published : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১
জন্ম তার সোনার চামচ মুখে নিয়ে। পায়রাবন্দের বিশাল জমিদার বাড়িতে বিলাস উপকরণ আর দাসদাসী পরিবেষ্টিত জীবনে বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু যত বড় হচ্ছেন একটু একটু করে বুঝতে পারছিলেন ভাইদের সাথে তার বৈষম্য বাড়ছে। বড় দুভাইকে স্কুলে পাঠালেও তাদের দুবোনকে থাকতে হলো ঘরে। কারণ স্কুলে গেলে পর্দা নষ্ট হবে। তারপরও প্রবল আগ্রহের কারণে ভাইয়ের কাছেই পাঠ নিতে লাগলেন। বাংলা পড়া নিষিদ্ধ হলেও লুকিয়ে লুকিয়ে সেটাও আয়ত্ত করে ফেলেন ভাইয়েরই সহযোগিতায়।
১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল। স্বামী ছিলেন মুক্তমনা এক আলোকিত মানুষ। মেধার বিকাশে পেলেন স্বামীর পূর্ণ সহযোগিতা। কিন্তু এ সুখ সৌভাগ্য স্থায়ী হলো না। মাত্র ৩১ বছর বয়সে বিধবা হলেন। দুটো মেয়ে হয়ে মারা গেল শিশুবয়সেই। ব্যক্তিগত শোককে পরিণত করলেন বঞ্চিতের জন্যে কাজ করার শক্তিতে। স্বামীর মৃত্যুর ৬ মাসের মাথায় ভাগলপুরে মাত্র ৫ জন ছাত্রী নিয়ে শুরু করলেন মেয়েদের একটি স্কুল। কারণ তিনি বুঝেছিলেন একমাত্র শিক্ষাই পারে বাঙালি মুসলিম নারীকে মুক্তির পথ দেখাতে।
যে সময়ে লেখাপড়াকে মনে করা হতো নারীর পর্দার খেলাপ হিসেবে, সে সময় এই উদ্যোগ নিতে গিয়ে তাকে কত লড়াই করতে হয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রী যোগাড় করেছেন। এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লেখার জন্যে হাতে কলম তুলে নিয়েছেন। সেই সাথে অসাধারণ কিছু গল্প, নাটক উপন্যাস আর ব্যাঙ্গাত্মক রচনা দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। তিনি বেগম রোকেয়া। বাঙালি মুসলিম নারীর মুক্তির অগ্রদূত। বাঙালি নারীদের আজকের যে স্বাধীনতা, যে অধিকার সচেতনতা এটি তার পরিশ্রমেরই ফসল।
এত বিরুদ্ধ পরিবেশে একজন নারী হয়ে বেগম রোকেয়া যেভাবে লড়েছেন তা এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। আসলে উদ্যোগ সবসময় নিজেকেই নিতে হয়। নিজের স্বপ্ন নিজেকেই বাস্তবায়ন করতে হয়। ভালো রেজাল্টের জন্যেও উদ্যোগী হতে হবে আপনাকেই। আপনার মা, বাবা, ভাই বোন বা প্রাইভেট টিউটর বা অন্য কেউ শত উদ্যোগী হয়েও কিছুই করতে পারবে না যদি আপনি নিজে বদলাতে না চান।