published : ২১ আগস্ট ২০২৫
কোয়ান্টাম মেথড হলো সুস্থতা, সাফল্য ও সুখের ২৮টি সূত্রে গাঁথা একটি টুলবক্স, কম্প্যাক্ট সুইস নাইফের মতোই যা জীবনকে সুন্দর করার জন্যে যে-কোনো সময়, যে-কোনো প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে। মেডিটেশনের এত বহুমুখী ব্যবহারের কথা কোয়ান্টাম বলছে প্রায় ৩ দশক ধরে।
২৯ নভেম্বর ২০২৪ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে ২১ ডিসেম্বরকে ঘোষণা করা হয় বিশ্ব মেডিটেশন দিবস। শারীরিক মানসিক ও আবেগিকভাবে ভালো থাকার জন্যে মেডিটেশন চর্চার গুরুত্বেরই এ এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
এই ঘোষণার আগেই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ২০২৫ সালকে ঘোষণা করে ‘দ্য ইয়ার অব মেডিটেশন’। এরই প্রেক্ষিতে এই সিরিজ আর্টিকেল, যা মূলত কোয়ান্টাম মেথড বইয়ের আলোচনাগুলোর অ্যাডাপ্টেশন।
………………………………………………………………………………………………..
কথাটা শুনেছেন না, “বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়”! প্রবাদটি এসেছে বাংলার প্রাচীন এক উপকথা থেকে।
জঙ্গলের মাঝে গভীর তপস্যায় নিমগ্ন এক যুবক। চারপাশে সাপ, বিচ্ছু, হিংস্র জীবজন্তু। কিন্তু সেসবে যুবকের বিকার নেই। তার সব ধ্যানজ্ঞান নীরব সাধনায়। তার দীর্ঘ সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে ঈশ্বর তাকে বর দেন, সে যা ভাববে, তা-ই হবে।
খুশিতে আত্মহারা যুবক ভাবল এই গহীন জঙ্গলে সোনার এক বিশাল প্রাসাদ চাই। সাথে সাথে প্রাসাদ হয়ে গেল। আনন্দে উদ্বেলিত যুবক প্রাসাদে ঘুরতে ঘুরতে ভাবল, ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে, অনেকদিন ভালোমন্দ খাওয়া হয় নি! মনে মনে সুস্বাদু সব খাবারের কথা ভাবল সে। ভাবামাত্র সোনার থালায় সেসব খাবার তার সামনে হাজির! পেটপুরে সব খেয়ে যুবক তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সোনার পালঙ্কে এলিয়ে দিল শরীর।
বেলাশেষে দিনের আলো পড়ে এসেছে। সন্ধ্যার অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ যুবকের মনে হলো, এই ঘন জঙ্গলে তো সে একা! এখন যদি একটা বাঘ এসে আমাকে খেয়ে ফেলে! ব্যস, তা-ই হলো! তৎক্ষণাৎ একটা বাঘ এলো এবং তাকে খেয়ে ফেলল। তার বছরের পর বছর করা সাধনার নেট রেজাল্ট বাঘের পেটে যাওয়া।
ওই যে, যুবক বর পেয়েছিল যা ভাববে তাই হবে! আসলে বর পেলেও সে ভয়কে জয় করতে পারে নি। যদি পারত তাহলে সে নিজেকে নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা চিন্তা করত না, ভয় পেত না।
আসলে গল্পটা রূপক, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত শিক্ষা চিরন্তন।
আমাদের মনের ভেতরে অবদমিত থাকে নানা প্রকার ভয়। আমরা সচেতনভাবে এসব হয়ত ভুলে থাকি, কিন্তু যথোচিত পরিস্থিতিতে ভয়টা খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসে সচেতন ভাবনার স্তরে। আর মস্তিষ্ক সেই ভাবনাকে বাস্তব রূপ দেয়, সেটা আপনার জন্যে ক্ষতিকর কিনা তা বিচার-বিবেচনা ছাড়াই।
অতএব বুঝতেই পারছেন, ভাবনা কী বিরাট শক্তি! ভাবনাই নতুন বাস্তবতা তৈরি করে। সেই বাস্তবতা আপনার জন্যে কল্যাণকর হবে, নাকি ক্ষতিকর তা নির্ভর করছে আপনার ভাবনা ইতিবাচক না নেতিবাচক তার ওপর।
বৃষ্টিতে একটু ভিজলেই জ্বর আসে- দেখেছেন না এমন অনেককে? এর কারণ নেতিচিন্তার মনোদৈহিক প্রকাশ।
ব্যাপারটাকে আরেকটু খোলাসা করা যাক। যারা পরিবারের খুব আদরের সন্তান, ছোটবেলা থেকেই বাবা মায়ের কাছে তারা শুনতে শুনতে বড় হয়- বৃষ্টিতে ভিজিস না, জ্বর হবে। শুনতে শুনতে তার ভেতর প্রোগ্রাম সেট হয়ে গেছে, বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হয়। ফলে বৃষ্টিতে একটু ভিজলেই জ্বর-সর্দি লাগিয়ে বসে তারা। কারণটা বৃষ্টি না, কারণটা তাদের মনের নেগেটিভ প্রোগ্রাম। দেহের একটি স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও বারবার নেতিবাচক চিন্তা ও কথার প্রভাব এই ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়।
আসলে বৃষ্টির কেমিকেল গঠনে এমন কিছুই পাওয়া যায় নি যার সাথে জ্বরের সরাসরি সংযোগ আছে। যদি থাকতই তাহলে কৃষক রিকশাচালক দিনমজুরেরা, যারা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কাজ করে, বছরের একটা উল্লেখযোগ্য সময় তারা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকত। কিন্তু তা তো হয় না!
কাঁচা/পাকা তেঁতুল কিংবা ক্ষুধার্ত অবস্থায় মজার মজার খাবারের কথা ভাবলেই কি আপনার মুখে জল আসে? নিশ্চয়ই আসে, আপনার মতো সবারই আসে। অথচ সামনে কিন্তু তেঁতুল বা খাবার কোনোটাই নেই!
আবার খাবার নিয়ে নেতিবাচক মজা করলে অনেকের শারীরিক প্রতিক্রিয়া হয় বমি বমি ভাব, অস্বস্তিকর অনুভূতি। এই দুইক্ষেত্রেই কারণ হলো ভাবনার ফলে শারীরিক প্রতিক্রিয়া। আমাদের মস্তিষ্ক কল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। ফলে যা কিছু ভাবনার জগতে থাকে তার কল্পনা যদি জোরদার হয় তাহলে মস্তিষ্ক সেটাকেই বাস্তব ধরে নিয়ে সেই বাস্তবতা তৈরিতে লেগে যায়।
এটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বাবা মা ও সন্তানের ক্ষেত্রে। অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের প্রতি রাগ বা হতাশা প্রকাশ করতে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করেন- "তোর দ্বারা কিছু হবে না," "তুই অকর্মণ্য" ইত্যাদি। এমন অনেক ‘অকর্মণ্য’ বা ব্যর্থকে আপনি পাবেন যারা ছোটবেলা থেকেই এসব শুনতে শুনতে বড় হয়েছে। আর এই নেতিকথাগুলো তাদের মধ্যে নিজেদের অক্ষমতার একটি গভীর ধারণা তৈরি করেছে। বাস্তবতাও তৈরি হয়েছে সেভাবেই।
আসলে নেতিবাচক চিন্তা এবং ভয় আমাদের জীবনের উন্নতির পথে বড় বাধা। এগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজন সচেতনতা এবং ইতিবাচকতার চর্চা।
এই বিষয়টি নিয়ে আরো জানতে এবং নেতিচিন্তা ও ভয়ের প্রভাব দূর করতে কোয়ান্টাম মেথড বইয়ের ‘মনের বাঘ : ভয় ও নেতিকথা’ চ্যাপ্টারটি পড়ুন।