পেশাজীবনের মহাশত্রু জবস্ট্রেস : মোকাবেলায় যা করবেন

published : ৫ জুন ২০২৫

স্ট্রেস- ছোট্ট, কিন্তু বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। পেশাজীবন আর স্ট্রেস যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। যদিও আমরা প্রায়ই চ্যালেঞ্জের সাথে স্ট্রেসকে গুলিয়ে ফেলি। 

জবস্ট্রেস কী? 

জবস্ট্রেস হচ্ছে একধরণের শারীরিক মানসিক প্রতিক্রিয়া, যা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব এবং কর্মীর সক্ষমতার মধ্যে সংঘাত হলে সৃষ্টি হয়। এখানে কাজটি সম্পন্ন করার জন্যে দরকারী সহযোগিতা না পাবার বিষয়টিও জড়িত। 

দায়িত্বের চাহিদা বা চাপ যত বেশি, পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর শঙ্কাও ততখানি, যা কর্মীর উপর স্ট্রেস তৈরি করে। ক্রমাগত এধরণের পরিস্থিতি চলতে থাকলে যে-কোনো পেশাজীবীর ক্ষেত্রে জবস্ট্রেস ক্রনিক আকার ধারণ করতে পারে. যা শরীর, মন দুই’য়ের জন্যেই চরম ক্ষতিকারক। 

নীরব ঘাতক 

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিন-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অল্প বয়সে যারা কর্মক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে স্ট্রেস বা চাপের মুখে পড়েন তাদের অবসন্নতা, উদ্বেগ এবং মারাত্মক ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।   

জব-স্ট্রেসের শারীরিক ক্ষতিও কম নয়! 

প্রকৃতিগতভাবেই যে-কোনো চাপের মুখোমুখি হলে আমাদের শরীর ও স্নায়ু টানটান হয়ে ওঠে। যেটিকে আমরা ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’ নামি জানি। এসময়টাতে দেহে নিঃসৃত হয় স্ট্রেস হরমোন ‘কর্টিসোল’। 

প্রতিদিন এই অবস্থার মুখোমুখি হলে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াতে সমস্যা তৈরি হয়। কারণ অতিরিক্ত কর্টিসোল নিঃসরণ মানব দেহের অটো-ইমিউন সিস্টেম বা স্বয়ংক্রিয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। যা বহু ধরণের অসুস্থতা, হৃদরোগ, এমনকি আলঝেইমার হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

ক্রনিক জবস্ট্রেস মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা, এমনকি আকৃতিতেও পরিবর্তন ঘটায়। যার ফলে ব্যক্তির আচরণ, মনোযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিচার-বিশ্লেষণ এবং সামাজিক যোগাযোগ ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে অবধারিতভাবে কর্মক্ষেত্রে পারফরম্যান্স খারাপ হয়। যা কর্মীর ক্যারিয়ার তো বটেই, এমনকি পুরো প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে। 

তবে সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো, ক্রনিক স্ট্রেস আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক-মানসিক সমস্যা বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হতে পারে! অর্থাৎ, বাবা-মায়ের স্ট্রেসের পরিণতি বইতে হতে পারে সন্তানকেও!  

প্রতিরোধে করণীয়  

১. আনন্দ নিয়ে কাজ করুন 

অধিকাংশ মানুষই কাজ করেন অভ্যাসবশত, বিরক্তি নিয়ে। বিরক্তি সামান্য বিষয়কেও অসহনীয় করে তোলে। তখন খুব সহজ কাজও কঠিন মনে হয়। 

আর যদি কাজকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করা যায়, সমস্যার অর্ধেক সেখানেই সমাধান হয়ে যায়। 

২. কাজকে সমস্যা সমাধানের মানসিকতা নিয়ে দেখুন 

আপাত কঠিন কোন কাজের দায়িত্ব এলে ভয় না পেয়ে সেটিকে সমস্যা সমাধানের সুযোগ বলে গ্রহণ করুন। সমস্যাটি কী, সম্ভাব্য সমাধান, কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং যে সমাধানটিকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে নির্দিষ্ট করা হলো তার ফলাফল কেমন হতে পারে তা যাচাই বাছাই করা। এসবই চাপের পরিবর্তে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলবে। 

৩. চাপ নয়, ভাবুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন!  

পাশ্চাত্যে স্ট্রেস প্রসঙ্গে একটা কথা প্রচলিত আছে- Stress should be a powerful driving force, not an obstacle. কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলে যে-কোনো চাপই ‘পজিটিভ স্ট্রেস’-এ রুপান্তরিত হয়। 

৪. মনোযোগ দিন

মনোযোগ বিক্ষিপ্ততার কারণে মানুষ অল্পতেই স্ট্রেস অনুভব করে। কী হয়েছিল, কী হবে, আমি পারবো না- এসব নেতিবাচক চিন্তার চক্র থেকে বের হতে হবে। কাজটি আমি পারব এবং করব- এই ভাবনায় মনকে স্থির করতে হবে। মনোবিদরা একে বলেন ‘মাইন্ডফুলনেস’। 

৫. সুস্থ জীবনাচার মেনে চলুন  

সুষম খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, ভালো সঙ্গ বজায় রাখলে হাজারো চাপ মনের উপর কুপ্রভাব ফেলতে পারে না। 

৬. নিয়মিত মেডিটেশন করুন

স্ট্রেস এবং টেনশনের শ্রেষ্ঠ দাওয়াই হলো মেডিটেশন। জবস্ট্রেস যদি হয় ‘বুনো ওল’, মেডিটেশন হবে ‘বাঘা তেঁতুল’! কারণ যে মনে মেডিটেশন আছে সেখানে স্ট্রেস থাকার সুযোগই নেই!

আসলে আপনি স্ট্রেসের কাছে হার মানবেন, নাকি স্ট্রেসকেই কুপোকাত করবেন তা নির্ভর করছে আপনার মেন্টাল ফিটনেসের ওপর। আর আধুনিক স্ট্রেসপূর্ণ সময়ে মেন্টাল ফিটনেস বাড়াতে মেডিটেশনকে অগ্রাহ্য করার কোনো উপায় নেই!