published : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভালো থাকতে কে না চায়! তবে এমনি এমনি ভালো থাকা যায় না। ভালো থাকা হলো একটি প্রক্রিয়া। ভালো থাকতে হলে আপনাকে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
আমাদের এই অটোসাজেশনটি নিশ্চয়ই শুনেছেন- ভালো ভাবব, ভালো বলব, ভালো করব, ভালো থাকব! এই অটোসাজেশনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভালো থাকার প্রক্রিয়া। আর তা হলো ভালো ভাবা, ভালো বলা এবং ভালো কাজ করা।
এই তিনটি যখন করবেন তখন প্রাকৃতিক নিয়মেই আপনি ভালো থাকবেন।
আপনি যদি অনুসন্ধিৎসু মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্যে একটি টেস্ট: দুজন মানুষের সাথে কথা বলুন- একজন সফল সুখী পরিতৃপ্ত মানুষ, আরেকজন ব্যর্থ হতাশ অসুখী মানুষ। মোটাদাগে এমন দুজন মানুষ আপনি কাছেপিঠেই পাবেন। এখন আপনার কাজ হবে তাদের ভাবনাচিন্তার গতিপ্রকৃতি খেয়াল করা।
একটু গভীরে ঢুকলেই আপনি দেখতে পাবেন এই দুজনের একটা বড় পার্থক্য আছে তাদের চিন্তাজগতে।
যিনি সফল সুখী পরিতৃপ্ত তার চিন্তাধারা সবসময় ইতিবাচক। আশাবাদী মানুষ তিনি। হতাশা বা নেতিবাচকতা মনে আসলেও তারা সেগুলোকে গেঁড়ে বসতে দেন না। বিশ্বাস রাখেন নিজের সম্ভাবনার ওপর।
আর যিনি ব্যর্থ হতাশা অসুখী তার মনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে হতাশা, নেতিবাচকতা। পৃথিবীকে তিনি দেখেন ঘোলাটে নোংরা লেন্সের মধ্য দিয়ে। হবে না, পাবো না, সম্ভব না, আমাকে দিয়ে কিছু হবে না- এই চিন্তাগুলো তাদের মনোজগত দখল করে রাখে। ফলে আশাবাদ উঁকি দিয়েও থাকার জায়গা না পেয়ে চলে যায়।
আলবার্ট আইনস্টাইন শুধুমাত্র খ্যাতিমান বিজ্ঞানী-ই নন, ছিলেন বড়মাপের দার্শনিকও। তার একটি বিখ্যাত উক্তি-
Imagination is everything. It is the preview of life’s coming attractions. Imagination is more important than knowledge.
অর্থাৎ, কল্পনা বা চিন্তাভাবনাই সবকিছু। জীবনে কী ঘটতে চলেছে তা ভাবনা দ্বারাই নির্ধারিত হয়ে যায়। ভাবনা জ্ঞানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
ভাবনাই বাস্তবতা নির্মাণ করে। আপনি যেমন থাকতে চান, নিজেকে যেভাবে দেখতে চান, নিজেকে সেভাবেই ভাবুন।
আসলে আজকের এই সমাজ সভ্যতার যা কিছু আমরা দেখছি, উপভোগ করছি তার শুরুটা হয়েছিল ভাবনার মধ্য দিয়ে। আবার যে দুর্ভোগগুলো আমরা পোহাচ্ছি তাও আমাদের ভাবনারই ফলশ্রুতি।
ভাবনাই বাস্তবতাকে আকৃষ্ট করে। ভালো ভাবনা, ইতিবাচক ভাবনা ভালো বাস্তবতা নির্মাণ করে। আর খারাপ ভাবনা, নেতিবাচক ভাবনা নিয়ে আসে খারাপ বাস্তবতা। কথাটি ব্যক্তির পাশাপাশি প্রযোজ্য পরিবার, সমাজ এমনকি দেশের ক্ষেত্রেও।
ভালো ভাবনা বাস্তবায়নের জন্যে প্রয়োজন ভাবনাগুলো প্রকাশ করা। আমাদের ভালো ভাবনাগুলো যখন প্রকাশিত হবে তখন সেগুলো প্রাণ পাবে, বিকশিত হবে। আরো বেশি সংখ্যক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাবে। ব্যক্তির ভাবনা তখন সম্মিলিত ভাবনায় পরিণত হবে। তাই ভালো ভাবার পাশাপাশি ভালো বলতে হবে।
আসলে কথা এক বিরাট শক্তি। কথার মধ্য দিয়ে শক্তি সঞ্চারিত হয়। ভালো কথা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় সূরা ইব্রাহিমের ২৪নং আয়াত থেকে, যেখানে আল্লাহ্ বলছেন,
একটি ভালো কথা এমন একটি ভালো গাছের মতো, যার শিকড় রয়েছে মাটির গভীরে আর শাখাপ্রশাখার বিস্তার দিগন্তব্যাপী, যা সারাবছর ফল দিয়ে যায় প্রতিপালকের নির্দেশে।
আমাদের ভালো বা মন্দ থাকার পেছনে আমাদের কথার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। উদাহরণ চাই?
একজন প্রাথমিক শিক্ষক এবং একজন রিকশাচালকের কথাই ধরুন। শহরের একজন রিকশাচালকের আয় স্কুল শিক্ষকের চেয়ে বেশি। কিন্তু যতটা শান্তি শিক্ষকের ঘরে আছে ততটা কি রিকশাচালকের ঘরে আছে? অনেক ক্ষেত্রেই নেই। কারণ সাধারণত রিকশাচালকের ঘরে গালিগালাজ একটু বেশিই হয়ে থাকে। যার প্রভাব পড়ে পরিবারে।
তাই বাজে কথা বলবেন না, গালিগালাজ করবেন না। নিজেকে বা অন্যকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলবেন না; দেশ নিয়ে তো নয়ই। যদি এই অভ্যাসগুলো আপনার মধ্যে থেকে থাকে তাহলে বাদ দিয়ে দেখুন আপনি আগের চেয়ে কতটা ভালো থাকছেন!
আপনার কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় আপনার ভাবনা। আবার কথার সাথে কাজের মিল না থাকলে কথা হয়ে যায় অর্থহীন। তাই ভাবা ও বলার সাথে সাথে কাজও ভালো হতে হবে। ভালো করার মধ্য দিয়ে আপনি ভালো থাকতে পারবেন।
অনেক বড় মাপের কল্যাণকর কাজই ভালো কাজ না; ছোট ছোট কাজও ভালো কাজ হতে পারে যদি তার মধ্যে অন্যের বা নিজের কল্যাণ থাকে। নিজের কল্যাণে যা করবেন সেটার সরাসরি উপকার আপনি পাবেন। আর কাজটা যদি অপরের কল্যাণে হয় তাহলে তার কাছ থেকে উপকার পান বা না পান, উপকার পাবেন প্রকৃতি থেকে। দৃশ্যমানভাবে হয়ত এমন কারো কাছ থেকে যাকে আপনি কখনো দেখেন না, কখনো দেখবেনও না।
আসলে কর্মছাড়া ভাবনা বাস্তবায়ন হয় না। তাই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। পরিকল্পিতভাবে ভাবনার অনুকূলে কাজ করুন। সুদিন আসবেই!
ব্যক্তি ‘আমি’র মতো দেশের ভালো থাকার সূত্রও একই- ভালো ভাবা, বলা ও করা। দেশ নিয়ে যদি আমরা সবাই ভালো ভাবি, ভালো বলি এবং ভালো করি, মানে নিজেদের কাজগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে করি তাহলেই ভালো থাকবে দেশ। হবে স্বর্গভূমি বাংলাদেশ।