টেনশনের মহৌষধ

প্রথমত, অগ্রাধিকার ঠিক করুন আপনি যদি আসল সমস্যা ও তুচ্ছ সমস্যার মধ্যে পার্থক্য করতে না পারেন তাহলে আপনি টেনশনে আক্রান্ত হবেন। এটা যেরকম জীবনের খুব বড় বড় বিষয়গুলোর জন্যে সত্যি, তেমনি নিত্যদিনের টুকিটাকি কাজের বেলায়ও সত্যি। নিত্যদিনের আবশ্যক কাজের বাইরে যদি হঠাৎ কিছু এসে পড়ে তাহলে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে কাজটা আদৌ করবেন কিনা। আবার বহুদিন ধরে জমে আছে এমন কাজগুলো শেষ করার জন্যে ছুটির দিন বেছে নিতে পারেন, অথবা প্রতিদিন একটু একটু করেও শেষ করে ফেলতে পারেন। জরুরি হলো সেগুলো মনে রাখা। একটা কাগজে ১-২-৩- দিয়ে লিস্ট করে ফেলুন এবং সাথে রাখুন। দেখবেন ভুল হবে না।

দ্বিতীয়ত, আবেগ প্রকাশ পেতে দিন রাগ হলে দেয়ালে জোরে ঘুষি মারলে যেমন আরামবোধ হবে, তেমনি মনের বাড়ি গিয়ে ইচ্ছেমতো চেঁচালেও শান্তি পাবেন। তবে হাঁ, ব্যক্তি কারো উপর রাগ ঝাড়া সবসময়ই নিজের জন্যে ক্ষতিকর। সমস্যা সমাধানে আগে মাথা ঠান্ডা করুন, এরপর সময় নিয়ে তাকে কড়া একটা ধমক দিয়ে দিন। আর যদি কাঁদতে ইচ্ছে করে তবে হাউ-মাউ করে কাঁদুন। ছেলেদের (বা ‘পুরুষদের’) জন্য বলি কান্নাকে মেয়েলি ভাববেন না। কান্না নার্ভাস সিস্টেমকে টেনশনমুক্ত করে। আবার একই কথা হাসির বেলায়ও প্রযোজ্য। তাই প্রতিদিন খুব করে হাসুন, হাসির নতুন নতুন উপলক্ষ সৃষ্টি করুন।

টেনশনমুক্তির আরেকটা উপায় হলো ‘না’ বলতে পারা। যত আপনি অন্যকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করবেন, লোকে কী ভাবল—সেটাকে গুরুত্ব দিবেন তত আপনি টেনশনে ভুগবেন। তাই নিজের প্রয়োজন বা ইচ্ছের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখবেন বিনয়ের সাথে যখন ‘না’ বলতে পারবেন, দেখবেন আপনি অনেক স্বস্তি বোধ করছেন। যেটা করবেন না সেটাতে প্রথমেই না বলুন; করব-করব বলে যত দীর্ঘসূত্রিতা করবেন তত আপনার অস্থিরতা বাড়বে।

আর, যত জীবনের সাথে মমতাকে যুক্ত করতে পারবেন তত আপনি ভালো থাকতে পারবেন এ মমতার প্রকাশ যে কোনোভাবে হতে পারে। বন্ধুর সাথে খোশগল্প বা প্রিয়জনের সাথে একটু হাসাহাসি আপনার দিনটাকে অনেকখানি চাঙ্গা করে দিতে পারে। বাবা-মা হিসেবে বাইরে বেরোনোর আগে বা রাতে ঘুমাতে যাবার সময় ছেলেমেয়ের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিন বা আদর করে দিন। দেখবেন ভালবাসার এ প্রকাশ আপনার মনকে বহুগুণে পরিতৃপ্ত করছে। 

সবশেষে বলব টেনশন ছাড়তে চাইবেন আর মেডিটেশন করবেন না—এটা হবে না। টিভি বা সিনেমার পর্দার সামনে বসলেই আপনার শরীর-মন শিথিল হবে এমন কোনো কথা নেই। বরং অভিজ্ঞতা বলে এর উল্টোটাই ঘটে বেশি। তাই প্রতিদিন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় শিথিলায়ন করুন। কল্পনাকে আপনার চিন্তা দেহের উপর কর্তৃত্ব করতে দিন দরজা বন্ধ করে আধ ঘণ্টার জন্যে হাত-পা ছেড়ে শুয়ে পড়ুন। লম্বা দম নিতে নিতে শরীরকে শিথিল হয়ে যেতে দিন। গভীর ঘুমের মতো ঝরঝরে হয়ে উঠবেন।