আপনার মোবাইল ফোনটি কি সুরক্ষিত?

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (FTC) এডভাইস ব্যুরো থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, অনলাইনে আপনার অর্থ, ব্যক্তিগত তথ্য বা উভয়ই হাতিয়ে নিতে প্রতারকেরা প্রতিমুহূর্তে তৎপর। ইমেইল, বিজ্ঞাপন, Google Play Store এমনকি মেসেজের মাধ্যমেও স্মার্টফোনে ক্ষতিকর সফটওয়ার (Malware) প্রবেশ করানো হচ্ছে। প্রতিনিয়তই হ্যাকিং এর শিকার হচ্ছেন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা। এতে তাদের অনেক গোপন তথ্য নিজেদের অজান্তেই চলে যাচ্ছে হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে। 

এমন অনাকাক্ষিত পরিস্থিতিতে পরতে না চাইলে এখনই আপনার ফোনে কিছু পরিবর্তন আনুন। এজন্যে জেনে নিন স্মার্টফোন নিরাপদ রাখার কিছু টিপস অ্যান্ড ট্রিকস- 

১. স্ক্রিন লক ব্যবহার করুন

প্রতিটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনে নিরাপত্তা হিসেবে স্ক্রিন লক করার সুবিধা রয়েছে। পিন, পাসওয়ার্ড কিংবা প্যাটার্ন লক পদ্ধতির মাধ্যমে আপনার ফোনটিকে লক করে রাখতে পারেন। 

অ্যান্ড্রয়েডের সিকিউরিটি সেটিংসে গিয়ে লক সক্রিয় করা যায়। স্বয়ংক্রিয় বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর লক করার সুবিধাটিও সেট করা যায়।

২. ডিভাইস এনক্রিপ্ট করুন

ফোনের ডাটা এনক্রিপ্ট করার সুবিধা দেয় অ্যান্ড্রয়েড। কাজটি করা যায় অ্যান্ড্রয়েডের সিকিউরিটি সেটিংস থেকে। ডাটা এনক্রিপশন চালু থাকলে মোবাইল বা ট্যাব প্রতিবার চালু করার সময় ডাটা বা তথ্যে ঢুকতে আলাদা করে পাসওয়ার্ড ও পিন দিতে হয়। ফলে ফোন যদি দুর্বৃত্তের হাতে পরেও, পিন বা পাসওয়ার্ড ছাড়া তথ্য চুরি করতে পারবে না। 

৩. অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ম্যানেজার সচল করুন

আপনার ফোনে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ম্যানেজার ফিচারটি সচল থাকলে মোবাইল ফোন যদি বেহাত হয়েও যায় তাহলেও আপনি আপনার ফোনটিকে গুগল ম্যাপে ট্র্যাক করতে পারবেন। এমনকি দূর থেকেই পারবেন ফোনের সব তথ্য মুছে দিতে। 

ফোনে ডিভাইস ম্যানেজার ফিচার চালু রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে Settings থেকে Security-তে যেতে হবে। এরপর Device Administrator থেকে আপনি ডিভাইস ম্যানেজার চালু করতে পারবেন। 

৪. মেমরি কার্ডে স্পর্শকাতর তথ্য রাখবেন না

আপনার মোবাইলের এসডি কার্ডে ব্যক্তিগত কিংবা আর্থিক তথ্য সেভ রাখার বিষয়ে সতর্ক থাকুন। এসডি কার্ডের তথ্য মুছে ফেলা এবং হাতিয়ে নেওয়া সহজ। কাজেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণে এসডি কার্ডে ভরসা না করাই ভালো। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ যদি করতেই হয় তবে তা ইন্টারনাল মেমোরিতেই করুন। 

৫. যেখান সেখান থেকে অ্যাপ ডাউনলোড নয়

অপিরিচিতি কোনো উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ হলো অ্যাপ তথা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ডাউনলোড করুন উৎস নিশ্চিত হয়ে এবং পরিচিত প্ল্যাটফর্ম থেকে। অ্যান্ড্রয়েডের জন্য কেবল গুগল প্লে স্টোরের অ্যাপসই ডাউনলোড করুন। 

৬. ইন্টারনেট ব্রাউজ করুন ছদ্মবেশে

অ্যান্ড্রয়েড ফোন বা ট্যাব থেকে ইন্টারনেট ব্রাউজ করুন ছদ্মবেশে (Incognito)। যদি গুগল ক্রোম দিয়ে ব্রাউজ করেন তবে অবশ্যই গুগল অ্যাকাউন্ট থেকে সাইন আউট হয়ে ব্রাউজ করবেন। আপনার ডিভাইসটি যদি একাধিকজন ব্যবহার করেন তবে ইনকগনিটো মোড বা পরিচয় গোপন রেখে ব্রাউজ করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।   

৭. সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখুন

গুগল নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট উন্মুক্ত করে, যার মধ্যে বেশ কিছু নিরাপত্তা প্যাচ দেওয়া থাকে। ডিভাইস সেটিংস থেকে সফটওয়্যার আপডেটের বিষয়টি দেখে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও, সেটিংসের About Device মেনু থেকে সিস্টেম আপডেট চেক করে তা হালাদনাগাদ করুন।

৮. 2-Factor Authenticate চালু করুন

মেইল বা অন্য কোনো অ্যাপ হ্যাক করলেও 2-Factor Authentication চালু থাকলে ফোনে সহজে এক্সেস পাবে না কেউ৷ 

অনেকে মনে করেন টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনে সময় বেশি নেয়। আসলে এমন কিছু নয়। বরং টু ফ্যাক্টরে এখন আরও নতুন ও দ্রুত সুবিধাও রয়েছে। 

৯. পাসওয়ার্ড হোক অনন্য

কঠিন ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ড upper case (বড় হাতের অক্ষর), lower case (ছোট হাতের অক্ষর), alphanumeric (অক্ষর এবং সংখ্যার মিশেল) এবং special character (@, #, $ ইত্যাদি বিশেষ চিহ্ন)-এর সন্নিবেশনে হলে তা শক্তিশালী পাসওয়ার্ড হবে এবং আপনার ডিভাইস হ্যাক করা হবে খুব কঠিন। 

তবে পাসওয়ার্ডে নিজের নাম, স্পর্শকাতর তথ্য, ইন্টারনেট ব্যাংকিং পাসওয়ার্ড বা PIN ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় পাসওয়ার্ড সহজেই হ্যাক হতে পারে বা আপনার আর্থিক তথ্য বেহাত হয়ে আপনি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।