কাজের তালিকা করুন, সময়ের নয়

মনে রাখবেন, আমরা ব্যস্ততার ফসল ঘুরে তুলতে চাই, স্রেফ ব্যস্ততা চাই না। তাই সময়ের ভাগ ততক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ না আমরা কাজগুলো শেষ করতে পারছি। এই সচেতনতাই হলো রুটিন করার প্রথম ধাপ।

প্রতিদিন আপনাকে কিছু কাজ করতেই হয়। খাওয়া-গোসল-নামাজ। স্কুলের জন্যেও প্রতিদিন একই সময় বেরুতে হয়। স্যারের বাসায় যেতে হয় সপ্তাহে দু/তিনদিন। এই নির্দিষ্ট কাজগুলোকে প্রথমে তালিকাভুক্ত করুন। শনি-রবি-এভাবে শুক্রবার পর্যন্ত। এছাড়া বাড়তি কাজও করতে হয়। প্রিয় টিভি শো, বন্ধুদের সাথে খেলতে যাওয়া - কম্পিউটার গেম ইত্যাদি। আর তারপর আছে বিবিধ কাজ- ফোন ধরা, দরজায়  কে এসব দেখা। খেয়াল করুন, প্রথম যেগুলো বললাম তা হলো নিয়মিত কাজ। দ্বিতীয়ভাগে ছিল বিনোদনমূলক কাজ। আর তারপর আসলো জরুরি কাজ, যা করতেই হয়। এখন মনে রাখতে হবে যে, আমাদের রুটিন কিন্তু এগুলোর জন্যে নয়। এগুলো এমনিতেও আমরা করে যাই। রুটিন হলো সেসব কাজের জন্য যেগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ, এবং যেগুলো সচরাচর বাদ পড়ে যায়।

কী রকম? গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পড়াশুনা, মেডিটেশন, রিপোর্ট তৈরি। ভাগ্যের পরিহাস হলো এগুলো বাদ পড়ে যায় সবচেয়ে বেশি। অতএব এগুলোকে ছকে ফেলবার জন্যেই রুটিন। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এগুলোকে সময়ের ফ্রেমে বাঁধা। এই রুটিনটা দুইরকম হতে পারে:

 

(ক) সাপ্তাহিক রুটিন : (নমুনা)

বার ৮টা-১টা ১টা-৩টা ৩টা-৫টা ৫টা-৭টা ৭টা-১১টা
(নিজের পড়া )
শনিবার ক্লাস খাওয়া, গোসল, বিশ্রাম একাউন্টিং পড়া ফ্রি টাইম হতে পারে বাংলা ১ম পত্র
একাউন্টিং ১ম পত্র
পরিসংখ্যান ১ম পত্র
রবিবার ক্লাস পরিসংখ্যান পড়া খাওয়া, গোসল ও বিশ্রাম ফ্রি একাউন্টিং, পরিসংখ্যান
ব্যবসায় পরিচিতি
সোমবার ক্লাস একাউন্টিং পড়া,
কোচিং ক্লাস বা প্রাইভেট পড়া
খাওয়া, গোসল ও
বিশ্রাম
বাংলা ২য় পত্র
অর্থনীতি
বাণিজ্যিক ভূগোল
টিভিতে প্রিয় শো দেখা

 

অথবা

(খ) প্রাত্যহিক রুটিন : তারিখ : -----------, শনিবার (নমুনা)

সকাল ৬.০০-৭.৩০ মি. ঘুম থেকে ওঠা, ব্যায়াম, মেডিটেশন, নাস্তা খাওয়া
৭.৩০-১.০০ মি. ক্লাসে যাওয়ার প্রস্তুতি, ক্লাস
দুপুর ১.০০-৩.০০ মি. খাওয়া, গোসল, বিশ্রাম (এখানে মেডিটেশন করা যেতে পারে)
বিকেল ৩.০০-৫.০০ মি. স্যারের কাছে পড়তে যাওয়া
৫.০০-৭.০০ মি. টিভি দেখা বা ফ্রি টাইম
রাত ৭.০০-১১.০০ মি. নিজের পড়া তৈরি
১১.০০-১১.৩০মি. মেডিটেশন (দুপুরে করে ফেললে এ সময়ের মেডিটেশনটি করা আপনার ইচ্ছাধীন)
১১:৩০ - ঘুম

 

কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখুন :

  • হঠাৎ কোনো জরুরি কাজ পড়ে গেলে আগের দিন বিকেলে বা সন্ধ্যার মধ্যেই সেটাকে রুটিনে উল্লেখ করুন।
  • খেয়াল রাখুন যে, কোনো একবেলার পর পর দুটি কাজ যেন সাংঘর্ষিক হয়ে না যায়। যেমন, ঘরে বসে কাজ এবং বাইরে বেরুনোর কাজ সকালের রুটিনে পর পর রাখা।
  • প্রতি বেলার তালিকাভুক্ত কাজ সম্পন্নের জন্যে যুক্তিসঙ্গত সময়সীমা বরাদ্দ করুন। একেবারে ঘন্টা-মিনিট-সেকেন্ড ধরে রুটিন করবেন না। প্রথম প্রথম চেষ্টা করুন সবগুলো কাজ করার, রুটিন যদি একটু-আধটু পাল্টেও যায় তবুও। তবে খেয়াল রাখবেন কোনো কাজ যেন বাদ পড়ে না যায়।
  • যে বেলায় যে কাজটি হয়ে যাবে, সাথে সাথে তা ক্রস চিহ্ন দিয়ে কেটে দিন। যদি পুরোপুরি শেষ না হয় তাহলে কতটুকু বাকি আছে তা লিখে রাখুন।
  • আংশিক সম্পন্ন কাজ বা কোনো বেলায় একেবারেই শুরু করতে পারেন নি এমন কাজগুলোকে চেষ্টা করুন পরের বেলার বা পরের দিনের কাজের সাথে বা পরবর্তী সুবিধাজনক সময়ে সম্পন্ন করতে।