আই.পি টেলিফোনি শব্দটি কে ২টি ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হচ্ছে আই.পি আরেকটি হচ্ছে টেলিফোনি। এখানে আই.পি বলতে ইন্টারনেট প্রোটকলকে বোঝানো হয়েছে। আর আমরা টেলিফোনি বা টেলিফোন কি তা সবাই জানি। আপনার যদি ইন্টারনেট সংযোগ থাকে তাহলে ইন্টারনেটকে বেজ ধরে আমরা একটা টেলিফোনি সিষ্টেম ব্যবহার করতে পারব। এটাই হচ্ছে আই.পি টেলিফোনি সিষ্টেম। আই.পি টেলিফোনি নেয়ার জন্যে আমাদেরকে নতুন করে ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার বাসায়, অফিসে বা মোবাইলে যে ইন্টারনেট সংযোগ আছে সেটা ব্যবহার করেই এই টেলিফোনি সিষ্টেম চালু করতে পারবেন।
আপনার কাছে যদি ইন্টারনেট সংযোগ থাকে, তাহলে যারা আই.পি টেলিফোনি প্রোভাইড করে তাদের কাছ থেকে আমরা আই.পি টেলিফোনি সংযোগ নিতে পারি আগের ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েই। এরকম বাংলাদেশ সরকার থেকে অনুমদিত ২৯ টি কোম্পানি আছে যারা আই.পি টেলিফোনি প্রোভাইড করে। এই সংযোগ নিতে কিছু নিয়ম মানতে হয়-
১. ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।
২. ২ কপি ছবি লাগবে।
৩. ন্যাশনাল/ ভোটার আই.ডি কার্ডের ফটোকপি।
৪. রেজিস্টেশন র্ফম পূরণ করতে হবে (মোবাইলের সিম কেনার সময় আমরা যে রকম ফর্ম পূরণ করি সে রকম একটি ফর্ম)
১. IP telephony solution for Corporate. ( আই.পি. টেলিফোনি করপোরেট লেভেলে বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এবং এর পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানে জন সংযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আই.পি. টেলিফোনি ব্যবহার করছে বিভিন্ন ব্যাংক, করপোরেট অফিস এবং এই টেলিফোনি সিস্টেম ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতাল e-medical service এর মাধ্যমে। কল সেন্টারগুলোও এই সিস্টেম চালু করেছে। )
নিচের ছবি থেকে আমরা জানতে পারব কিভাবে একটি করপোরেট কল সেন্টার আই.পি. ফোন দিয়ে কাজ করবে—
নিচের ছবি থেকে আমরা বুঝতে পারব কিভাবে নিজেদের অফিসগুলোর মধ্যে আই.পি. ফোন ব্যবহার করা যায় যেখানে কিনা সেট-আপ খরচ ছাড়া আর কোন খরচ নেই।
২. IP telephony solution for retails.(individual usage purpose, কিন্তু এই সার্ভিসটি বর্তমানে বাংলাদেশে দেয়া হয় না) ৩. Hosted solution. (এখানে আই.পি ফোন নেয়া হয় শুধু ইন্টানেট দিয়ে ব্যবহার করার জন্যে, এখানে কোন ইনফ্রাস্টাকচার নেয়া লাগে না। এই সিস্টেম ব্যবহার করে সাধারণত সেই সব প্রতিষ্ঠান যাদের নিজস্ব কোন নেটওয়ার্ক সিস্টেম নেই ও তাদের network settings and maintenance করে দেয় আই.পি. টেলিফোনি প্রোভাইডাররাই এবং তারা শুধু ফোনের মাধ্যমে আই.পি. টেলিফোনি সিস্টেম ব্যবহার করে। )
১. Customized solution (অর্থাৎ আপনি আপনার টেলিফোন সিষ্টেমকে যে-ভাবে ব্যবহার করতে চান সেভাবে ব্যবহার করতে পারবেন)
২. Flexible system (অনেকগুলো লাইন একটি ফোন দিয়েই ব্যবহার করা যায়)
৩. Full control access (এই সিস্টেমে নিজস্ব Administrative control panel থাকে। ফলে সব ধরনের সার্ভিসগুলো সেখান থেকে সুন্দরভাবে কন্ট্রোল করা যায়। )
৪. Easy maintenance (নিজস্ব নেটওয়ার্ক সিস্টেম থাকলে তার maintenance করলেই এই সার্ভিসের maintenance করা হয়ে যায়। আর যদি সার্ভিসটি Hosted solution হয় তাহলে তো maintenance এর প্রয়োজনই নেই।)
৫. More Secured system (নিজের ইন্টারনেট নেটওর্য়াকের সিকিউরিটি ও অপারেটরের সিকিউরিটি মিলে হলো এর সিকিউরিটি। তাই এই সিকিউরিটি যে কোন টেলিফোন সিস্টেম থেকে বেশি নিরাপদ)
৬. VAS (value added service) availability & accessibility. (মোবাইলে কথা বলা ছাড়াও যে যে সার্ভিস আমরা পেয়ে থাকি সেগুলোই আমরা আই.পি. টেলিফোনি সেট-আপের সময়ই নিয়ে নিতে পারি। ফলে সেট-আপ এর খরচ দিয়েই আমরা এই সার্ভিসগুলো পেতে পারি যার জন্যে পরে আমাদেরকে বাড়তি কোন খরচ করতে হবে না। )
৭. Low cost & Cost effective (যোগাযোগের যতগুলো মাধ্যম আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কম খরচ হয় আই.পি টেলিফোনি ব্যবস্থায়। এখানে এক আই.পি. ফোন থেকে অন্য আই.পি. ফোনে কল করলে কোন টাকা খরচ হয় না, শুধু অন্য ফোন অর্থাৎ মোবাইল, ল্যান্ড ফোন প্রভৃতিতে কল করলে ঐ সকল ফোনের সাধারণ চার্জ থেকে কম টাকা খরচ হয়। এখানে লাইন রেটও কম। )
নিচের ছবি থেকে আমরা দেখতে পাব একটি অফিসে কিভাবে আই.পি. টেলিফোনি ব্যবহৃত হচ্ছে:
উপরের ছবি থেকে আমরা বুঝতে পারব কিভাবে সার্ভার থেকে ভয়েস মেসেজ আমরা এক সাথে অনেককে ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে পৌছে দিতে পারব।
৮. Voice call: সাধারণত BTCL ব্যবহার করে বাসায় যেরকম সেটে কথা বলা হয় ঠিক সেরকম সেটেও আই.পি টেলিফোনি ব্যবহার করা যাবে। ট্যাডিশনাল PABX তেও ব্যবহার করা যায়। 3G এর মত খুব সহজেই video call করা যায় যদি আপনার কাছে আই.পি টেলিফোন থাকে এরজন্যে two end এ video phone থাকতে হবে। এসকল কারণে e-medical service এবং video conferencing ক্ষেত্রে এই সার্ভিসটি অনেক জনপ্রিয়।
৯. Conferencing system: আই.পি. ফোনের কনফারেন্স ক্ষমতা যে কোন ফোনের থেকে বেশি। যেমন: এক সাথে ১০,০০০ জন মানুষ কনফারেন্স করতে পারবে এই টেলিফোনি সিস্টেম ব্যবহার করে।
১০. নিজের নেটওর্য়াকের ভেতরে যেকোনো জায়গা থেকে কমিউনিকেশন অনেক সহজ এবং এটা অনেকটা কুইক ডায়েলিং এর মত। এই সার্ভিসটি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রন করা যায় যেমন ইন্টার্নাল কমিউনিকেশন চাইলে রেকর্ড করে রাখা যাবে যা ভবিষ্যতে অফিশিয়াল কাজে ব্যবহার করা যাবে এবং এই রেকর্ড শুধু নিজের কাছেই থাকছে এবং নিজের নেটওর্য়াকের মধ্যেই এটা থাকার কারণে ইনফরমেশন পাচার হওয়ার সুযোগ থাকছে না।
১১. ফ্যাক্সকে আমরা ইমেইল হিসেবে রিসিভ করতে পারি আই.পি ফোন এর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে আমাদের ফ্যাক্স মেশিন থাকার প্রয়োজন নেই।
১২. মোবাইলে একজনকে শুধু কল ওয়েটিং এ রাখা যায় কিন্তু আই.পি ফোনে একসাথে unlimited person কল ওয়েটিং এ রাখা যায়। তাছাড়া অনেকগুলো কলকে একসাথে রিসিভ করা যায়। এমন কি লিস্ট ধরে একবারে ফোন দেয়া যায় যেখানে প্রত্যককে আলাদা করে কল করার দরকার নেই। এর ফলে যোগাযোগ করা অনেক সহজ এই সিস্টমে।
১৩. মোবাইলে যে রকম এস.এম.এস. পাঠানো যায় তেমনি আই.পি. ফোনে আমরা ভয়েস রেকর্ড করে একবারে অনেককে এক সাথে পাঠাতে পারি যা সময় বাঁচায় এবং মেসেজের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে। পরিশেষে আই.পি. টেলিফোনি বর্তমানের প্রযুক্তির একটি সুন্দর উৎকর্ষ। সবশেষে বলা যায়, এই সিস্টেম অনেক কম খরচে যোগাযোগকে অনেক সহজ এবং নিরাপদ করেছে।