published : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১
আমরা স্বপ্ন দেখি। সবাই কমবেশি স্বপ্ন দেখি। কখনো এ স্বপ্ন হয় মধুর, কখনো ভয়ংকর। দুঃস্বপ্ন দেখলে আমরা ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসি। নিজেকে প্রবোধ দেই, না ওটা শুধু স্বপ্ন- ঘাবড়াবার কিছু নেই। স্বপ্নের কারণ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্কের অন্ত নেই। অনেকে স্বপ্নকে নেহাত স্বপ্নই বলতে চেয়েছেন। কিন্তু ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই, স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়। অনাগত কঠোর বাস্তবের প্রতিচ্ছায়াও থাকে এই স্বপ্নে।
স্বপ্নে নিজেকে মৃত দেখার ঘটনা বিরল নয়। আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার কয়েকদিন পূর্বে এমনি স্বপ্ন দেখেছিলেন আমেরিকার মহান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। তিনি তার স্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়ার্ড লেমনের নিকট তার স্বপ্নের ঘটনা বর্ণনা করেন। লিঙ্কন বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখলাম, আমি হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন কক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিন্তু কোনো কক্ষেই কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু শুনছি প্রতিটি কক্ষ থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ।’
‘হোয়াইট হাউসের পূর্বদিকের কক্ষে আমি দেখতে পেলাম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রক্ষিত একটি কফিন। প্রহরী সৈনিকদের চারদিক ঘিরে রয়েছে শোকাচ্ছন্ন নারী-নর।’ আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটি কার লাশ? হোয়াইট হাউসে কে মারা গেছেন?’
তারা জবাব দিল, প্রেসিডেন্টের। তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন।’ প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন স্বীকার করেন যে, ‘যদিও এটি ছিল একটি স্বপ্ন, তবুও তা আমার মনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। সারারাত আমার আর ঘুম এল না। মনে হলো, আমি সবকিছুর পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মনটা বেদনায় লীন হয়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেও আমি এই বেদনাদায়ক অনুভূতিকে দূরে ঠেলে দিতে পারছিলাম না।’
লিঙ্কন যেদিন আততায়ীর হাতে নিহত হন, সেদিন বিকেলে তিনি মন্ত্রীসভার বৈঠক ডাকেন। নির্ধারিত কক্ষে ঢুকে মন্ত্রীরা দেখতে পান যে, প্রেসিডেন্ট আগেই এসে আসন গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তার মাথা টেবিলের ওপর নোয়ানো। দু’হাতের মাঝে মাথা এমনভাবে ডুবে আছে যে, তার মুখাবয়ব দেখার উপায় নেই। মন্ত্রীদের পদশব্দে প্রেসিডেন্ট মাথা তুললেন ও ঠিক হয়ে বসলেন।
‘ভদ্রমহোদয়গণ, আপনারা শিগগিরই কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর শুনতে পাবেন।’ সম্বোধনের জবাব দিয়ে প্রেসিডেন্ট তাদের বললেন। ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আমাদের জন্যে কি কোনো অশুভ সংবাদ রয়েছে? একজন মন্ত্রী জানতে চাইলেন।
লিঙ্কন জবাবে বললেন, ‘আমি কিছু শুনি নি। আমার কাছে কোনো খবরও নেই। কিন্তু গতরাতে আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি। আমি স্বপ্নে দেখলাম, একটি নৌকায় আমি সম্পূর্ণ একা। নৌকায় কোনো দাঁড় নেই, কোনো হাল নেই। অথৈ সাগরে নিঃসহায়ের মত একা ভেসে চলেছি।’
কক্ষের মাঝে নিঃসীম-নিস্তব্ধতা নেমে এল। এখন কি বলতে হবে, কেউই তা জানেন না। প্রেসিডেন্ট বলে চললেন : গৃহযুদ্ধকালে কয়েকবার আমি এ স্বপ্ন দেখেছি। প্রতিবারই একদিন বা দু’দিনের মধ্যে মারাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। হ্যাঁ, ভদ্রমোহদয়গণ। আমার মনে হচ্ছে, সম্ভবত আগামীকাল- সম্ভবত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনারা কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর পাবেন।
এর পাঁচ ঘণ্টা পরই মহান লিঙ্কন আততায়ীর হাতে নিহত হন।
স্বপ্ন-একটি মাত্র স্বপ্ন ইউরোপের ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছিল ব্যাপকভাবে। রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার তখনও জীবিত। তার একজন প্রভাবশালী সভাসদ সিসিরো এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, সিজারের যোগ্য উত্তরাধিকারী মনোনয়নের জন্যে দেবতা জুপিটার সিনেটের তনয়দের প্যারেড পরিদর্শন করছেন। কিন্তু কাউকেই দেবতার মনঃপুত হলো না। এমন সময় প্যারেডের মাঠে দেখা গেল এক অদ্ভুত তরুণকে। দেবতা জুপিটার তাকেই মনোনীত করলেন সিজারের উত্তরাধিকারী। ঘুম ভাঙার পরও সিসিরোর মনে স্বপ্নে দেখা তরুণের মুখচ্ছবি ভাসতে লাগল।
পরদিন সিসিরো দরবারে যাওয়ার পথে একদল তরুণের সাক্ষাৎ পেলেন। তারা শরীরচর্চা শেষে ফিরছিল। তাদের মধ্যেই তিনি দেখতে পেলেন স্বপ্নে দেখা তরুণকে। সিসিরো এর পূর্বে সে তরুণকে কখনো দেখেননি। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারলেন, তরুণের নাম অক্টাভিয়াস। তার বাবা-মার তেমন কোনো পরিচিতি রাজধানীতে নেই।
কয়েক বছর পরের কথা। সিজারের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলো। সিসিরো তার স্বপ্নের বলে বলিয়ান হয়ে সর্বশক্তিতে অক্টাভিয়াসের পক্ষ সমর্থন করলেন। অক্টাভিয়াস আরোহণ করলেন রোমের সিংহাসনে। অক্টাভিয়াসই পরে সর্বশ্রেষ্ঠ রোম সম্রাট হিসেবে অগাস্টাস নামে ইতিহাসখ্যাত হন।
১৯০৯ সালে সারা ভারতে তখন সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের জোয়ার বইছে। লণ্ডনে লেগেছে তার ঢেউ। সন্ত্রাসবাদীরা ভারতের সাথে সংশ্লিষ্ট বৃটিশ অফিসারদের হত্যা করতে পারে এ আশঙ্কা তখন লণ্ডনের সবার মনে। ভারতীয় সন্ত্রাসবাদীদের ওপর নজর রাখার দায়িত্ব স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড বিশেষ গোয়েন্দা ইন্সপেক্টর ম্যাক লাফলেনের ওপর অর্পণ করেন।
ইন্সপেক্টর ম্যাক লাফলেন এক রাতে স্বপ্ন দেখেন লালধিংরা নামে এক ভারতীয় ছাত্র একটি বিরাট ভবনের বাইরে রিভলবার হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এরপর থেকে তিনি লালধিংরার ওপর সতর্ক নজর রাখতে লাগলেন। স্বপ্ন দেখার পর ইন্সপেক্টর ভবনটি সনাক্ত করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু লণ্ডনের বহু রাজপথ পরিক্রমণ করেও তিনি সে ভবনটি সনাক্ত করতে ব্যর্থ হন।
১৯০৯ সালে পহেলা জুলাই দক্ষিণ কেনিংস্টনের ইম্পেরিয়াল ইন্সটিটিউটে ভারতের সাথে সংশ্লিষ্ট বৃটিশ অফিসারদের সম্মানে এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ভারত বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী স্যার কার্জন উইলি এবং তার বিশিষ্ট বন্ধু পার্সি চিকিৎসক ডাক্তার কাউস লাল কাকাও এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন।
জমজমাট এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের পরেও চলতে থাকে। রাত নয়টায় স্যার কার্জন ও আরো কয়েকজন অতিথি বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। স্যার কার্জন ভবনের প্রধান সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসেন। কিন্তু তিনি নিচে নেমে আসতে না আসতেই একটি স্তম্ভের আড়ালে আত্মগোপনকারী লালধিংরা বিদ্যুৎগতিতে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। মাত্র দু’হাতের ব্যবধানে থেকে লালধিংরা পরপর পাঁচটি গুলি করে তাকে। ডাক্তার লালকাকা কার্জনের পেছনে আসছিলেন। তিনি দ্রুত এগিয়ে এসে বাধা দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু লালধিংরার রিভলভারের শেষ গুলিটি আঘাত করে। তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।
ইন্সপেক্টর লাফলেন পরদিন দিবালোকে ভবনটির সামনে এসে দাঁড়ান। এবার সনাক্ত করতে পারেন ভবনটিকে। স্বপ্নে তিনি এ ভবনটিই দেখেছিলেন। স্বপ্ন দেখার পর লণ্ডনের বহু রাজপথের দু’ধারে তিনি এ ভবনটির খোঁজ করেছিলেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে কেনিংস্টনের এক্সিবিশন রোড ও তার আশেপাশের কয়েকটি রাস্তায় তিনি আসেন নি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ঘটনা। এ সময় একটি স্বপ্ন মিত্রপক্ষের সামরিক গোপনীয়তা রক্ষায় যথেষ্ট সহায়ক হয়েছিল। তখন চীনা বন্দর সোধাতোর বৃটিশ কন্সাল ছিলেন মি. রোনাল্ড হল। তার স্মৃতিকথায় তিনি লিখেছেন : এক রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি স্বপ্নে দেখি, গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা ঘটায় আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমি তখন আর মুক্ত নই। বৃটিশ কন্সাল হিসেবেও আমি কর্মরত নই।
এই স্বপ্ন আমাকে বেশ প্রভাবিত করে। আমি গভীর রাতে ঘুমুতে গেলেও খুব ভোরে উঠে পড়ি। অস্বস্তি দূর করার জন্যে নিচের তলায় নেমে যাই ম্যানিলা বেতারের ভোরের খবর শোনার জন্যে।
ম্যানিলা বেতার ধরার সাথে সাথেই আমি শুনলাম, আজ সকালে ম্যানিলায় বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। কালবিলম্ব না করে আমি আমার দফতরের পথে রওয়ানা হই। দফতরে পৌঁছেই সকল গুরুত্বপূর্ণ দলীল-দস্তাবেজ ভস্মীভূত করতে শুরু করি। দলীল-দস্তাবেজ ভস্মীভূত করে নিশ্চিহ্ন করতে না করতেই জাপানীরা আমাকে বন্দী করে।
আমার আমেরিকান সহকর্মী অবশ্য এতটা ভাগ্যবান ছিলেন না। জাপানীরা তাকে বিছানা থেকেই গ্রেফতার করে। ফলে তিনি কোনো কিছু ভস্মীভূত করতে সক্ষম হন নি।
স্বপ্ন দেখার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আমি জাপানী জেনারেলের কাছ থেকে একটা চিঠি পাই। তাতে লেখা ছিল, যেহেতু অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাই বৃটিশ কন্সাল হিসেবে আমার আর কোনো মর্যাদা নেই।
প্রখ্যাত মার্কিন কথাশিল্পী মার্ক টোয়েন ছিলেন অতিমাত্রায় অনুভূতিপ্রবণ। পেনসিলভানিয়া স্টিমারে খালাসীর কাজ করার সময় একদিন তিনি তার বোনের বাসায় বেড়াতে যান। রাতও কাটান সেখানে। রাতে তিনি দেখেন এক অভাবিত স্বপ্ন। তিনি দেখেন একটি হল ঘর, অনেক লাশের মধ্যে রয়েছে তার ছোট হেনরীর লাশ। অন্যান্য লাশ কাঠের কফিনে থাকলেও হেনরীর লাশ রয়েছে ধাতব কফিনে। হেনরীর বুকের ওপরে রয়েছে শ্বেত পুষ্পস্তবক। আর তার মাঝখানে শোভা পাচ্ছে একটি লাল গোলাপ।
এ স্বপ্ন তাকে এত আচ্ছন্ন করে ফেলে যে তিনি বিছানা থেকে উঠে পোশাক পরে বেরিয়ে পড়েন। সে গভীর রাতে রাস্তায় কোনো গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই রওয়ানা হন ভাইয়ের লাশ দেখার উদ্দেশ্যে। অবশ্য আধা মাইল হাঁটার পর তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, তিনি শুধুমাত্র স্বপ্ন দেখেছিলেন, এর সাথে বাস্তবের কোনো যোগাযোগ নেই। তাই আবার বাসায় ফিরে আসেন। সকালে নাস্তার টেবিলে তিনি স্বপ্নের কথা বলেন তার বোনের কাছে।
এর কয়েকদিন পর তিনি ও হেনরী পেনসিলভানিয়া স্টীমারে করে নিউ ওরলিন্সে যান। সেখান থেকে তাকে বদলী করা হয় টিএ লেকী স্টীমারে। পেনসিলভানিয়া দু’দিন আগেই নিউওরলিন্স থেকে যাত্রা শুরু করে। কয়েকদিন পরে পেনসিলভানিয়ায় বিস্ফোরণ ঘটে হেনরী মারাত্মকভাবে আহত হন। দুর্ঘটনার পর ছয় দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হেনরী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
মার্ক টোয়েনকে তার ভাইয়ের লাশ দেখানোর জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়। হেনরীর লাশ দুর্ঘটনায় নিহত অন্যান্যের লাশের সাথে একটি হল কক্ষে রাখা হয়েছিল।
হল কক্ষে হেনরীর লাশ ছাড়া অন্যান্যের লাশ ছিল কাঠের কফিনে। হেনরীর লাশই শুধু ছিল ধাতব কফিনে। তার তারুণ্য ও আকর্ষণীয় চেহারা মেমফিসের মহিলাদের বেশ প্রভাবিত করেছিল। তারা চাঁদা করে হেনরীর জন্যে একটা ধাতব কফিন কেনে। তার জন্যে বিশেষভাবে তৈরি করে শ্বেত পুষ্পের একটা তোড়া। তারা তোড়াটি রাখে হেনরীর ঠিক বুকের ওপর।
মার্ক টোয়েন হল ঘরের দরজায় এসেই থমকে দাঁড়ান, এবার বাস্তবতাকেই স্বপ্ন বলে ভ্রম হয় তাঁর। স্বপ্নে দেখা ঘটনা আর বাস্তবতায় অমিল নেই কোনো—শুধু লাল গোলাপটি ছাড়া। তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে যখন এ কথা ভাবছেন, তখন আর এক মহিলা একটি লাল গোলাপ হাতে নিয়ে তার গা ঘেঁষে কক্ষে প্রবেশ করে। মহিলা সরাসরি হেনরীর কফিনের নিকট যায়। শ্বেত পুষ্পস্তবকের ওপর আলতোভাবে রাখে লাল গোলাপটি।
প্রখ্যাত বৃটিশ সেনাপতি জেনারেল গর্ডন তখন ভারতে। এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, তিনি একটি খরস্রোতা নদী পার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নদী পার হওয়ার জন্যে একটি ধূসর রঙের নৌকায় কয়েকজন সৈন্যসহ উঠছেন। মাঝপথে যাওয়ার পর তাদের নৌকা ডুবতে শুরু করে। এ সময় তিনি তার পাশে যে সৈনিককে দাঁড়ানো দেখতে পান তাকে তিনি ইতিপূর্বে অবাধ্যতার জন্যে শাস্তি দিয়েছিলেন।
পর পর কয়েক রাত তিনি এ স্বপ্ন দেখেন। প্রতিবারেই নৌকা নিমজ্জিত হতে শুরু করার সময় তার পাশে সেই সৈনিককে দাঁড়ানো দেখতেন।
এর অল্প কিছুদিন পর জেনারেল গর্ডনকে একটি খরস্রোতা নদী অতিক্রম করতে হয়। তিনি নৌকায় উঠতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ লক্ষ করলেন যে, নৌকাটি স্বপ্নে দেখা নৌকার ন্যায় এবং এর রংও ধূসর। আরো ভালো করে লক্ষ্য করতেই তিনি দেখতে পেলেন যে, তার সঙ্গী সৈনিকদের মধ্যে এমন একজন রয়েছে, যাকে তিনি ইতিপূর্বে অবাধ্যতার জন্যে শাস্তি দিয়েছেন।
একজন জেনারেলের পক্ষে স্বপ্নের ওপর গুরুত্ব দান কিছুটা অস্বাভাবিক। কেউ কেউ একে বোকামিও মনে করতে পারেন। কিন্তু জেনারেল গর্ডন নৌকায় উঠলেন না। বরং সৈনিকদের নৌকা টেনে ডাঙ্গায় তোলার নির্দেশ দেন। নৌকা ডাঙ্গায় ওঠানোর পর তা ওল্টাতে বলেন। নৌকা ওল্টানোর পর দেখা যায় যে, নৌকার তলায় অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র। নৌকার ওপর পাটাতনের জন্যে তা দেখা যাচ্ছিল না। নৌকা ওপরে তোলার এই অভাবিত ঘটনা দেখে সৈনিকটি জেনারেল গর্ডনের পায়ে লুটিয়ে পড়ে। সকল অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে।
জেনারেল গর্ডন লিখেছেন, ‘যদি আমি আমার স্বপ্নের সতর্কবাণীতে কান না দিতাম, যদি সতর্ক না হতাম, তবে আমার সাথে সবাইকে নদীতে নিমজ্জিত হতে হতো। কারণ নদীর স্রোত ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক।
ম্যান দ্বীপে বসবাসরত বালক এড্রিন ক্রিশ্চিয়ান স্বপ্ন দেখে যে, সে একটি জাহাজে ক্যাপ্টেনের দায়িত্বলাভ করেছে। তার পরিবার রয়েছে অন্য জাহাজে। তারপর জাহাজটি হঠাৎ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং সে তার জাহাজ নিয়ে তাদের উদ্ধার করে। পরদিন সকালে সে তার ভাই টমাসকে স্বপ্নের কথা বলে। বালক এড্রিন একদিন সত্যি সত্যি জাহাজের ক্যাপ্টেনে পরিণত হয়।
১৮৮০ সালে ‘বৃটিশ ইণ্ডিয়া’ জাহাজ অস্ট্রেলিয়ার লণ্ডনী থেকে রেঙ্গুনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ জাহাজ পরিচালনার ভার ছিল ক্যাপ্টেন এড্রিন ক্রিশ্চিয়ানের ওপর। রেঙ্গুন অভিমুখে যাত্রার কয়েকদিন পর পর ক্যাপ্টেন এড্রিন স্বপ্ন দেখেন যে, একটি জাহাজ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। স্বপ্নের শেষে ‘ফ্যামিলি’ শব্দটি অত্যন্ত জ্বলজ্বলভাবে তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে। ছোট বেলার স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যায় তার। পরদিন তিনি তার সন্ধান তৎপরতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করলেন।
পরবর্তী রাতে একই স্বপ্নের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তার মধ্যে এ অনুভূতির সঞ্চার হয় যে, বিপদগ্রস্ত জাহাজটি তার নিজের জাহাজের উত্তরে রয়েছে। অধীনস্থ অফিসারদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিনি তার জাহাজের গতি উত্তরে পরিবর্তিত করেন। দু’দিন ক্রমাগত চলার পর তিনি দূর-দিগন্তে একটি নিমজ্জমান জাহাজের মাস্তুল দেখতে পান। বিপন্ন জাহাজের কাছে সময়মত পৌঁছতে পারায় ২৬৯টি প্রাণ রক্ষা পায়। এদের মধ্যে তার ভাই টমাসও ছিলেন। নিমজ্জিত জাহাজটির নাম ছিল ফ্যামিলি।
অসুস্থতার সাথেও সম্ভব স্বপ্নের বিরাট যোগযোগ রয়েছে। মনস্তত্ববিদ অধ্যাপক ট্রন ব্রস-এর জীবনে এমনি এক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা প্রসঙ্গে লিখেছেন : এক রাতে আমি স্বপ্নে দেখি যে, একটি বিড়াল আমার গলায় আঁচড় কাটার জন্যে তেড়ে আসছে। স্বপ্নটিকে এত বাস্তব মনে হচ্ছিল যে, আমার ঘুম ভেঙে গেল। ছয় মাসে কমপক্ষে বিশ বার আমি এ স্বপ্ন দেখি! প্রতিবারই আচঁড় কাটার পূর্ব মুহূর্তে আমার ঘুম ভেঙে যায়।
এর পর মাস পেরুতে না পেরুতেই অধ্যাপক ব্রস মারাত্মকভাবে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হন। অবস্থা জটিলাকার ধারণ করলে শরণাপণ্ন হন একজ বিশেষজ্ঞের। পরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞ দেখতে পান যে, গলার মধ্যে একটা মাংসপেশী বিপজ্জনকভাবে বেড়ে উঠেছে। তিনি অবিলম্বে গলায় অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। অস্ত্রোপচার করে বাড়তি মাংসপেশীটি অপসারণ করা হয়। এরপর অধ্যাপক ব্রসকে আর কোনো বিড়াল আঁচড় কাটতে তেড়ে আসে নি। গলার ভিতর কিছু একটা গণ্ডগোল হচ্ছে–এ স্বপ্নটি নিশ্চয় সে সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছিল। কিন্তু ক’জন তেমন স্বপ্নের সতর্কবাণীর ওপর গুরুত্বারোপ করেন?
১৮১২ সাল। স্পেন্সার পার্সভেল তখন ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী। ১০ মে তিনি লর্ড হ্যারোবির আতিথ্য গ্রহণ করেন। রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর তিনি যথারীতি ঘুমুতে যান। নরম বিছানার পেলব স্পর্শে ক্লান্ত প্রধানমন্ত্রীর দু'চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই একটি বিশ্রি স্বপ্ন তার চোখের ঘুম কেড়ে নেয়। সারারাত তিনি আর ঘুমুতে পারেন নি। পর দিন সকালে নাস্তার টেবিলে তিনি লর্ড হ্যারোবির নিকট রাতের স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলেন। তিনি বলেন, ‘বালিশে মাথা লাগাতে না লাগাতেই আমি স্বপ্ন দেখলাম, হাউজ অব কমন্সের লবির মধ্যে দিয়ে আমি হেঁটে যাচ্ছি। এমন সময় এক ব্যক্তি হঠাৎ আমার পথরোধ করে দাঁড়াল। তার কোটের বোতামগুলো ছিল পিতলের। কালবিলম্ব না করে সে আমাকে গুলি করল। মুহূর্ত মাত্র। তারপর আমার প্রাণহীন দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
১১ মে বিকেলে পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু করার কথা। লর্ড হ্যারোবি তার বন্ধুকে পার্লামেন্টের অধিবেশনে যোগদান থেকে বিরত রাখার জন্যে চেষ্টা করলেন। কিন্তু স্পেন্সার পার্সভেল শুধুমাত্র একটি স্বপ্ন দ্বারা বিচলিত হতে অস্বীকৃতি জানালেন। লর্ড হ্যারোবির প্রচেষ্টা তাই ফলপ্রসূ হলো না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, স্বপ্ন তিনি যেভাবে তার মৃত্যু দেখেছিলেন, একইভাবে তিনি নিহত হন। প্রধানমন্ত্রীর হত্যাকারী বেলিংহামের পরনেও ছিল সবুজ জ্যাকেট আর তার বোতামগুলোও ছিল পিতলের।
ভারতের সাবেক গভর্নর জেনারেল লর্ড ডাফরিন ফ্রান্সে ইংল্যাণ্ডের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হওয়ার আগে আয়ারল্যাণ্ডে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন তার বন্ধু স্যার হেনরীর বাগানবাড়িতে। এক রাতে তার কিছুতেই ঘুম আসছিল না। বিছানায় শুয়ে তিনি এপাশ-ওপাশ করছিলেন। রাত গভীর হয়ে এলে আস্তে আস্তে তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। সেই অবস্থায় তিনি দেখেন অদ্ভুদ এক স্বপ্ন।
তিনি স্বপ্ন দেখেন, কোনো কারণ ছাড়াই তার ঘুম ভেঙে গেছে। ঘরের পরিবেশটা কেমন যেন ভারী ভারী মনে হচ্ছে। কেমন যেন একটা অশুভ ইঙ্গিত পাচ্ছেন তিনি। হঠাৎ তিনি বাইরে মৃদু পদশব্দ শুনতে পেলেন। তিনি বাইরে এলেন। পূর্ণ চন্দ্রালোকে তিনি দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি কাঁধে একটা বিপুলাকার কালো কফিন নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কফিনের ভারে কফিনবাহী একেবারে কুঁজো হয়ে গেছে। লর্ড ডাফরিন দ্রুত গিয়ে লোকটির পথরোধ করে দাঁড়ালেন। জানতে চাইলেন তার পরিচয়। জানতে চাইলেন সে কি বহন করছে।
লর্ড ডাফরিনের কথা শুনে লোকটি একটু সোজা হয়ে দাঁড়াতে চাইল। আলোয় তিনি দেখলেন লোকটির বিশ্রি কদাকার চেহারা। লোকটির মুখে কোনো শব্দ নেই। দু'চোখ দিয়ে যেন ঘৃণা ঝরে পড়ছে। তাতে কদাকার মুখচ্ছবি হয়ে উঠছে আরও ভয়ঙ্কর। অতি সাহসী ডাফরিন তবুও সাহস সঞ্চার করে লোকটির কাছে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু লোকটি কফিনসহ অদৃশ্য হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। এমনিক ভেজা ঘাসের মধ্যে লোকটার কোনো পদচিহ্নও খুঁজে পেলেন না তিনি। এরপর লর্ড ডাফরিনের ঘুম ভেঙে যায়। তার তখনকার মনের অবস্থা সহজেই বোধগম্য।
রাতের ঐ প্রহরে কারো ঘুম আর ভাঙতে চাইলেন না তিনি। কিন্তু সকালে নাস্তার টেবিলে স্বপ্নের আগাগোড়া কাহিনী শোনালেন তার বন্ধুকে। ডাফরিনের অনুরোধে হেনরী সারা গ্রামে খোঁজ নিলেন। না, সে রাতে গ্রামে কেউ মারা যায় নি। লর্ড ডাফরিনও গ্রামে ঘুরলেন। কিন্তু না, স্বপ্নের দেখা কদাকার লোকটির সাথে চেহারার সাযুজ্য রয়েছে এমন কাউকে তিনি দেখতে পেলেন না!
কয়েক বছর পরের কথা! লর্ড ডাফরিন তখন ফ্রান্সে ইংল্যাণ্ডের রাষ্ট্রদূত। এক সন্ধ্যায় তিনি একটি কূটনৈতিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্যে প্যারিসের গ্রাণ্ড হোটেলে যান। তিনি ও আরো কয়েকজন কূটনীতিক লিফটে ওঠার জন্যে অপেক্ষা করছিলেন! লিফটের দরজা খোলা হলে ডাফরিন তাতে প্রায় ঢুকে পড়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ লিফট চালকের মুখের দিকে দৃষ্টি পড়তেই তিনি চমকে উঠলেন। কয়েক সেকেণ্ড দাঁড়িয়ে রইলেন স্থাণুর মত। বিস্মিত আতঙ্কিত ডাফরিনের মনে পড়ে গেল কয়েক বছর আগে আয়ারল্যাণ্ডে দেখা স্বপ্নের কথা। লিফট চালকের মুখাবয়ব তো অবিকল সেই কফিন বাহকের মত। লর্ড ডাফরিন পিছিয়ে এলেন। সৌজন্যমূলক ক্ষমা চেয়ে বিরত থাকলেন লিফটে ঢোকার থেকে। লিফট ভর্তি হয়ে গেল এবং তা উঠতে লাগল ওপরের দিকে।
লর্ড ডাফরিন ডান পাশের কক্ষে গিয়ে ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলেন লিফট চালকের পরিচয়। কিন্তু ম্যানেজার কোন কথা বলার আগেই প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল হোটেল ভবন। কেবল ছিঁড়ে লিফট নিচে পড়ে যায়। লিফটি বিধ্বস্ত হয় সম্পূর্ণরূপে। লিফটের ভেতর যারা ছিলেন, মারা যান তারা সবাই।
পরের দিনের সংবাদপত্রে সম্পূর্ণ ঘটনা প্রকাশিত হয়। অনেকে মত ব্যক্ত করেন, দুর্ঘটনাটি ছিল একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্রদূতকে হত্যা করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্তু কেউই আবিষ্কার করতে পারলেন না লিফট চালকের পরিচয়। আর আয়ারল্যাণ্ডের সেই কফিন বাহকের সাথে লিফট চালকের কোনো যোগসূত্রও বের করতে সক্ষম হলেন না কেউ। কিন্তু সেই স্বপ্নই লর্ড ডাফরিনকে বাঁচিয়ে ছিল নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে।
উনিশ শো বাহাত্তরের শেষ নাগাদ, সম্ভবত ডিসেম্বর মাস। প্রখ্যাত চিত্র শিল্পী রফিকুন্নবী তখন আর্ট কলেজের শিক্ষক। এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন পোস্ট অফিসের পিওন তাকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে। চিঠিতে লেখা আছে তাকে কোনো একটি দেশ স্কলারশীপ দিয়েছে উচ্চতর পড়াশোনার জন্যে। শিগগিরই যেতে হবে ওখানে। চিঠিটা পেয়ে অসম্ভব আনন্দ লাগছিল রফিকুন্নবীর। পরক্ষণেই তার ঘুমটা ভেঙে গেল। জেগে উঠে তার মনে হলো একটা সুন্দর জগৎ মাটি হয়ে গেছে একটু আগেই।
পরদিন যথারীতি কর্মস্থল আর্ট কলেজে গেলেন রফিকুন্নবী। সকাল ১১ টায় ক্লাস নিচ্ছিলেন, এমন সময় প্রিন্সিপাল (শফিক হোসেইন) ডেকে পাঠালেন তাকে। রফিকুন্নবী ভাবলেন হয়ত ক্লাস সম্পর্কিত কোনো কথাবার্তা আছে। কিন্তু প্রিন্সিপালের কক্ষে গিয়ে যা শুনলেন তাতে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। ভেতরে একটা উত্তেজনাও বোধ করছিলেন। প্রিন্সিপাল তাকে জানালেন যে, গ্রীক সরকারের একটি বৃত্তি। কলেজ থেকে তার নাম পাঠানো হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আজই কিছু কাগজপত্র পূরণ করে পাঠিয়ে দিতে হবে।
রফিকুন্নবী সে সময় মনে মনে প্যারিস অথবা লণ্ডনে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছিলেন। কিন্তু স্বপ্নটি এত তাড়াতাড়ি ফলে যাচ্ছে দেখে ভাবলেন কপালে গ্রীসই লেখা আছে হয়ত। দ্বিরুক্তি না করে সব কাগজপত্র পূরণ করে পাঠিয়ে দিলেন। মাস খানেক পরই চিঠি পেলেন গ্রীসের স্কলারশীপটা তার হয়ে গেছে। পরের অক্টোবরেই রফিকুন্নবী গ্রীসে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন টানা তিন বছরের জন্যে।
আনন্দময় স্বপ্ন দেখলে মনে চমৎকার একটা অনুভূতি জাগে। তেমনি খারাপ স্বপ্ন দেখলেও আমার শিহরিত হই, ভয় পাই। একটা অজানা আশঙ্কার ছায়া যেন থেকে যায় কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন। তেমনি একটা স্বপ্ন দেখছিলেন কথা শিল্পী জুবাইদা গুলশান আরা।
সে সময় তিনি ডেনমার্কে ছিলেন। একদিন স্বপ্ন দেখলেন আকাশে একটা প্লেনে আগুন ধরে গেছে। এবং শেষ পর্যন্ত পুরে ধ্বংস হয়ে গেছে প্লেনটি। তারপর এই স্বপ্নের মধ্যেই দেখলেন আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিমানের পাইলটকে কাঠের কফিনে করে কবর দেয়া হলো। ঘুম ভাঙার পর ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন জুবাইদা গুলশান আরা। তখন তার এক ঘনিষ্ট আত্মীয় বিমানের সাথে সংশ্লিষ্ট চাকুরি করেন। তিনি তাদের খবরাখবর নিয়ে সতর্ক থাকতে বললেন।
এর ঠিক পরের মাসেই জুবাইদা গুলশান আরার সেই আত্মীয় এয়ার কমোডর বাশারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি তখন দেশে ফিরে এসেছেন। টেলিভিশনে যখন বাশারের মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা দেখছিলেন তখন স্তম্ভিত হয়ে গেলেন জুবাইদা গুলশান আরা। ঠিক এ ঘটানাটাই স্বপ্নে ঘটতে দেখেছিলেন তিনি।
(সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত)