দৈহিক উচ্চতা বাড়াতে সহায়ক কয়েকটি যোগাসন

'ইস! যদি আরেকটু লম্বা হতে পারতাম!’

ছোটবেলায়, বিশেষত কৈশোরে অনেক ছেলেমেয়ের গোপন দীর্ঘশ্বাস থাকে এই আফসোসটুকু নিয়ে। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেটেত্ব একটা লোকলজ্জার বিষয়। বয়স অনুপাতে খর্বকায় হলে বডি শেমিংয়ের শিকার হন না- আমাদের সমাজে এটা অতি বিরল!

নানাবিধ কারণে কারো কারো দৈহিক উচ্চতা বৃদ্ধি একটা বয়স পর্যন্ত বন্ধ বা মন্থর থাকে, আবার কারো কারো উচ্চতা সেভাবে আর কখনোই বাড়ে না।   

উচ্চতা কেন বাড়ে, কেন বাড়ে না?

বেটেত্বর মূল কারণ হিসেবে জেনেটিক্স বা বংশগতিতে দায়ী করা হয়। অর্থাৎ, সন্তানের উচ্চতা হবে বাবা বা মা অথবা উভয়ের উচ্চতার কাছাকাছি- এমনটাই ধারণা বেশিরভাগ মানুষের।

দৈহিক উচ্চতার ক্ষেত্রে জিনের প্রভাব আছে ঠিক, তবে এর বাইরেও আছে আরো কিছু কারণ।

গবেষণার আলোকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৬০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চতা কম-বেশির কারণ জিন (Gene)। বাকি ২০-৪০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাব রয়েছে পুষ্টি, লাইফস্টাইলসহ পারিপার্শ্বিক কিছু বিষয়ের।   

হরমোনগত কারণও উল্লেখ্য

উচ্চতা বৃদ্ধিতে যে হরমোনটি কাজ করে তার নাম হিউম্যান গ্রোথ হরমোন (এইচজিএইচ)। এটি নিঃসৃত হয় পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে।

অলস জীবনযাপন করলে এবং শরীরে পুষ্টিঘাটতি থাকলেও নেতিপ্রভাব পড়তে পারে শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধিতে। কাজেই দেহমনের বিকাশ পর্যায়ে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর, বিশেষত ভিটামিন-ডি, প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ জরুরি।

১ কোটি ৮৬ লাখ মানুষের ওপর পরিচালিত ব্যাপকভিত্তিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেশ কিছু দেশে গত ১০০ বছরে মানুষের গড় উচ্চতা বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন সেখানকার অধিবাসীদের পুষ্টিগ্রহণে উন্নতির কথা।  

উচ্চতা বাড়ে একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত

ব্যক্তিভেদে ১৮ থেকে ২০ বছর হলো উচ্চতাবৃদ্ধির সময়। এই বয়সের পর হাড়ের গ্রোথ প্লেটগুলো (growth plates) এঁটে যায়।

গ্রোথ প্লেট হলো শিশু-কিশোরদের লম্বা হাড়ের (Long bones) প্রান্তবর্তী টিস্যু অঞ্চল, যা পরিণত বয়সে হাড়ের দৈর্ঘ্য ও আকার কেমন হবে তা নির্ধারণ করে।

বয়ঃসন্ধিকালের শেষদিকে হরমোনগত পরিবর্তনের ফলে গ্রোথ প্লেট শক্ত বা ‘বন্ধ’ হয়ে যায়। এতে থেমে যায় হাড়ের বৃদ্ধি; ফলে উচ্চতা আর বাড়ে না। কাজেই উচ্চতাবৃদ্ধিতে যা কিছু করণীয় তা করতে হবে এই বয়সসীমার মধ্যেই।

জীবনের এই পর্যায়টুকুতে সঠিক পুষ্টির পাশাপাশি নিয়মিত যোগাভ্যাসের মাধ্যমে সম্ভব উচ্চতাবৃদ্ধি।

যে ৩টি যোগাসন করে আপনি আপনার দৈহিক উচ্চতায় বাড়তি কয়েক ইঞ্চি যোগ করতে পারেনঃ

১. হস্তপদাসন

দু’পায়ের মধ্যে ৪/৫ আঙুল পরিমাণ ফাঁকা রেখে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ান। এবার হাত দুটো সোজা করে ওপরের দিকে তুলুন। দুই কানের সাথে দু’হাত লেগে থাকবে, হাতের তালু থাকবে সামনের দিকে।

এবার পা টানটান রেখে ধীরে ধীরে শরীরের ওপরের অংশ কোমর থেকে সামনের দিকে নামাতে থাকুন। কপাল হাঁটুর সাথে এবং পেট ও বুক ঊরুর সাথে লেগে থাকবে। হাত দিয়ে দু’পায়ের গোড়ালি ধরতে চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখুন যাতে হাঁটু ভেঙে না যায়।

১০-২০ সেকেন্ড এই ভঙ্গিমায় থাকুন। এভাবে ৩-৫ বার করতে হবে।

চিত্রসহ আসনটির ধাপ ও উপকারিতা

২. শশাঙ্গাসন

প্রথমে বজ্রাসনের মতো করে বসুন। এবার হাঁটুতে ভর করে শরীরের ওপরের অংশ সোজা রেখে ওপরের দিকে তুলুন।

এরপর আস্তে আস্তে মাথা সামনের দিকে বাঁকিয়ে কপাল হাঁটুর সাথে লাগাতে চেষ্টা করুন। দু’পায়ের গোড়ালি লেগে থাকবে; হাত দিয়ে গোড়ালি দুটো ধরুন। মাথার তালু মাটিতে এবং থুতনি গলার শেষ প্রান্তে লেগে থাকবে।

শেষ অবস্থানে গিয়ে ১০-২০ সেকেন্ড থাকুন।

চিত্রসহ আসনটির ধাপ ও উপকারিতা

৩. পশ্চিমোত্তানাসন

দুই পা সামনে ছড়িয়ে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। এবার আস্তে আস্তে মাথা নিচু করে যতদূর সম্ভব সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে পা ধরতে চেষ্টা করুন। পা দুটো জোড় বেঁধে থাকবে; হাঁটু থাকবে সোজা।

আস্তে আস্তে দুহাত দিয়ে দুপায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। কনুই মাটিতে লেগে থাকবে। দম থাকবে স্বাভাবিক।

চিত্রসহ আসনটির ধাপ ও উপকারিতা

আসনগুলো চর্চার ক্ষেত্রে যা খেয়াল রাখবেন  

প্রথমদিকে কোনো আসনই শতভাগ সঠিক ভঙ্গিমায় করতে পারবেন না। তাই সঠিক ভঙ্গিমায় যেতে জোরাজুরি না করে যতটা যায় ততটা-ই করুন। নিয়মিত চর্চা করলে ধীরে ধীরে শরীর নমনীয় হবে, আপনি সঠিক ভঙ্গিমায় যেতে পারবেন।

আর যে-কোনো ইয়োগা আসন চর্চার আগে অভিজ্ঞ ডাক্তার বা ইয়োগা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ কিছু কিছু আসন আছে যেগুলো বিশেষ বিশেষ রোগ থাকলে করা উচিৎ নয়।

রোগ নিরাময়ে কোয়ান্টাম ব্যায়াম ও সৌন্দর্যচর্চা বইটিতেও এ-ব্যাপারে কিছু ধারণা পাবেন।