জীবনের শ্রমানন্দ দর্শন

পৃথিবীর সব সফল মানুষদের মধ্যে একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো তারা প্রত্যেকে জীবনে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। বড় হওয়ার ক্ষেত্রে এই কথাটাই শতভাগ খাঁটি যে- সাফল্যের কোনো শর্টকাট নেই। প্রচুর মেধা নিয়েও অনেকে হারিয়ে গেছেন, কারণ যথেষ্ট পরিশ্রম তারা করেন নি। আবার খুব সাধারণ অবস্থা থেকেও অনেকে কালজয়ী হয়েছেন কেবল অধ্যবসায় আর কাজের কারণে। এজন্যে বলা হয়: Genius is 99% perspiration, 1% inspiration.

তাই কখনও কাজ করতে পিছপা হবেন না। সেটা পরীক্ষার প্রস্তুতি হোক, চাকরির এসাইনমেন্ট বা প্রতিদিনের ঘরোয়া কাজই হোক। অবশ্য দৈনন্দিন জীবন বেশিরভাগ চিন্তাশীল মানুষের জন্যেই যুগে যুগে ছিল এক ক্লান্তিকর বিড়ম্বনা। এক শিষ্য গুরুর কাছে বললেন, “এই ভাত খাওয়া-গোসল করা-কাপড় পরা-সংসার করা- এই একঘেয়েমি থেকে মুক্তি চাই”। গুরু বললেন, “ভাত খাও-গোসল কর-কাপড় পর-সংসার কর”। কিছুদিন পর শিষ্য আবার আর্তি জানালেন; কিন্তু গুরুর সেই একই জবাব। গুরু বাণীর এই মর্মার্থ উপলব্ধি করতে শিষ্যের লেগেছিল এক যুগ। ১২ বছর পর তিনি বুঝেছিলেন, যান্ত্রিকতার স্বয়ংচালিত ক্রিয়ার মত কাজ করে যাওয়ার ফলেই প্রাত্যহিক কাজে একঘেয়েমি চলে আসে। দিনের প্রতিটি কাজের সাথে মনকে একাত্ম করতে পারলে, মনোযোগ নিবদ্ধ করতে পারলে এই একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিটি কাজই তখন হয়ে উঠে আনন্দের উৎস। পরিশ্রম তখন হয়ে উঠে শ্রমানন্দ।

তাই অতীত বা ভবিষ্যত নয়, মনকে নিয়ে আসুন বর্তমানে। যা হতে চান সেই ছবিটা সবসময় মনের মধ্যে থাকবে, কিন্তু মনকে তা অশান্ত করবে না। দেখবেন বড় কোনো লক্ষ্য সামনে নিয়ে যখন কাজে নামবেন- কাজই তখন আপনাকে আনন্দ দিবে। প্রতিটি কাজই মনে হবে এক নতুন জগত, এক নতুন জীবন, এক নতুন আনন্দলোক। প্রতিবারের প্রার্থনা আপনাকে পুলকিত করবে, প্রতিদিনের আলাপচারিতা আপনাকে মুগ্ধ করবে, প্রতিটি চাওয়া পরিণত হবে পাওয়ায়। আপনার পুরোনো ‘আমি’র জায়গায় স্থান করে নেবে নতুন আলোকিত ‘আমি’।

অতএব কাজে নেমে পড়ুন। সকালে উঠে আজকের করণীয় ৫/৬টি কাজের তালিকা করে ফেলুন। দিনে যখনই সময় পান এতে চোখ বুলান। মনে রাখবেন কোনো কাজ যেন বাদ না যায়। আস্তে আস্তে কাজের তালিকা বড় করুন। একসময় নিজের কর্মব্যস্ততা দেখে নিজেই অবাক হবেন। আপনি লাভ করবেন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন।