৩১ মে পালিত হলো বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস; এবারের প্রতিপাদ্য- ‘আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি’।
কিন্তু জীবন বাঁচানোর সাথে তামাক ছাড়ার সম্পর্ক কী?
তামাকের নেশার ফলে প্রতি বছর দেশে ফুসফুস ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার, হৃদরোগ, হাঁপানি ও যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতি রোগে ১২ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়। অধূমপায়ীর তুলনায় ধূমপায়ীদের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৫ গুণ বেশি!
ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই ধূমপায়ী৷ আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, সিগারেটের তামাকে থাকা ৭ হাজারের বেশি রাসায়নিকের মধ্যে অন্ততঃ ৭০টিই ক্যান্সার ঘটাতে পারে।
ধূমপান আসলে বিষপানের সমতূল্য। ‘দ্য ল্যানসেট'-এর একটি নিবন্ধে বলা হয়, সারা বিশ্বে ১০টি মৃত্যুর মধ্যে একটির কারণ ধূমপান৷ অন্যদিকে WHO বলছে, হৃদরোগ, ক্যান্সার, যক্ষ্মা এবং অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে যত মৃত্যু হয় তার যথাক্রমে ৩০, ৩৮, ৩৫ এবং ২০ শতাংশের জন্য দায়ী ধূমপান।
বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগে বছরে মারা যায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। অথচ করোনায় মাত্র পৌনে ১৩ হাজার মৃত্যু নিয়ে যতটা তোলপাড় হচ্ছে তামাকের ব্যাপারে নেই তার লেশমাত্রও!
সুইডেনে এক সমীক্ষায় জানা গেছে, যারা দিনে ১৫টির বেশি সিগারেট খায় তাদের অকালে চোখে ছানি পড়াসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়৷ ধূমপায়ীদের দাঁত পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি অধূমপায়ীদের চেয়ে ৩ গুণ বেশি৷
মস্তিষ্কের বুড়িয়ে যাওয়াকেও ত্বরান্বিত করে ধূমপান।
এটি এমনকি পুরুষদের বাবা হতেও অক্ষম করে দিতে পারে। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা এক ধরণের পদার্থ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় স্পার্মের জিনোম পরিবর্তন করে৷ ফলে তা আর ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারে না৷
অন্যদিকে, কোভিড-১৯-এ ধূমপায়ীদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৪০%–৫০% বেশি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ধূমপানের আসক্তি কেবল সিগারেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, অনেক ক্ষেত্রেই ধূমপায়ীকে নিয়ে যায় মাদকের দিকে। আর যার জীবনে মাদক ঢুকেছে জীবন বরবাদ হতে তার আর কিছু লাগে না!
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু বিষয়টি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
টগবগে তরুণ। মেধাবী ছাত্রই শুধু না, ভালো মুকাভিনেতাও। এলএসডি (এক প্রকার মাদক) সেবনের পর নেশার ঘোরে দা দিয়ে নিজেই নিজেকে আহত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
মিডিয়ায় ঘটনার জেরে গ্রেফতার হওয়া তরুণদের নির্বিকারভাব ও হাস্যোজ্বল অভিব্যক্তির ফুটেজ দেশবাসীকে হতবাক করেছে। নেশা কতখানি মনোবিকৃতি ঘটায় এটি তারই স্বরূপ।
ধূমপান কেবল নিজের ক্ষতিই করে না; প্যাসিভ স্মোকার, মানে ধূমপায়ীর আশেপাশে থেকে ধোঁয়া গ্রহণকারীদেরও মারাত্মক ক্ষতি করে। WHO বলছে, বিশ্বে ধূমপানের প্রতিক্রিয়ায় ঘটা ৮০ লাখ মৃত্যুর মধ্যে শিশুসহ ১২ লাখই পরোক্ষ ধূমপায়ী।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় ঢাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯৫ ভাগ শিশুর শরীরে উচ্চমাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে, যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান। পরিবারের অন্য সদস্যদের সিগারেটের ধোঁয়ার নির্মম শিকার এরা।
তাই নিজের ও পরিবারের সুরক্ষায় ধূমপান বর্জন করুন। ধূমপান ছাড়ার সুফল অনেক- বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ধূমপান ছেড়ে দিলেই চোখ ও দাঁতের সুস্থতা আস্তে আস্তে ফিরে আসে৷ আর এর ২৪ ঘণ্টা পর থেকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমতে শুরু করে৷
ধূমপান বর্জনের ১ বছরের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের এবং ১০ বছরের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। আর ৫ বছরের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি নেমে আসে অধূমপায়ীদের পর্যায়ে।
এ-ছাড়াও, ৩০-৪০ বছর বয়সের মধ্যে তামাক ছাড়লে প্রত্যাশিত আয়ু তামাক ব্যবহারকারীর তুলনায় প্রায় ১০ বছর বেড়ে যায়।
অনেকেই মনে করেন ধূমপানের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৬৬.২% ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়তে চেয়েও পারেন না।
আসলে ধূমপান ছাড়া খুব সহজ, যদি আপনি সত্যিই তা চান এবং যথাযথ টেকনিক অনুসরণ করেন। আর সবচেয়ে কার্যকর টেকনিক আপনি পাবেন কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে।
মেডিটেশন প্রক্রিয়ায় জীবনকে সুন্দর করার যে সূত্রগুলো এই কোর্সে রয়েছে তার একটি হচ্ছে ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়া। এ-ক্ষেত্রে ভিজ্যুয়ালাইজেশন টেকনিক কাজটিকে সহজ করে দেয়। আর তাই বহু ধূমপায়ী কোর্সে এসে ধূমপান থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পেরেছেন, বহুবার বহুভাবে চেষ্টা করেও যা তারা আগে পারেন নি।