ভুঁড়িতে ভারাক্রান্ত !

বন্ধুমহলে সবাই আমাকে ‘মোটা-গাটা’ ফ্যামিলির ছেলে বলেই জানে। এর পেছনের ঘটনা হলো আমার পরিবারে ‘স্বাস্থ্যবান’ লোকজনের আধিক্য। একারণে আমি যাকে বলে একেবারে ‘ডেঞ্জারজোনে’ আছি। রাতে একটু বেশি খেলেই সকালে দেখি ওজন বেড়ে গেছে! কষ্টটা বুঝুন তাহলে! সবাই দেখি দিব্যি খাওয়া-দাওয়া করছে, অথচ ওজন বাড়ছে খুব সামান্যই। আবার অনেকে দেখি একদমই অল্প খান, তবুও দেখে বোঝার উপায় নেই; অথচ তাদের পরিবারে হয়তো স্থূলতার আধিক্য নেই।

এই এতসব বৈচিত্রের মানেটা হলো আমাদের শরীরের খাবার গ্রহণের ধরণটা খুব গোলমেলে এবং সেটা জনে জনে ভিন্ন। যদিও এ ব্যাপারে আমাদের প্রচলিত ধারণাটা একবারেই উল্টো, এবং যথেষ্টই অবৈজ্ঞানিক। যেরকম ধরুন, আমরা যাকে স্ট্যান্ডার্ড ডায়েট বলি, তেমন আদর্শ খাবার-তালিকা বলে আসলে কিছু নেই। প্রত্যেক মানুষের খাবারের স্ট্যান্ডার্ড  নির্ধারিত হয় তার দেহমনের কোয়ান্টাম লেভেল থেকে। যে কারণে একজন প্রচুর খেয়েও শরীরে মেদ জমাতে পারে না, আর একজন পানি খেয়েও ওজন বাড়িয়ে ফেলে। তাই কী পরিমাণ খাবার খাবেন, তার সবচেয়ে দক্ষ বিচারক হলো আপনার পাকস্থলী। কাজেই খাবারের যে পরিমাণ বা পদ আরেকজনের জন্য আরামের, সেটা আপনার জন্য ব্যারামের হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক কিছু না। অবশ্য এটা ঠিক যে, কিছু কিছু খাবার সবার জন্যই মেদবর্ধক। যেরকম কোমল পানীয় বা ফাস্টফুড। এসব ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু খাবার কমানো বা পরিবর্তন যে কত কঠিন সেটা বোধহয় সবাই জানেন। এমনি এমনি কী আর বলে যে, “খাবারের প্রতি প্রেমের মতন বিশ্বস্ত প্রেম আর হয় না”! তাই শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে এখানে সাফল্য লাভের সম্ভাবনা খুব কম। তবে মনছবি প্রয়োগ করে আপনি এক্ষেত্রে অসাধ্যও সাধন করতে পারেন। এরকম নজিরও আছে, নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করে খাবারের পরিমাণ কমাতে পেরেছেন অনেকেই। অনেকে আবার রেস্টুরেন্টের খাবারের প্রতি আসক্তিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন।

এখন ওজন কমাতে খাবার নিয়ন্ত্রণ ও অবচেতন মনে তথ্যের পুনর্বিন্যাস যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি খাবারের সময় নির্ধারণও জরুরি। যেরকম একই পরিমাণ খাবার সকালে খেলে ওজন কমবে এবং সেই পরিমাণ খাবার রাতে খেলে ওজন বাড়বে। এর কারণ হচ্ছে খাওয়ার পঞ্চম থেকে সপ্তম ঘণ্টায় হজম প্রক্রিয়া তুঙ্গে পৌঁছায়। রাতে ভুরিভোজ করলে হজমে উৎপাদিত শক্তি রক্তে যখন এসে পৌঁছে আপনি তখন ঘুমিয়ে। সে শক্তি তখন খরচ না হয়ে চর্বিতে পরিণত হয়। এজন্য ডায়েট বিশেষজ্ঞ ডা. পল রোয়েন ৩০ বছর গবেষণা করে বলেছেন, সকালে ভরপেট নাস্তা করুন, দুপুরে তৃপ্তির সাথে খান, আর রাতে হালকা খাবার গ্রহণ করুন।

ওজন কমানো নিয়ে আরেকটা রিপোর্ট এসেছে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ওবেসিটি’-তে। এতে বলা হচ্ছে ঘুমের স্বভাবও নাকি আপনার মেদবাহুল্যকে প্রভাবিত করতে পারে। ঘুম কম হলে যেমন বাড়তি ওজনের আশঙ্কা, বেশি ঘুমেও তাই। কারণ অতিরিক্ত ঘুম যেমন শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে শিথিল করে দেয়, অল্প ঘুমে তেমনি দেহমনের স্ট্রেস লেভেল বেড়ে গিয়ে খাবার চাহিদা বাড়ে। ‘ব্রিটিশ স্লিপ সোসাইটি’-র ডা. নীল স্ট্যানলি তাই বলেছেন, এতদিন আমরা পরামর্শ দিতাম ‘খাওয়া কম, পরিশ্রম বেশি’; আর এখন ওর সাথে যুক্ত হয়েছে ‘পরিমিত ঘুম’।”

সবশেষে বলব, মোটা হওয়ার যে কত হ্যাপা তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। অনেকে বলে না, ‘ছোটোখাটো একটা ভুঁড়ি হলো সুখী মানুষের লক্ষণ’ –এটা যে কত ভুল তার কোনো সীমানা নেই! কারণ একটু বাড়তি ওজন যে আপনার আয়ু কমিয়ে দিবে স্রেফ তাই নয়, প্রায় সবগুলো রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিবে কয়েকগুন। অতএব বাপু, সময় থাকতে সাবধান। যারা কেবলই এক-সাইজ বড় কাপড় পড়তে নিয়েছেন তারা এখনই সতর্ক হোন। মোটা হতে নিলেই কন্ট্রোল করতে হয়, কারণ একবার মোটা হয়ে গেলে আবার ‘ফর্মে’ আসা বহুত যন্ত্রণা।