আমার পড়ালেখাতেই আনন্দ

কথাটা খুব ভালো। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার ক্লাসের ফার্স্টবয় ফার্স্টগার্ল টাইপের কয়েকজন বাদে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই একথাটা বলতে পারেন না। কারণ তারা পড়ার আনন্দ খুঁজে পান না। পড়াশোনাটা তাদের কাছে নেহায়েত পরীক্ষা পাশের জন্যে প্রয়োজন। আর এর মূল কারণ হলো মনোযোগ দিতে না পারা।

আনন্দের উৎস : মনোযোগ

এখন অনেক কোচিং সেন্টার খুলছে যারা বলে এখানে অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ যত্ন সহকারে পড়ানো হয়। তাহলে অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রী বলে কি বিশেষ কোনো গোষ্ঠী আছে? আসলে তা নয়। মনোযোগ বা মেন্টাল এনার্জি প্রয়োগ করার ক্ষমতা প্রত্যেকেরই আছে। ক্লাসের সবচেয়ে অমনোযোগী ছেলেটা যে সারাদিন ক্রিকেট নিয়েই থাকে, তাকে দেখুন টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখার সময়। কিরকম মগ্ন আর মনোযোগী! আপনাদের কথাই ভাবুন না! পরীক্ষার আগে যখন ৪ মাসের পড়া করতে হবে ১ সপ্তাহে, তখন কি গভীর আর অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে আপনি পড়তে পারেন। মনোযোগের উপাদান মাত্র দুটি। এক, আগ্রহ; দুই, পরিবেশ।

আগ্রহ

  • পড়তে বসার আগে একটু চিন্তা করুন- কী পড়বেন, কেন পড়বেন, কতক্ষণ ধরে পড়বেন। প্রত্যেকবার পড়ার আগে কিছু টার্গেট ঠিক করে নিন। যেমন, এত পৃষ্ঠা বা এতগুলো অনুশীলনী।
  • বিষয়ের বৈচিত্র্য রাখুন। নিত্য নতুন পড়ার কৌশল চিন্তা করুন।
  • এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আগ্রহের একটা সম্পর্ক আছে। এনার্জি যত বেশি মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর দিনের প্রথমভাগেই এনার্জি বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে পড়াটা দিনে ১ ঘন্টায় পড়তে পারছে সেই একই পড়া পড়তে রাতে দেড় ঘণ্টা লাগছে। তাই কঠিন, বিরক্তিকর ও একঘেয়ে বিষয়গুলো সকালের দিকেই পড়ুন। পছন্দের বিষয়গুলো পড়ুন পরের দিকে। তবে যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ রাতে পড়তে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে সেভাবেই সাজান আপনার রুটিন।
  • একটানা না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়বেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ২৫ মিনিটের বেশি একজন মানুষ মনোযোগ দিতে পারে না। তাই একটানা মনোযোগের জন্যে মনের ওপর বল প্রয়োগ না করে প্রতি ৫০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতি নিতে পারেন। কিন্তু এ বিরতির সময় টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হবেন না যা হয়তো ৫ মিনিটের নামে দুঘণ্টা নিয়ে নিতে পারে।
  • মনোযোগের জন্যে আপনি কোন ভঙ্গিতে বসছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সোজা হয়ে আরামে বসুন। অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া বন্ধ করুন। চেয়ারে এমনভাবে বসুন যাতে পা মেঝেতে লেগে থাকে। টেবিলের দিকে একটু ঝুঁকে বসুন। আপনার চোখ থেকে টেবিলের দূরত্ব অন্তত দু ফুট হওয়া উচিৎ।
  • পড়তে পড়তে মন যখন উদ্দেশ্যহীনতায় ভেসে বেড়াচ্ছে জোর করে তখন বইয়ের দিকে তাকিয়ে না থেকে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে রুম ছেড়ে যাবেন না। কয়েকবার এ অভ্যাস করলেই দেখবেন আর অন্যমনস্ক হচ্ছেন না।
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসুন এবং পড়তে বসার আগে কোনো অসমাপ্ত কাজে হাত দেবেন না বা সেটার কথা মনে এলেও পাত্তা দেবেন না। চিন্তাগুলোকে বরং একটা কাগজে লিখে ফেলুন।
  • টার্গেট মতো পড়া ঠিকঠাক করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন, তা যত ছোটই হোক।

পরিবেশ

  • পড়ার টেবিলটাকে রাখুন দেয়ালমুখো। ছবি, শো-পিস ইত্যাদি সবরকম জিনিস যা মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে পারে সেগুলোকে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে রাখুন।
  • চেষ্টা করুন একই জায়গায় সবসময় পড়ার জন্যে। আর পড়ার টেবিলটাকে অন্য আর কোনো কাজে ব্যবহার করবেন না। একইভাবে বিছানায় শুয়ে বা বসে পড়ার অভ্যাস করবেন না।
  • মোবাইল বন্ধ করে রাখুন। সাইলেন্স বা ভাইব্রেশনে রাখলে একবারে পড়া শেষ করে মোবাইল খুলুন।
  • টিভি'র সামনে বসবেন না। একবারে শব্দহীন পরিবেশ যদি অস্বস্তিকর হয়, তাহলে দ্রুতলয়ের কোনো মিউজিক খুব কম ভলিউমে দিয়ে রাখতে পারেন। তবে সেটাও ডিস্টার্বিং মনে হলে বন্ধ করে দিন।
  • পড়ার জায়গায় পর্যাপ্ত আলো যেন থাকে। আলো পড়ার মনোযোগ বাড়ায়।
  • পড়ার কাজে যে জিনিসগুলো লাগবে তার সবগুলোই নিয়ে বসুন। যাতে বারবার উঠতে গিয়ে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে না হয়।
  • বন্ধু রুমমেট বা বাসার কেউ আপনার মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে কিনা খেয়াল করুন। তাকে এড়াবার জন্যে কৌশল অবলম্বন করুন।
  • পড়ার জন্যে লাইব্রেরি, সেমিনার রুম, রিডিং হল ইত্যাদি যেখানে আরো অনেকেই পড়ছে এবং পুরো পরিবেশটাই পড়ার জন্যে অনুকূল সেগুলোকে বেছে নিতে পারেন। আপনি মনোযোগী হতে পারবেন।