স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাম্প্রতিক গবেষণালব্ধ অভিমত-ওষুধ কোম্পানির মিথ্যা তথ্যে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের

ওষুধের কাটতি বাড়াতে বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের পণ্য সম্পর্কে ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে বিভ্রান্ত করছে চিকিৎসকদের; আর তা সেবন করে প্রতিবছর বিশ্বে কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাজ্যের একদল চিকিৎসক।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. অসীম মালহোত্রা এবং ব্রিটেনের রানির সাবেক চিকিৎসক স্যার রিচার্ড থমসনসহ জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের এই দলটি ওষুধের প্রতিক্রিয়া ও কার্যকারিতা স্বাধীনভাবে তদন্ত করে দেখতে পার্লামেন্টের পাবলিক একাউন্টস কমিটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অসীম মালহোত্রা বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের ওষুধ নিয়ে চিকিৎসকদের যেসব তথ্য দেন তাতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের কার্যকারিতা বাড়িয়ে বলা হয়েছে, আবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লুকিয়েছে কোম্পানিগুলো।

নতুন ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষার পর ভুল তথ্য নথিভুক্ত করা এবং তা মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করার প্রমাণও পাবলিক একাউন্টস কমিটি পেয়েছে বলে ইন্ডিপেনডেন্ট-এর খবরে বলা হয়।

এর ফলে একদল চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে, যারা সঠিক তথ্য জানেন না। এর মূলে রয়েছে রোগীর অধিকারকে গুরুত্ব না দিয়ে কর্পোরেট মুনাফা লাভের চেষ্টা। ইচ্ছাকৃতভাবে দেয়া এসব অস্বচ্ছ তথ্য রোগীদের মৃত্যু ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে জানিয়ে মালহোত্রা যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন।

এফডিএর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসকের পরামর্শে সেবন করা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরো ৮০ হাজারের বেশি মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে, যাদের অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। আক্রান্তদের কেউ কেউ পরে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে বলেও সাম্প্রতিক এ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এফডিএ-র প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মালহোত্রা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে গত এক দশকে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ক অধ্যাপক পিটার গোটজের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ বলছে,হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরে যুক্তরাজ্যে তৃতীয় বৃহত্তম ঘাতক হচ্ছে ‘প্রেসক্রিপশনে দেয়া ওষুধ’।

ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি হয় বয়স্ক নাগরিকদের ওপর। ৭৫ বছরের বেশি বয়সী, যাদের একাধিক ওষুধ খেতে হয়, তাদের মাথা ঝিমঝিম ও মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার জন্যে দায়ী ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এর ফলে তাদের কোমরে আঘাতসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে।

ওষুধ কোম্পানির অর্থায়নে হওয়া সব গবেষণাই ‘বিপণনমূলক’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান, মেডিকেল জার্নাল এবং চিকিৎসকরা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় আর্থিকভাবে লাভবান হতে ওষুধ খাতের এ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গেছেন।’

এর প্রভাব থেকে বাঁচতে ‘সাংস্কৃতিক পরিবর্তন’ এবং ‘তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের’ ওপর গুরুত্ব দেন মালহোত্রা। প্রেসক্রিপশন লেখার ক্ষেত্রে একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তন দরকার। পাশাপাশি ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কী হচ্ছে, তারও পরিষ্কার তথ্য থাকা দরকার। এতে ওষুধ কোম্পানির অর্থায়নে করা গবেষণার নৈতিক মান বাড়াতেও উৎসাহ জোগাবে।

তথ্যসূত্র : বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

(২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)