আসছে সেদিকে মনোযোগ দিন। এতে দেখবেন আপনার মনে এক প্রশান্ত ভাব চলে আসছে। আপনার মানসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর নিজেকে প্রশ্ন করুন :

১. কী করতে আমার সবচেয়ে ভাল লাগে?
২. আমি কী করতে চাই?
৩. কখন আমার নিজের জীবনকে সবচেয়ে অর্থপূর্ণ মনে হয়েছিল?
৪. আমার জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্য কী?
৫. কী আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়?

প্রতিটি প্রশ্নকে মনের গভীরে ছেড়ে দিন। একই ধরনের আরও বহু প্রশ্ন এসে ভিড় করতে পারে। যত প্রশ্ন আসে আসতে দিন। মনের গভীর থেকে উত্তর আসার সুযোগ দিন। যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। অনুভূতিগুলোকে প্রাধান্য পেতে দিন। উত্তর যা-ই আসতে থাকুক, চোখ মেলে লিখে ফেলুন। অনেক চাওয়া, অনেক কথা হুড়মুড় করেও চলে আসতে পারে। আসুক। কথাগুলোকে লিখে ফেলুন। প্রথম অবস্থায় যে কথাগুলো আসবে এর বেশির ভাগই সম্ভবত সচেতন মনের আকাঙক্ষা। লেখা শেষ হলে আবার চোখ বন্ধ করে উত্তর অন্বেষণ করুন। আস্তে আস্তে মনের আরও গভীরে প্রবেশ করুন। জবাব পেয়ে যাবেন। এক বসায় বা এক দিনে জবাব নাও আসতে পারে। প্রয়োজনে একাধিকবার বসুন। জবাব আপনি পাবেনই।

প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়ার পর আবার নিজেকে প্রশ্ন করুন :

১. আমার এই চাওয়াগুলোকে বাস্তবায়িত করার পথে অন্তরায় কী?
২. কেন আমার চাওয়া বাস্তবায়িত হচ্ছে না?
৩. চাওয়াগুলোকে বাস্তবায়িত করার পথে পারিপার্শ্বিক বাধাগুলো কী?
৪. চাওয়াগুলোকে বাস্তবায়িত করার পথে আমার নিজের দিক থেকে কী কী বাধা কাজ করছে?

প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়ার জন্যে নিজেকে সময় দিন। আত্মনিমগ্ন থাকুন। মনের গভীর থেকে জবাবগুলো আসতে দিন। জবাব এলে চোখ মেলে তা সামনে রাখা কাগজে লিখেফেলুন।

আবার চোখ বন্ধ করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন :

১. চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তরিত করার জন্যে আমার নিজের মধ্যে কী কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন?
২. নিজের জীবনের উদ্দেশ্যকে, নিজেকে প্রকাশ করার জন্যে আমি কী কী পদক্ষেপ নিতে পারি?

প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়ার জন্যে নিজেকে সময় দিন। আত্মনিমগ্ন থাকুন। মনের গভীর থেকে জবাবগুলো আসতে দিন। জবাব পাওয়ার পর জবাবগুলো সামনে রাখা কাগজে লিখে ফেলুন।

আবার চোখ বন্ধ করুন। কয়েকবার ধীরে ধীরে দম নিন। ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। নিজের মাঝেই ডুবে যান।

নিজেকে প্রশ্ন করুন :

১. এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যে আমার আশু করণীয় কী?

জবাব আসতে সময় দিন। জবাব আসার সাথে সাথে চোখ খুলে তা এক এক করে লিখে ফেলুন। আর করণীয় কাজগুলো এক এক করে শুরু করুন। একটি একটি করে পদক্ষেপ নিন। যত ছোট পদক্ষেপই হোক না কেন, শুরু করুন। কারণ হাজার মাইলের অভিযাত্রাও শুরু হয় একটি ছোট পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘসূত্রিতা ও আলস্যকে প্রশ্রয় দেবেন না। সময় নষ্ট করবেন না। সময়মত পদক্ষেপ নিলেই আপনি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।