published : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
যেসব কারণে মানুষ কর্মহীন-নিস্পৃহ হয়ে পড়ে ডিপ্রেশন তার অন্যতম। দেশের ১৬ শতাংশ মানুষ এখন ডিপ্রেশনে ভুগছে।
ডিপ্রেশন আর সাধারণ মন খারাপ এক নয়।
আমাদের সবারই বিভিন্ন কারণে মন খারাপ হতে পারে- পরীক্ষায় ভালো ফল করতে না পারলে, প্রমোশন না হলে, স্বামী/স্ত্রীর সাথে ভুল বোঝাবুঝি হলে এমনকি বৃষ্টির দিন দেখলেও অনেকের মন খারাপ হয়।
কিন্তু ক্লিনিকেল ডিপ্রেশন একটা মানসিক রোগ। রোগী দিনের পর দিন, এমনকি সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে মন খারাপের অনুভূতিতে আক্রান্ত থাকে। যা-ই করা হোক না কেন তার মন ভালো হয় না। পেশা, পরিবার, সমাজ- সবক্ষেত্রেই হতে থাকে সমস্যা।
-কাজে উৎসাহ না পাওয়া, এমনকি এমন সব কাজেও যা তিনি একসময় খুব আগ্রহ নিয়ে করতেন
-খিদে কমে যাওয়া
-নিজেকে ব্যর্থ ভাবা বা অহেতুক অনুশোচনায় ভোগা
-ঘুম বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া
-অস্থিরতা
-কাজে ধীরগতি
-সবসময় আলস্য আর ক্লান্তি অনুভূতি, শরীরে শক্তি না পাওয়া। ডিপ্রেশনের কোনো কোনো রোগীকে দিনের পর দিন বিছানায় কাটিয়ে দিতে দেখা যায়।
-এবং আত্মহত্যা চিন্তা
এই উপসর্গগুলোর অন্তত পাঁচটি যদি কারো মধ্যে থাকে এবং টানা দু’সপ্তাহ বিরাজ করে তখন মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, তার একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কেও কিছু পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব এবং হিপোক্যাম্পাসের আকৃতি ছোট হয়ে গেছে, কমেছে সেরেটনিন, নরএপিনেফ্রাইন এবং ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদন, এলোমেলো হয়ে গেছে তাদের সার্কাডিয়ান রিদম বা দেহছন্দ।
সেই সাথে দেখা গেছে REM ঘুম বা অগভীর ঘুমচক্রেররও কিছু স্পষ্ট পরিবর্তন।
তবে এগুলো কোনোটাই রোগীকে বাইরে থেকে দেখে বা শুনে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এমনকি বিজ্ঞানীরা জানেনও না যে ডিপ্রেশন কেন হয়। আসলে জিন এবং পরিবেশ- এ দুয়ের একটা জটিল মিথষ্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উদ্ভুত হয় ডিপ্রেশন।
-সাইকিয়াট্রিক মেডিসিন এবং সাইকোলজিকেল থেরাপি
-সীমিত ক্ষেত্রে কখনও কখনও ইলেকট্রো-কনভালসিভ থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। এতে রোগীর ব্রেনে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়ে থাকে।
-এছাড়া আছে ট্রান্সক্র্যানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন
তাই পরিচিত কাউকে ডিপ্রেশনে ভুগতে দেখলে মমতার সাথে তাকে এই প্রতিকারগুলো নিতে উদ্বুদ্ধ করুন, ভালো চিকিৎসকের সন্ধান থাকলে জানান এবং চিকিৎসকের কাছে গিয়ে যেসব বিষয় সে জানতে চাইতে পারে তা লিখে দিন।
আসলে মানসিক সমস্যায় যারা আক্রান্ত হন তাদের পক্ষে এই প্রথম ধাপগুলো সামলানো খুব কঠিন হয়। যে কারণে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেলথের একটা জরিপ হলো- একজন মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে শুরু করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া পর্যন্ত গড়ে তার নাকি ১০ বছর সময় লেগে যায়!
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এত উন্নত আমেরিকারই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে আমাদের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়!
লোকভয় বা লজ্জার কারণে যদি মানুষটি সংকোচ বোধ করে তাহলে বলুন- ডায়াবেটিস বা এজমা যেমন একটি রোগ, চিকিৎসার জন্যে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়, ডিপ্রেশনও তা-ই। এটা কোনো দুর্বলতা বা ব্যক্তিত্বের সমস্যা নয় যে এ নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগতে হবে। একটা হাত ভেঙে গেলে যেমন আমরা আশাবাদী থাকি যে একদিন এটা সেরে যাবে, ডিপ্রেশনকে নিয়েও এভাবেই ভাবতে হবে।
তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ শ্রেয়। কেউ যদি তার মানসিক অবস্থার যত্ন নেয় তাহলে খারাপ কিছু যদি তার সাথে ঘটেও যায় সে সামলে নিতে পারবে। অনেক মানুষের কথাই আমরা জানি যাদের জীবনে বহু ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। কিন্তু ঘটনাগুলো তাদেরকে ডিপ্রেশনে ডুবিয়ে তো দেয়ই নি, বরং নতুন প্রেরণা দিয়েছে।
এজন্যে নিয়মিত মেডিটেশন করুন। গবেষণায় দেখা গেছে-মেডিটেশন মানুষকে প্রশান্ত করে, আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচক করে। আর ডিপ্রেশনে যখন একজন মানুষ আক্রান্ত হয় তখন তার মানসিকতায় এ জিনিসগুলোরই অভাব থাকে।
এজন্যে কোয়ান্টাম মেথড ওয়েবসাইট বা Meditation for All চ্যানেল থেকে শিথিলায়ন মেডিটেশনটি ডাউনলোড করে আজ থেকেই শুরু করে দিন এ চর্চা।
আর সুযোগ থাকলে সম্পৃক্ত হোন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সাথে। সবার জন্যে উন্মুক্ত প্রোগ্রামগুলোতে আসুন। একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতা যা ডিপ্রেশনের একটা বড় কারক, সেটাকেই মোকাবেলা করতে পারবেন সহজে।