ভালো থাকতে চান? তাহলে হাসুন

গুরুজীর লেখাটা পড়েছেন-হাসুন! প্রাণ খুলে হাসুন? পড়লে নিশ্চয়ই জানেন যে ব্যথা কমাতে হাসির জুড়ি মেলা ভার। শুধু তাই না—শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, বাড়তি ক্যালরি পোড়াতে, এমনকি ওজন কমাতেও হাসির রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। তাই আমরা বলি : যারা হাসতে পারেন প্রাণখুলে, হি-হি করে, পেট নাচিয়ে; তারা অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো থাকেন। তবে হাসির এই সমস্ত গুণের কথা কিন্তু কেবল আমরাই বলছি না। সাম্প্রতিককালে অনেক গবেষণায় হাসির উপকারের কথা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

এবছর ১০ মার্চ বিবিসিতে একটা লেখা প্রকাশিত হয় : পায়ের আলসারের জন্যে হাসি হলো সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা। এতে উঠে আসে বেশ কিছু বিস্ময়কর তথ্য। সাধারণভাবে হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে পায়ের আলসারের নিরাময়ে লো-ডোজ আলট্রাসাউন্ড (বিশেষ ধরণের ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের শব্দতরঙ্গ) ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ৩৩৭ জন রোগীর উপর ৫ বছর ধরে পরিচালিত এক সমীক্ষায় লিড্‌স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেন যে বাস্তবে আলসারের নিরাময়ে এই শব্দতরঙ্গের কোনো ভূমিকা নেই। বরং বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে নিয়মিত প্রাণখোলা হাসি পায়ের অসুস্থ অংশে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে আপনার নিরাময়কে অনেকাংশে  করতে পারে।

তবে হাসি যে কেবল শরীরের অসুখেরই নিরাময় করে তা নয়; মনের অসুখের নিরাময়েও এর রয়েছে উল্লেখযোগ্য কার্যকারিতা। মানসিক প্রশান্তি, সৃজনশীলতা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও একটুখানি “হা-হা-হি-হি” অনেকখানি উপকারি। পড়ালেখার ক্ষেত্রেও যারা ছন্দ মিলিয়ে পড়তে বসেন বা মজার কোনো দৃশ্য হিসেবে কল্পনা করেন তারা দীর্ঘদিন লম্বা লম্বা পৃষ্ঠা বা বিশাল-বিশাল তথ্য-পরিসংখ্যান মনে রাখতে পারেন। স্মৃতিশক্তির উপর হাস্যরসের এই প্রভাবকে টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. স্টিফেন স্কিমট্‌ ১৯৯৪ সালে প্রমাণ করেন।

মজার একটা পরিসংখ্যান দিয়ে লেখাটা শেষ করি। প্রিয়জনের জন্মদিন বা বিশেষ দিনগুলো আমাদের খুব ভালো কাটে কেন জানেন? কারণ সেদিনগুলোতে আমরা গড়পড়তা ১৫ বার হাসি। আর স্কুলগামী বাচ্চারা যেখানে-সেখানে যখন-তখন এত আরামসে ঘুমাতে পারে কেন? কারণ তারা দৈনিক ৩০০ বার হাসে। আর এক্কেবারে নিশ্চিন্ত যারা, পৃথিবীর কোনো ঝামেলাই যাদের স্পর্শ করতে পারে না তাদের রহস্যটা কী? রহস্যটা হলো, কোলের শিশুরা কারণে হাসে, অকারণে হাসে, আনন্দে হাসে, দুঃখেও হাসে; এবং হাসে তারা প্রায় ৪০০ বার। অতএব, আপনার জন্যে সুখবর হলো একদম বিনা-খরচে ভালো থাকতে চাইলে নিয়মিত প্রাণখোলা হাসির অভ্যাস করুন। সবাইকে নিয়ে হাসুন বা একা-একাই হাসুন, মিটিমিটি হাসুন কি ঘর কাঁপিয়েই হাসুন, ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসুন অথবা ভুঁড়ি নাচিয়েই হাসুন—ভালো আপনি থাকবেনই।