ছোট ছোট এ স্বাস্থ্যাভ্যাস আপনার হৃদপিণ্ডকে রাখবে সুস্থ

প্রাণায়াম করুন, মুহূর্তেই হয়ে উঠবেন টেনশনমুক্ত ও প্রাণবন্ত

দমের চর্চাকে বলা হয় প্রাণায়াম। খাবার ছাড়া আপনি বেশ কিছুদিন বাঁচতে পারবেন, পানি ছাড়াও কয়েকদিন বাঁচা সম্ভব। কিন্তু দম ছাড়া অর্থাৎ অক্সিজেন ছাড়া আপনি বড়জোর পাঁচ মিনিট বাঁচতে পারেন, এর বেশি নয়। হৃৎপিণ্ডের সুস্থতার জন্যে উপকারী দুটো প্রাণায়াম হচ্ছে, সহজ উজ্জীবন ও নাসায়ন।

দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন, ঘণ্টায় চার মাইল বেগে

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হাঁটলে রক্তে উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ে। ব্রেনে নতুন নিউরোন সেল জন্মায়। ক্যালিফোর্নিয়ার চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. ডীন অরনিশ বলেন, সপ্তাহে মোট তিন ঘণ্টা করে কেউ যদি মাত্র তিন মাসও হাঁটে, তার ব্রেনে এত নিউরোন সেল জন্মায় যে, তার ব্রেনের আকৃতিই বেড়ে যায়। আর এসব কারণে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত হাঁটেন, তাদের আলঝেইমারের ঝুঁকি কমে অনেকখানি।

তবে প্রথমদিনই আপনি এ গতিতে হাঁটতে যাবেন না, হাঁটার গতি প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ান। তবে আপনার ডাক্তার যদি ভিন্ন কোনো পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তাহলে সেভাবেই হাঁটুন।

হাঁটা এবং ন্যাচারাল বাইপাস

আমরা অনেক সময় শুনি, কারো একটি বা কখনো কখনো দুটি করোনারি ধমনীতেই ১০০% ব্লকেজ। কথা হলো, রক্তনালী শতভাগ বন্ধ মানে তো হৃৎপিণ্ডের কোষ আর পেশিগুলো প্রয়োজনীয় রক্ত ও পুষ্টির অভাবে পুরোপুরি অকেজো, এমনকি মারা যাওয়ার কথা। এ মানুষটি তাহলে বেঁচে আছে কী করে?

আসলে যা ঘটে তা হলো, এরকম অবস্থায় কারো কারো হৃৎপিণ্ডের ব্লকেজ-আক্রান্ত ধমনীর চারপাশে কিছু পরিপূরক রক্তনালী সচল হয়ে ওঠার মাধ্যমে একটি কো-লেটারাল সারকুলেশন গড়ে ওঠে এবং এই বিকল্প রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের সব অংশে প্রয়োজনীয় রক্ত পৌঁছে যায়। দেখা গেছে, এরকম ক্ষুদ্র রক্তনালীর সংখ্যা কারো কারো ক্ষেত্রে দু শ থেকে আড়াই শ পর্যন্তও হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ন্যাচারাল বাইপাস। আর শারীরিক শ্রম, ব্যায়াম, হাঁটা অর্থাৎ জীবন-অভ্যাস পরিবর্তনের সাথে এর সরাসরি যোগ রয়েছে।

“নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রমনির্ভর করে সৃষ্টি করেছি (সূরা বালাদ, আয়াত ৪)”

স্রষ্টা এমনভাবে আমাদের দেহ তৈরি করেছেন যে, পরিশ্রম করলে বা কষ্ট করলে আপনি ভালো থাকবেন। দেখবেন, যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তারা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক—এ জাতীয় রোগে কম আক্রান্ত হন। কিন্তু আধুনিক জীবনযাপনে আরাম-আয়েশের উপকরণ এত বেশি যে, এখন আমাদের কায়িক পরিশ্রম করার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। সুস্থ থাকতে হলে তাই আমাদেরকে এখন সচেতনভাবে পরিকল্পিত উপায়ে পরিশ্রম করতে হবে। সুযোগ পেলেই হাঁটা বা পরিশ্রম করার চেষ্টা করতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে। আর যারা অফিসে কাজ করেন, কাজের ফাঁকেই তারা একটু ওঠা-নামা, সিড়ি ভাঙা বা একটু হেঁটে এটা-ওটা করা ইত্যাদি করতে পারেন।

কোয়ান্টাম ব্যায়াম-স্বাস্থ্যবান্ধব, কার্যকরী, সহজ

ব্যায়াম আছে নানান ধরন আর রকমের। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী হলো কোয়ান্টাম ব্যায়াম। এটি যোগব্যায়ামেরই আধুনিক সংস্করণ। সুবিধা হলো, দেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো হৃৎপিণ্ডের সুস্থতার জন্যেও রয়েছে কিছু বিশেষ আসন। যেমন, উজ্জীবন, ভুজঙ্গাসন, অর্ধ-সলভাসন, পবনমুক্তাসন, গোমুখাসন, উষ্ট্রাসন, বজ্রাসন, শবাসন।