দেহকোষের 'ইঞ্জিন অয়েল' ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডকে বলা হয় দেহের ‘ইঞ্জিন অয়েল’

আমাদের দেহকোষ বা সেলের ভেতর রয়েছে নিউক্লিয়াস মাইটোকন্ড্রিয়া রাইবোজম সাইটোপ্লাজম ইত্যাদি, কার্যকারিতার ভিত্তিতে যেগুলোতে বলা যায় ইঞ্জিন। আর দেহের কার্যক্রম যেন সুচারুরূপে পরিচালিত হয় সেজন্যে রয়েছে সার্কুলেটরি সিস্টেম, এন্ডোক্রাইন সিস্টেম, নার্ভাস সিস্টেম, ডাইজেস্টিভ সিস্টেম, ইমিউন সিস্টেমসহ বহুবিধ সিস্টেম।

দেহকোষের সিস্টেমগুলো ঠিকমত সম্পন্ন হওয়ার জন্যে ইঞ্জিনগুলো সচল থাকা প্রয়োজন। গাড়ির ইঞ্জিন ঠিক না থাকলে গাড়ি যেমন চলে না, তেমনি সেল বা দেহকোষও চলবে না যদি না সেলের এই ইঞ্জিনগুলো ঠিক থাকে।

গাড়ির ইঞ্জিন যেন ঠিকমতো কাজ করতে পারে সেজন্যে ইঞ্জিনে এক ধরণের লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা হয়। একে বলে ইঞ্জিন অয়েল। দেহকোষের ইঞ্জিনগুলোর কার্যকারিতার জন্যেও লাগে 'ইঞ্জিন অয়েল'। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড-ই হলো দেহকোষের ইঞ্জিন অয়েল।

ওমেগা-৩ এর আছে বহু উপকার

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ক্ষতিকর LDL-এর মাত্রা কমিয়ে উপকারি HDL-এর মাত্রা বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করে; নিশ্চিত করে রক্তনালীর ভেতর রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ। এর ঘাটতিতে হার্ট নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিয়মিত ওমেগা-৩ গ্রহণ করলে আপনি সক্ষম হবেন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে।

https://files.quantummethod.org.bd/resize/700/-/media/image/article/article_image_of_deho_kosher_engine_oil_omega_3_20231022b.png
হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমায় ওমেগা-৩ (ছবিসূত্র- beaumonteh.com)

আধুনিক মানুষদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে রাতে ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, যার অন্যতম কারণ ওমেগা-৩ এর অভাব। ওমেগা-৩ ঘুমকে গভীর করে; ত্বককে সজীব রাখে, উজ্জ্বল ও মসৃণ করে এবং ত্বকের অযাচিত কুঁচকানো ভাব দূর করে।

এছাড়াও লিভার ড্যামেজ, লিভার সিরোসিস বা ফ্যাটি লিভার প্রতিহত হবে যদি আপনার খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ থাকে।

কমায় মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি

লাইফস্টাইল এক্সপার্টদের মতে, ভুল জীবনধারার কারণে শরীরে বেশ কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন হয় যাকে বলে মেটাবলিক সিনড্রোম।

পেটে চর্বি বা মেদভূড়ি, উচ্চ রক্তচাপ, ইনসুলিন রেজিস্টেন্স, উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এইচডিএল কোলেস্টেরল কম থাকা- এই পাঁচ লক্ষণের অন্তত তিনটি যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে আপনি মেটাবলিক সিনড্রোম-এ আক্রান্ত!

মেটাবলিক সিনড্রোম হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পরিমিত পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খেলে আপনি এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে পারবেন।

চোখের সুস্থতাও বাড়ায়

চোখের রেটিনা যেসব কম্পোনেন্ট দিয়ে তৈরি তার একটি হচ্ছে DHA, যা এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের স্বল্পতা হলে DHA-এর স্বল্পতা হয় এবং একটা সময় রেটিনার সমস্যা শুরু হয়। ফলশ্রুতিতে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, এমনকি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে।

https://files.quantummethod.org.bd/resize/700/-/media/image/article/article_image_of_deho_kosher_engine_oil_omega_3_20231022c.png
চোখের সুস্থতায় রয়েছে ওমেগা-থ্রির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা (ছবিসূত্র- stoneycreekeyecare.com)

মাতৃগর্ভে থাকা সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড জরুরী। এটি বাড়ন্ত শিশুর ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট এবং মেধার বিকাশ ঘটায়, যোগাযোগ ও সামাজিক দক্ষতা বাড়ায় এবং অটিজম প্রতিরোধ করে।

যেভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হলো ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ। এই প্রক্রিয়ায় ইমিউন সিস্টেম দেহে ক্ষতিকর উদ্দীপককে সনাক্ত ও দূর করে শরীরকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এটাই যদি ক্রনিক হয়, সারাক্ষণ যদি শরীরে প্রদাহ চলতে থাকে তাহলে আপনার জন্যে তা বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে। কারণ হবে ক্যন্সার, বিশেষত কোলন, প্রোস্টেট এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড দেহে ক্রনিক প্রদাহ প্রতিরোধ করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

কোথায় পাব ওমেগা-৩?

https://files.quantummethod.org.bd/resize/700/-/media/image/article/article_image_of_deho_kosher_engine_oil_omega_3_20231022d.png
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ কিছু খাবার (ছবিসূত্র-www.healthkart.com)

ওমেগা-৩ পাওয়া যায় মাছ এবং মাছের তেল, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে।

অন্যদিকে উদ্ভিদজাতীয় যে খাবারগুলোতে পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো তিসি এবং চিয়া সীড।

বাদামেও আছে প্রচুর ওমেগা-৩। বিশেষ করে আখরোট এবং চীনাবাদামে। এছাড়া সয়াবিন, পালং শাক, ক্যানোলা অয়েল, দুধ এবং পনিরে মিলবে ওমেগা-৩।

কোনটা খাবেন?

বর্তমানে পুষ্টিকর খাবার বলতে আমরা বুঝি মাছ মাংস ডিম দুধ। সে হিসেবে উদ্ভিজ্জ খাবারকে এক প্রকার অবহেলাই করি। তবে আপনি যদি সত্যিই সুস্থ থাকতে চান তাহলে আপনাকে খাবার ব্যালেন্স করতে হবে। এজন্যে ওমেগা-৩ শুধু মাছ থেকে নিতে যাবেন না।

সপ্তাহে চারদিন মাছ খেতে পারেন- দুইদিন ছোট মাছ, দুইদিন বড় মাছ। সামুদ্রিক মাছ এক্ষেত্রে অগ্রাধিকারে রাখুন। বাকি তিনদিনের মধ্যে একদিন মুরগী আর বাকি দুইদিন শুধু শাকসবজি তরি-তরকারি।

এছাড়াও প্রতিদিন বাদাম, তিসি, চিয়া সিড, পালং শাক ও সয়াবিন খান।

এভাবে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে আপনার দেহকোষের ইঞ্জিনগুলো পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ পাবে, ফলে আপনি থাকবেন সুস্থ সতেজ কর্মক্ষম।