published : ১২ অক্টোবর ২০১৬
পরীক্ষা- ১
ধরুন কোনো একটা বিশেষ গাছের পাতায় আপনার এলার্জি আছে। ধরুন সেটা জাপানিজ ল্যাকার ট্রি। যে গাছের কাণ্ডের রস দিয়ে তৈরি কেমিকেল কাঠের তৈজসপত্র ভার্নিশের কাজে ব্যবহার করা হয়। এবার কেউ আপনার চোখটা বেঁধে দিল এবং বলল, আপনার ডানহাতে এই ল্যাকার ট্রির পাতা ঘষে দেয়া হচ্ছে। আর বা হাতে ঘষে দেয়া হচ্ছে চেস্টনাট গাছের পাতা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার ডান হাত ভরে উঠল এলার্জিক র্যাশে। অনুভব করলেন প্রচণ্ড ব্যথা। অন্যদিকে বাঁ হাতে কোনোকিছুই মনে হলো না আপনার।
কিন্তু এরপর যদি জানতে পারেন যে ল্যাকার গাছের পাতাটা আসলে ঘষে দেয়া হয়েছিল আপনার বা হাতে, ডান হাতে নয়, তখন? এটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন আপনি?
পরীক্ষা- ২
আরেকটা পরীক্ষায় পার্কিনসন্স রোগে আক্রান্ত একদল রোগীকে একটি সার্জারি করা হলো। আর এর পরেই দেখা গেল, যে রোগীরা প্রায় চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়েছিল, হারিয়ে ফেলেছিল একটা পেন্সিল ধরার ক্ষমতাও, তারাই এখন চমৎকারভাবে হাঁটছেন, শক্ত হাতে ধরতে পারছেন পেন্সিলসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিসই। মজার ব্যাপার হলো, সার্জারির নামে ডাক্তাররা তাদেরকে আসলে যা করেছিলেন, তা হলো মস্তিষ্কের খুলিতে একটা ছোট ছিদ্র করা এবং তারপর আবার তা বন্ধ করে দেয়া।
অথচ মিছিমিছি এই সার্জারির প্রভাবেই এই রোগীদের মস্তিষ্কে ডোপামাইনের পরিমাণ (পার্কিনসন্স রোগীদের যে নিউরোট্রান্সমিটারটি কমে যায় অস্বাভাবিক রকম) ততটাই বেড়েছে, যতটা বেড়েছে সত্যি সত্যি সার্জারি করা হয়েছে, এমন রোগীদের।
তার মানে ধারণা, আবেগ বা বিশ্বাস- এ বিষয়গুলো শুধু যে ধরাছোঁয়ার বাইরের জিনিস, তা না, এদের সুস্পষ্টরকম শারীরিক প্রভাবও আছে, বিংশ শতকের বিজ্ঞানীদের শত শত গবেষণায় উঠে আসছে সে কথা। যেসব গবেষণার সারকথাই হলো বিষণ্নতা, হতাশা, রাগ- এগুলো স্রেফ কিছু আবেগ নয়। তেমনি নয় মমতা, ভালবাসা বা আশাবাদের মতো অনুভূতিগুলোও। এরা আসলে একেকটা শারীরবৃত্তীয় অবস্থাও, স্বাস্থ্যের ওপর যার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে।
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার তার পাঁচ বছর মেয়াদী নিউরাল ইমিউন প্রোগ্রামে ১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয় মাইন্ড-বডি রিসার্চের জন্যে। অগণিত বেসরকারি উদ্যোগের কথা তো বাদই গেল। হাসপাতালগুলোতে খোলা হচ্ছে মাইন্ড-বডি ক্লিনিকস আর যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ ক্লাস এখন শুধু হেলথ ক্লাবেই সীমাবদ্ধ নেই, বিস্তৃত হয়েছে শপিং মল অবধি। এক সরকারি জরিপে দেখা যায়, ২০০২ সালে আমেরিকার জনগোষ্ঠীর অর্ধেক সংখ্যকই শরীরের সাথে সাথে মনের সুস্থতার জন্যেও কিছু না কিছু করেছে।
হার্ভার্ডের গবেষকরা দেখেন, যোগব্যায়াম, দমচর্চা বা প্রার্থনার মতো কাজগুলোর সময় দেহ শিথিল হয় এবং তখন দেহে প্রচুর নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি হয়, যা কর্টিসলসহ অন্যান্য বিষাক্ত স্ট্রেস হরমোনের ক্ষতিকর প্রভাবকে নাশ করতে সহায়তা করে।
এ বিষয়গুলোকে নিয়েই ২০০৪ সালে নিউজউইক তার ২৭ সেপ্টেম্বর ইস্যুটির প্রচ্ছদ নিবন্ধ করে নিউ সায়েন্স অফ মাইন্ড এন্ড বডি নামে যার মূল উপজীব্য ছিল সুস্থতার ওপর, দেহের ওপর মনের প্রভাব নিয়ে।