ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার করছেন? নিজের অজান্তেই ডেকে আনছেন ভয়ানক ক্ষতি!

published : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

রাত গভীর, নিস্তব্ধ চারপাশ। অথচ আপনার চোখ তখনও চোখ আটকে আছে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে। আরেকটু স্ক্রল, আরেকটা ভিডিও, একটা নোটিফিকেশন চেক— এই করতে করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় অজান্তেই। কিন্তু জানেন কি, এই অভ্যাসটাই মারাত্মক ক্ষতি করছে আপনার ঘুম, মন, আর শরীরের?

আসুন জানি ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহারের ৫ ক্ষতি সম্পর্কেঃ

১. ঘুমে ব্যাঘাত ও অনিদ্রা

ফোনের স্ক্রিন থেকে যে নীল আলো বা Blue Light বিচ্ছুরিত হয় তাকে বলা হয় ঘুমের মহাশত্রু! কারণ মস্তিষ্কের মেলাটোনিন নামের যে হরমোনটি আমাদের ঘুম আনতে সাহায্য করে তার উৎপাদনকে ব্যহত করে এই নীল আলো।    

ফলাফল? ঘুম আসে দেরিতে, ঘুমের মান হয় খারাপ। আর সকালে উঠে মাথা ঝিমঝিম।

বিশেষজ্ঞদের মতে এটি কেবল ঘুমকেই প্রভাবিত করে না, বরং অনিদ্রাও সৃষ্টি করতে পারে। ৪৫ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখে গেছে, ঘুমানোর আগে ১ ঘণ্টা স্ক্রিন দেখলে ইনসমনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে ৫৯ ভাগ! 

যে-কোনো আলোই মেলাটোনিন উৎপাদনকে বিঘ্নিত করে। তবে একই ব্রাইটনেসের অন্য আলোর চেয়ে নীল আলো এটা করে দ্বিগুণ বা তারও বেশি- বলছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা

আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিছানায় যাওয়ার আগে মাত্র ৩০ মিনিট মোবাইল ব্যবহার করলেও ঘুম আসতে গড়ে ৪০ মিনিট পর্যন্ত বিলম্ব হয়তে পারে। 

২. মানসিক চাপ উদ্বেগ বিষণ্ণতা

বহু গবেষণায় ঘুমানোর আগে স্ক্রিন ব্যবহারের সাথে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার গভীর সংযোগ পাওয়া গেছে। 

ঘুমানোর আগে স্ক্রলিংয়ে ব্যস্ত থাকলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হওয়ার পরিবর্তে সজাগ অবস্থায় থাকে। এটি ডোপামিন এবং অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে দেখা দিতে পারে অতিচিন্তা, বিষণ্ণতা, মানসিক ক্লান্তি।

রাতের বেলা বেশি দেখা কনটেন্টের মধ্যে আছে হরর, থ্রিলার বা ভায়োলেন্ট মুভি, সারাদিনে ঘটা নেতিবাচক ঘটনার সংবাদ, টক শো ও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, পর্ন ইত্যাদি। এ-ধরণের কনটেন্ট স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের নিঃসরণ বাড়িয়ে গভীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। আর ঘুমের অভাব নষ্ট করে শরীরের হরমোন ভারসাম্য। ফলে দেখা দেয় উদ্বেগ, বিষণ্নতা, মনোযোগের অভাব ও হঠাৎ মেজাজ পরিবর্তনের মতো সমস্যা।

গবেষণামতে, যারা রাতে দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে মানসিক চাপ ও একাকিত্বের প্রবণতা গড়ের চেয়ে দ্বিগুণ।

মস্তিষ্ক বিকাশমান পর্যায়ে থাকে বলে কিশোর-কিশোরীদের জন্যে রাতের স্ক্রিন টাইম বেশি ক্ষতিকর। নিয়মিত ঘুমের অভাব ও আসক্তিমূলক মোবাইল ব্যবহার তাদের মনোযোগ, পড়াশোনা, এমনকি আত্মবিশ্বাসও নষ্ট করে। 

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে তিন ঘণ্টার বেশি ফোনে ব্যস্ত থাকা কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যা ভাবনা ও উদ্বেগজনিত সমস্যা দ্বিগুণ

৩. শারীরিক ক্ষতি

ফোনের আলো এমনিতেই চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ঘুমানোর আগে যখন আপনি অন্ধকারের মধ্যে ফোন ব্যবহার করেন তখন এই চাপ হয় আরো বেশি। যার ফলে চোখের সমস্যা, যেমন- চোখ শুষ্কতা, ঝাপসা দেখা, জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা হতে পারে। দৃষ্টিশক্তিকে দুর্বল করে দিতে পারে দীর্ঘদিনে এই অভ্যাস।

এছাড়া, স্ক্রিনের নীল আলো শরীরের তাপমাত্রা, কর্টিসল ও বিপাকক্রিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে। ওজন, রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এই ক্ষতিকর অভ্যাস। 

৪. স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপের ওপর প্রভাব 

রাতজেগে ফোন ব্রাউজিং স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি এবং ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যা মনোযোগে ঘাটতি, স্মৃতিশক্তি ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস, ক্লান্তি ও দুর্বলতা ইত্যাদির কারণ হতে পারে।

৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস

ঘুম হচ্ছে প্রকৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী ওষুধ। মস্তিষ্ক দিনের বেলা অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে বলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছু কম থাকে, যা সবচেয়ে সক্রিয় থাকে রাতের বেলা যখন আপনি ঘুমান। যে কারণে অসুস্থ হলে ডাক্তাররা পর্যাপ্ত ঘুমের পরামর্শ দেন।

রাতের বেলা কম ঘুমালে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষত রাতজেগে ফোন ব্রাউজিং করার ফলে নিঃসৃত কর্টিসল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়।

ক্ষতিগুলো থেকে বাঁচতে করণীয় 

এই ক্ষতিগুলো এড়ানোর একমাত্র উপায় হলো রাতের বেলা স্ক্রিনটাইম কমানো। ঘুমানোর একঘণ্টা আগে কোনো স্ক্রিন ব্যবহার করবেন না। রাত এগারোটার মধ্যে বিদায় জানান সকল ডিজিটাল ডিভাইসকে।

এসময় ঘুম না এলে ফোন দেখার পরিবর্তে বই পড়ুন, কোরআন মর্মবাণী শুনুন বা মেডিটেশন করুন।

ফোনের নোটিফিকেশন এবং ভাইব্রেশনও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই ঘুমের সময় ফোন দূরে রাখুন বা বিছানায় রাখতে হলে বন্ধ করে রাখুন।

এভাবে রাতের বেলা ফোন ব্যবহারের অভ্যাস বদলালে দেখবেন আপনার ঘুম অনেক উন্নত হয়েছে। আপনি আগের চেয়ে সুস্থ, কর্মক্ষম এবং প্রডাক্টিভ থাকছেন।