করোনার এই সময়ে আপনি কতটা সমমর্মী - কুইজ

একটি গল্প

ধনবান এক নারী। বাবা ছিলেন দেশের শীর্ষ ধনীদের একজন। স্বামীও তাই।

স্বামী মারা গেছেন আজ বছর কয়েক হলো। সন্তানরাও এখন আর তার সাথে থাকে না। সবাই যার যার মতো ব্যস্ত। মায়ের কাছে থাকবার সময় তাদের নেই।

স্বামী প্রচুর অর্থবিত্ত রেখে গিয়েছিলেন। আরাম-আয়েশ, বিলাস-ব্যসনের কোনো অভাব নেই।

কিন্তু নারীর মনে সুখ নেই। মন খুলে কথা বলার কেউ নেই। মমতা নিয়ে একটু ছুঁয়ে দেখার কেউ নেই। সবাই তো হুকুমের দাস অধীনস্থ! সুখ-দুঃখের কথা কি ওদের সাথে শেয়ার করা যায়?

প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে একদিন তিনি গেলেন শহরের সেরা মনস্তত্ত্ববিদের কাছে। চিকিৎসক সব শুনে বললেন, ঠিকাছে আপনার প্রেসক্রিপশনটা একটু পরে লিখছি।

তার আগে আপনি আমাদের হাসপাতালের একজন স্বেচ্ছাসেবীর গল্প শুনুন।

বলে তিনি এক নারী স্বেচ্ছাসেবীকে ডেকে দিলেন পঞ্চাশোর্ধ বয়সেও যিনি তার হাসপাতালের সবচেয়ে পরিশ্রমী এবং নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবী।

মহিলা এসে তার কাহিনী বলতে শুরু করলেন।

একটাই ছেলে ছিল আমার। স্বামী মারা যাওয়ার পর এ ছেলেকে আঁকড়েই বাঁচতে চেয়েছিলাম। অনেক কষ্টে তাকে বড় করি। যুবক হলো। লেখাপড়া শিখে প্রাইভেট একটা অফিসে চাকরিও নিল। ছেলেকে বিয়ে করাবার জন্যে বৌ খুঁজছিলাম।

এমনি সময় একদিন অফিসের কাজে শহরের বাইরে একটা সাইটে যেতে গিয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় আমার ছেলে।

শুনে সেই যে আমি জ্ঞান হারাই, জ্ঞান ফেরে সাতদিন পর।

কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর মনে হলো আমি কেন বেঁচে থাকলাম! স্বামী নেই, সন্তান নেই। এ বয়সে আমি আর কী জন্যে বেঁচে থাকব! এত বিষণ্নতা ভর করল আমার ওপর যে খেতে ভাল লাগত না। কোনো কাজ করতে ভাল লাগত না। সারাদিন শুধু একটা ঘরে শুয়েই থাকতাম আমি।

একদিন বাজারে যেতে বাধ্য হলাম, কারণ বহুদিন ধরে ঘরে খাওয়ার তেমন কিছু ছিল না। বাজার করতে, রান্নাবান্না করতেও আমার ভাল লাগত না।

তো বাজার থেকে ফেরার সময় হঠাৎ শুনি আবর্জনার স্তুপের ভেতর থেকে একটি বেড়াল ছানার মিউ মিউ ডাক। কাছে যেতে দেখি আবর্জনার মধ্যে রাখা একটা ভাঙা টিনের কৌটায় লেগে বেড়ালটার পা কেটে গেছে।

রক্ত পড়ছে দর দর করে। আহত পা নিয়ে ছানাটা কৌটাটাকে ছাড়াতেও পারছে না।

সাথে সাথে আমি কাছে গিয়ে ছানাটাকে তুলে নিলাম। বাড়িতে নিয়ে এলাম। আমার প্রতিবেশী ছিলেন একজন পশু চিকিৎসক। তার কাছে বেড়ালটাকে নিয়ে গেলাম। তিনি কিছু ওষুধ দিলেন। বাড়িতে নিয়ে এসে ওষুধ-পথ্য খাওয়ালাম। গামছা দিয়ে বিড়া বানিয়ে ছানাটাকে ঘুমাতে দিলাম। এভাবে দিন পনেরোর মধ্যে সে পুরোপুরি সেরে উঠল।

এরপর থেকে সারাক্ষণই আমার পায়ে পায়ে ঘোরে। আমি কী করি না করি সব দেখে। একদিন আমি একটা বই পড়ছিলাম। হঠাৎ দেখি বেড়ালছানাটা মিউ মিউ করতে করতে আমার কাছে এল। দুষ্টুমি করতে করতে আমার কানটুপিটাতে মাথা ঢুকিয়ে দিয়েছিল সে। যখন আর বের করতে পারছে না, চোখে কিছু দেখছেও না, তখন আমার কাছে এলো।

দেখে আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। হঠাৎ খেয়াল হলো আজ ছ’মাস পর আমি প্রথম হাসলাম।

তখন মনে হলো- একটা সামান্য বেড়াল ছানাকে সাহায্য করে যদি আমি এত সুখী হতে পারি তাহলে মানুষকে সেবা করার আনন্দ কত বাধভাঙা হতে পারে!

সাথে সাথেই কিছু খাবার রান্না করে আমার অসুস্থ প্রতিবেশীকে দেখতে গেলাম। যে আমি ঘর থেকেই বেরুতাম না, তাকে তার ঘরে দেখে প্রতিবেশী যারপরনাই খুশি হলো। আমারও খুব ভালো লাগল।

এরপর খুঁজে বের করলাম এই হাসপাতাল। এখানে প্রতিদিন এমন বহু রোগী আসে যাদের কেউ দেখার নেই। আমি তাদের সেবা করি। যখন যার যেটা লাগে। আমার নিজের ছেলে হয়তো আর নেই।

কিন্তু এখানে অনেক ছেলেকে মেয়েকে আমি সেবা করেছি যারা পরম মমতায় আমাকে মা ডেকেছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। কিন্তু এখনো আমাকে চিঠি লেখে। আমার জন্যে উপহার পাঠায়।

আসলে কি জানেন আপা, আপনার সুখটা নির্ভর করে আমি নিজে কী পেলেন তার ওপর না, অন্যকে আপনি কতটা সুখী করতে পারলেন তার ওপর।

এতক্ষণ তন্ময় হয়ে শুনছিলেন সেই ধনাঢ্য নারী। শুনতে শুনতেই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়লেন। আকুল হয়ে কাঁদতে লাগলেন।

বললেন, আমি তো সারাজীবন কারো জন্যে কিছু করি নি। এজন্যেই তো আমার জীবনে এত বিষণ্নতা এত অসুখ!

আমি এখন থেকে মানুষের সেবায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু করব।

করোনার এই কাল আমাদের সামনে সেবা ও স্বার্থপরতা- দুটোর ছবিই ফুটিয়ে তুলেছে।

এক দল মানুষ জীবন বিপন্ন করে হলেও মানুষের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

আরেক দল মানুষ আক্রান্ত মানুষকেই মনে করছে ‘ভাইরাস’ যেন রোগাক্রান্ত হয়ে সে অপরাধ করেছে। এবং সেই অপরাধে এমনকি নিজের মা, বাবা, স্ত্রী বা স্বামীকেও পরিত্যাগ করেছে এমন খবরও এসেছে।

অথচ এই মানুষগুলো বুঝতে পারছে না যে, একজন করোনা আক্রান্তের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের মমতা- স্বজনের, প্রিয়জনের, প্রতিবেশীর, সমাজের।

কারণ করোনা আক্রান্ত হয়ে যে মানুষগুলো মারা গেছে বা যাদের সংক্রমণ জটিল হয়েছে তারা এ অবস্থায় উপনীত হওয়ার একটা বড় কারণই ছিল মানসিক।

এক তো প্রচণ্ড আতঙ্ক যে করোনা মানেই বোধ হয় মৃত্যু।

দ্বিতীয়ত, নিঃসঙ্গতা। যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। এখন তো আমাকে ঘরে বা হাসপাতালে একাকী একটা ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হবে।

সমবেদনা জানানোর জন্যে, সেবার হাত বুলিয়ে দেয়ার জন্যে কাউকে পাব না। এমনকি যাদেরকে পাওয়ার কথা- হাসপাতালের ডাক্তার বা নার্স তারাও তো কাছে আসবে না!

এই বিষণ্নতা, হতাশা শারীরিকভাবেও তাদেরকে দুর্বল করেছে, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। ছিনিয়ে নিয়েছে বেঁচে থাকার উদ্দীপনা।

আসলে বেঁচে থাকার উদ্দীপনা মৃত্যুমুখে ধাবমান মানুষকেও কীভাবে জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে তার হাজার হাজার উদাহরণ আছে!

কিন্তু এই করোনাকালে এই হতভাগ্য মানুষগুলোর সে সুযোগ হয় নি।

অন্যদিকে যে স্বজন বা প্রতিবেশী এই অমানবিক আচরণ করেছে তারাও আত্মঘাতী আচরণ করেছে।

কারণ স্বার্থপরতা, আতঙ্কগ্রস্ততা তার নিজেরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

অন্যদিকে সমমর্মিতা, অন্যকে সাহায্য করা একজন মানুষকে দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করে।

হতাশা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা মুক্ত করে। সুস্বাস্থ্য হয়ে যায় তার সহজাত।

চলুন এবার দেখে নেই- সমমর্মিতার বিচারে আমাদের কার অবস্থান কোথায়।

নিজের অবস্থান যত নিজের কাছে পরিষ্কার হবে, বিকশিত হওয়া তত সহজ হবে।

কুইজ : আপনি কতটা সমমর্মী?

আপনার রুমে বা নির্জনে কোথাও আরাম করে বসুন। হাতে একটি কাগজ ও কলম নিন। নীচে ১৬টি প্রশ্ন আছে। এবার আপনার মন মতো উত্তর লিখে যান, যেমন ১ এর জন্যে ক, ২ এর জন্যে ঘ ইত্যাদি । চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব নিজের কাছে সৎ থেকে উত্তর দিতে। যা অনুভব করবেন তাই লিখবেন। কে কী ভাবল এতে কিছু যায় আসে না।

১। যখন কেউ খুব বেশি উত্তেজিত হয়, তখন আমিও উত্তেজিত হয়ে যাই

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

২। অন্যদের কষ্ট ভোগান্তি আমাকে খুব একটা নাড়া দেয় না

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

৩। যখন কাউকে অসম্মান করা হয়, আমার খুব খারাপ লাগে

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

৪। আমার কাছের কেউ খুশি হলে আমার কোনো অনুভূতি হয় না

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

৫। অন্যদেরকে খুশি করতে পারলে আমার ভালো লাগে

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

৬। আমার চেয়ে কষ্টে যারা আছে, তাদের প্রতি আমার দুর্বলতা কাজ করে

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

৭। যখন আমার কোনো বন্ধু বা ভাই বোন তার দুঃখের কহতা বলা শুরু করে, আমি কথার টপিকটা ঘোরাতে চেষ্টা করি

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

৮। যখন কারও মন খারাপ থাকে, আমি সহজেই বলতে পারি। এমন কি তারা এই ব্যাপারে কিছু না বললেও

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

৯। অন্যদের মুডের সাথে আমি সহজেই আমার মুড মিলাতে পারি

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

১০। যারা নিজের দোষেই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাদের জন্যে আমার মায়া আগে না

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

১১। কেউ কাঁদলে আমার বিরক্ত লাগে

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

১২। অন্যরা কী অনুভব করছে তা জানার প্রতি আমার আগ্রহ নেই

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

১৩। কেউ যখন খুব মন খারাপ করে থাকে, তার সাথে আমার খুবই দেখা করতে ইচ্ছে করে

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

১৪। কারো প্রতি অবিচার করা হলে আমার খুব একটা খারাপ লাগে না

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

১৫। মানুষ যখন খুশিতে কেঁদে ফেলে তখন আমার কাছে ব্যাপারটা বোকামি লাগে

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

১৬। কারও প্রতি অন্যায় বা অবিচার করা হলে আমি একটা দায়িত্ব অনুভব করি তাকে রক্ষা করার জন্যে

ক) কখনোই না

খ) খুব কম

গ) মাঝে মাঝে

ঘ) প্রায়ই

ঙ) সবসময়

প্রশ্ন ১,৩,৫,৬,৮,৯,১৩,১৬ এর জন্যে নিজেকে মার্ক করবেন এভাবে -

কখনোই না = ০, খুব কম = ১, মাঝে মাঝে = ২, প্রায়ই = ৩, সবসময় = ৪

এবং প্রশ্ন ২,৪,৭,১০,১১,১২,১৪,১৫ এর জন্যে নিজেকে মার্ক করবেন এভাবে -

কখনোই না = ৪, খুব কম = ৩, মাঝে মাঝে = ২, প্রায়ই = ১, সবসময় = ০

এবার আপনার নিজেকে দেয়া নাম্বারগুলো যোগ করুন।

০ থেকে ৬৪ এর মধ্যে একটি নাম্বার পাবেন।

ফলাফল

০ থেকে ৪৪ – কম

৪৫ – ৫০ – স্বাভাবিক

৫১ থেকে ৬৪ – বেশি

যদি আপনার উত্তর বেশি এসে থাকে তো খুব ভালো। আপনার অন্যকে সেবা করার অনেক বেশি সুযোগ আছে।

যদি স্বাভাবিক এসে থাকে, তাও খুব ভালো, আপনার সেবা করার সুযোগ আছে এবং আপনি আপনার সমমর্মিতা বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছেন।

যদি কম এসে থাকে তো আরো ভালো, আপনার হৃদয়ে সমমর্মিতাকে জাগ্রত ও বিকশিত করার সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ ও সময় আপনি পাচ্ছেন।

আসলে সমমর্মিতা একটা চর্চার বিষয়। একটু চেষ্টা করলেই নিজের ভেতর সমমর্মিতার গুণ বিকশিত করা যায়।

ঘরে বাইরে সমমর্মিতা চর্চার সহজ টেকনিক

সমমর্মিতা চর্চা করতে মনোবিজ্ঞানীদের এই টেকনিকগুলো অনুসরণ করতে পারেন –

বেশি বেশি আশেপাশের মানুষদের, বিশেষ করে আপনজনদের কথা শুনুন। তাদের দিকে মনোযোগ দিন। এবং শোনার সময় এই ৫টি বিষয় খেয়াল রাখুন –

১। যিনি বলছেন শুধু তার দিকেই মনোযোগ দিন। মোবাইল/ টিভি দেখা বা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন।

২। আপনি যে তার কথা শুনছেন তা প্রকাশ পেতে দিন। যেমন তার চোখের দিকে তাকান, একটু পর পর মাথা নাড়ান ইত্যাদি।

৩। তারা যা বলছেন তা যতই অপ্রয়োজনীয় বা অহেতুক মনে হোক, পুরোটা শুনুন। যদি আপনার রাগ কিংবা খারাপ লাগে, তাহলে বিরতি নিন। উঠে এক গ্লাস পানি খেয়ে আসুন।

৪। তারা যা বলছেন তা আপনার ভাষায় আবার বলুন। দেখুন যে আপনি ঠিক বুঝেছেন কিনা। কোনোকিছু না বুঝে থাকলে বা অস্পষ্ট মনে হলে প্রশ্ন করুন।

৫। তাদের অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখান। তারা যা বলছেন তাতে আপনি একমত না হলেও তাদের অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখাতে কোনো বাধা নেই।

সমমর্মিতার মেডিটেশন

সমমর্মিতা চর্চার আরেকটি কার্যকর উপায় হচ্ছে মেডিটেশন। আপনার ফোন বা ল্যাপটপে সমমর্মিতার মেডিটেশন ডাউনলোড করে নিয়মিত করতে থাকুন। আপনার ভেতরের সমমর্মিতার শক্তি দেখে আপনিই অবাক হবেন। নিজেকে আবিষ্কার করবেন এক নতুন আনন্দলোকে।

মেডিটেশন - সমমর্মিতা : শুধু অন্তরে নয়, বাস্তবে

সমমর্মী ও সাহসী একজন নারীর গল্প

১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সময়কার একজন নারী ক্লেমি ওলফ। তখনকার দিনে মহামারী মানেই মৃত্যু। আমাদের এখনকার করোনার মতন ২-৩% মৃত্যুর হার নয়।

তো চারিদিকে তখন মৃত্যুর স্রোত। যেই আক্রান্ত হচ্ছে মারা যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ তরুণীরা। ভয়ে ঘর থেকে কেউ বেরোচ্ছে না। চারিদিকে সব বন্ধ। শুধু মৃত্যুর ডাক।

তখন কয়েকজন নারীকে নিয়ে ক্লেমি উলফ নেমে পড়লেন রাস্তায়, মৃত্যু অবধারিত জেনেও। বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে সেবা শুশ্রূষা করলেন রোগীদের। যাদের ঘরে খাবার নেই, খাবার পৌঁছে দিলেন। যাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনা করার কেউ নেই, সেই বাচ্চাদের দেখা শোনা করলেন। যাদের পরিবার পরিজন মারা গেলেন, তাদের দিকে মমতার পরশ বাড়িয়ে দিলেন।

এবং এভাবেই সেবা করতে করতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ক্লেমি অলফ।

যখন তিনি মারা গেলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা করা হলো যেন বেশি মানুষ তার শেষকৃত্যে না আসেন। তাহলে রোগ সংক্রমণ বেড়ে যাবে। কিন্তু ক্লেমী উলফ এত মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন যে কোনো ভয় আদেশে কাজ হলো না। লোকে লোকারণ্য হলো ক্লেমি উলফের শেষকৃত্যে।

শোনা যায় যে যখন ক্লেমি উলফের শেষ বিদায়ে তার সবচেয়ে সুন্দর জামাটি পরিধানের জন্যে তার ঘর জুড়ে খোঁজ করা হলো, তখন দেখা গেল যে ক্লেমি উলফের ঘরে তার কোনো কাপড় আর অবশিষ্ট নেই। তার যা ছিল তা সব তিনি নীরবে অসহায় মানুষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।