published : ১২ জুলাই ২০২১
ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি খুব অনুভূতিপ্রবণ। কাউকে কষ্ট দেওয়া তার স্বভাবে ছিল না। দেখতে ছিল নাদুসনুদুস সুদর্শন। সুন্দর করে কথা বলত - শুদ্ধ উচ্চারণে প্রমিত বাংলায়।
ঘরময় ছড়ানো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই আর দেয়ালে সাজানো ক্লাসে প্রথম হওয়ার স্মারক আর অঙ্কনের পুরস্কার।
স্কুলের ডিবেটিং ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের সদস্য ছিল। খেলাধুলায়ও ছিল ঝোঁক। একবার ক্লাসে ফুটবল টিম গঠনের জন্যে টিচার ছাত্রদের নাম দিতে বললেন।
ছেলেটি নাম দিতে গেল। ‘তুই তো মোটকা! দৌড়াবি ক্যামনে? হাঁটতেই পারস না। আয় আমার সামনে হাঁট!’ এভাবেই তখন উপহাস করলেন ক্রীড়াশিক্ষক।
এরপর ছাত্রদের দিয়ে টেবিল সরিয়ে জায়গা তৈরি করেন। সেখানে কয়েক চক্কর হাঁটালেন। সেটা দেখে সহপাঠীরা মটকু বলে উল্লাস আর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
তাদের অট্টহাসির শব্দে কেউই হয়তো তখন বুঝতে পারে নি নরম স্বভাবের ছেলেটা লজ্জায় কতটা কুঁকড়ে গিয়েছিল সেদিন।
কিশোরমনে এই উপহাস কতটা দাগ ফেলেছিল তার প্রমাণ পাওয়া গেল মাত্র ১৭ বছর বয়সে যখন আজওয়াদ আহনাফ করিম সামিন নামে ছেলেটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।
সেদিন বাসায় এসে সামিন মাকে বলেছিল, ‘মা’ আমার মারা যেতে ইচ্ছে করছিল যখন তারা ওভাবে হাসছিল’।
এ ঘটনার পর থেকে স্কুলে অনিয়মিত হয়ে গেল ছেলেটি। এক পর্যায়ে ওজন কমাবার জন্যে হন্যে হয়ে উঠল। ইন্টারনেট ঘেঁটে কিটো ডায়েট করা শুরু করে দিল।
জুন মাসে তার ওজন ছিল ৯৩ কেজি। জুলাই থেকে সামিন শুরু করে ডায়েটিং। ডিসেম্বরে তার ওজন দাঁড়ায় ৬০ কেজি। মানে ৩৩ কেজিরও বেশি ওজন কমায় সামিন।
তখনো পরিবার কিছু বুঝতে পারে নি। ভাবছিল যে, ছেলেটা একটু খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই হয়তো ওজন কমছে।
কিন্তু ততদিনে সামিন আক্রান্ত হয়েছে eating disorder এ। কোনোবেলায় সামান্য বেশি খেয়েছে মনে করলে বাথরুমে গিয়ে বমি করে ফেলত।
খেতে যেন না হয় সেজন্যে জানালা দিয়ে খাবার ফেলে দিত।
সারাক্ষণ ভয়ে থাকত যদি ওজন বেড়ে যায়, তাহলে তো আবারো তাকে স্কুলে খ্যাপাবে!
জানুয়ারির শেষদিকে এসে সামিনের কিছু শারীরিক পরিবর্তন নজরে আসে পরিবারের।
তার পায়ের গোড়ালি ফুলে গিয়েছিল, স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে গিয়েছিল এবং সে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল।
তখন তাকে প্রথম চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ছেলেটি প্রথম জানায় সে ইন্টারনেট দেখে এই ডায়েট প্রোগ্রামটি অনুসরণ করছিল।
ডাক্তাররা বলেন, সামিন অ্যানারেক্সিয়া নারভোসা নামে অসুখে আক্রান্ত হয়েছে।
অ্যানারেক্সিয়া নারভোসা আহার সংক্রান্ত একটি রোগ, যা ব্যক্তির মধ্যে মানসিক সমস্যাও তৈরি করে।
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি না খেয়ে থেকে অথবা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খেয়ে ওজন কমাতে চায় এবং ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে ভীতিতে ভোগে।
এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলেটিকে একইসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ডায়েটিশিয়ান, সাইেকালজিস্ট এবং সাইক্রিয়াটিস্টের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়।
কিন্তু ততদিনে তার ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে কমে গেছে। সেই সঙ্গে তার ওজন দ্রুত কমে যাচ্ছিল।
মে মাসের দিকে তার ওজন দাঁড়ায় ২৯ কেজি।
এদিকে, নিয়মিত চিকিৎসা এবং মনোবিদের সাহায্যে ছেলেটির ওজন কিছুটা বাড়লেও, শেষ পর্যন্ত জুন মাসের শেষদিকে সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।
২৫শে জুন তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। মারা যায় সামিন।
মর্মান্তিক এই ঘটনাটি অন্তত তিনটি বিষয় তুলে এনেছে আমাদের সামনে-
সামিনের বাবা ফজলুল করিম বলেন, ‘স্বাস্থ্য একটু ভালো হওয়ায় ছেলেটা সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখত। কোচিংয়ে যেতে আপত্তি করত না। কিন্তু ক্লাস এইটে উঠে হঠাৎ স্কুলে যেতে চাইত না।
পরে জানতে পারি, শিক্ষকদের কাছে অপমানিত হওয়ার পর সহপাঠীরাও তাকে পেছন থেকে এসে মারত। স্বাস্থ্য ভালো ছিল বলে মেরে আরাম পেত। স্কুলের বাথরুমে একবার আটকে রেখে সহপাঠীরা মারধর করেছিল।
এই অপমান আর উপহাস সহ্য করতে না পেরেই ছেলেটি কিটো ডায়েট করে না খেয়ে ওজন কমাতে শুরু করে।’
শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রতি বা শিক্ষার্থীরা পরস্পরের প্রতি সমমর্মিতা, সম্মানবোধ থাকলে এবং শুদ্ধাচার থাকলে এই বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটত না।
ইন্টারনেট এখন অনেক তথ্যপ্রাপ্তির স্বাচ্ছন্দ্যকে যেরকম নিশ্চিত করেছে, তেমনি অপতথ্যের সহজলভ্যতাকেও বাড়িয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে!
যে কেউ যে-কোনো কিছু লিখে বা ভিডিও করে ছেড়ে দিলেই এখন তা ডায়েট। আর তা দেখে একজন সাধারণ কিশোর বা কিশোরী বা তরুণ বা তরুণী ভাবছে চিকন হওয়ার এই বুঝি সহজ তরিকা!
এদেরকে আরো বিপথগামী করার জন্যে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তিকর সব তথ্য প্রচারক ইন্টারনেট ক্লাব। এরা বলে, বিয়িং থিন ইজ মোর ইম্পর্টেন্ট দ্যান বিয়িং হেলথি।
অ্যানেরেক্সিয়াকে কোনো অসুখ নয়, এরা চিত্রিত করে একটা লাইফস্টাইল হিসেবে। থাকে অ্যানারেক্সিক সব অস্থি-চর্মসার মডেলদের ছবি।
মা-বাবার আড়ালে কিশোর-কিশোরীরা এসব গ্রুপের কথাবার্তায় প্রভাবিত হয়।
সামিনকে তার মা-বাবা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছেন, সেবাযত্ন করেছেন ঠিক। কিন্তু সেটা তখন যখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
স্কুলে বুলিংয়ের কথা মা-বাবাকে বলেছিল সামিন। তারা এটাকে গুরুত্বের সাথে নিলে হয়তো ছোটখাটো যা প্রতিকার হতো তাতে অন্তত পরিস্থিতি এত খারাপের দিকে যেত না।
শুধু তাই না, মাসের পর মাস একটি কিশোর খাবার নিয়ে বিভ্রান্তিকর ডায়েট প্ল্যান চর্চা করছে। মা-বাবা যদি যথার্থ অর্থে মনোযোগী হতেন, তাহলে এটা কি তাদের চোখ এড়াত? নিশ্চয়ই না।
অল্প বয়সী সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে না নেয়ার প্রবণতা অধিকাংশ মা-বাবার মধ্যেই দেখা যায়। যা হয়তো একসময় সন্তানকে করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।
আসলে সবার উচিৎ নিজের সন্তানের বন্ধু হওয়া যাতে করে সন্তান সবথেকে কম্ফোর্ট জোনটা পায় আপনার কাছ থেকে। তাই সন্তানকে যে-কোনো কিছু শেয়ার করার সুযোগ দিন। সন্তানের জীবনে একটি সুন্দর লক্ষ্য দিন। প্রত্যেক শিশুকেই সমান মনোযোগ দিন।
সন্তান ইন্টারনেট দেখে কী অনুসরণ করছে সেদিকেও খেয়াল রাখুন। ইন্টারনেট আসক্তি থেকে নিজে বেরিয়ে আসুন তাহলে সন্তানও আপনাকে অনুসরণ করবে।
আসলে এই তিনটি প্রসঙ্গেই কোয়ান্টাম গত তিন দশক ধরে নিরন্তর কাজ করে চলেছে যাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসে। এর মধ্যে ডায়েট সংক্রান্ত বিষয়ে কোয়ান্টাম কী বলে কী বলেছে তার কিছু উদ্ধৃতি নিচে তুলে ধরা হলো-
২০১৯ সালে নভেম্বরের ৭ তারিখে প্রকাশিত সায়েন্টিফিক আমেরিকান একটি জার্নালে বলা হয়, একটা টিভি শো ছিল–বিগেস্ট লুজার নামে যেখানে কীভাবে মোটা বা চিকন হচ্ছে তা দেখানো হয়। এবং প্রোগ্রামটি এখন থেকে ১০ বছর আগে খুব আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রোগ্রাম ছিল যে, এত মোটা মোটা লোক কীভাবে চিকন হয়ে যাচ্ছে!
তো এদেরকে ট্র্যাক করা হয়। টেলিভিশন সিরিজে তারা যখন শো করছিল প্রত্যেকে কমপক্ষে ৫০ পাউন্ড ওজন কমিয়েছে। অর্থাৎ একেকজন ২৫ কেজি করে ওজন কমিয়েছে।
কিন্তু এরপর এদের অধিকাংশই দু বছর পর আগে যা ওজন নিয়ে শুরু করেছিল সে সময়ের চেয়েও তাদের ওজন বেড়ে গেছে।
ফিটনেস হচ্ছে এখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় ক্রেজ।
ধরুন আপনি ইউটিউব ভিডিওতে দেখলেন ফিটনেস পদ্ধতির নাম ‘কিটো’। ভিডিওতে দেখলেন আর কিটো হয়ে গেলেন! মেডিকেল গবেষণা রিপোর্টে এগুলোকে হরিবল রিপোর্ট বলে!
আসলে ইন্টারনেটে কিছু দেখলেই এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নাই। কেউ ভিডিও দেখে নিজের শরীরের ব্যাপারে নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কখনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।
আসলে ভিডিওতে আমরা একটা পার্ট দেখি। পরের পার্ট কিন্তু দেখি না। যখন দেখানো হয় তখন প্রথম অংশটাই দেখানো হয়। যেমন, জিমখানাতে গেলে কী হবে? এর উপকার কী? কিন্তু শেষ অংশটা দেখানো হয় না। শেষ অংশটা হলো আপনার আল্টিমেট পরিণতি কী? যখনই আপনি কম সময়ে ওজন কমাতে যাবেন অর্থাৎ এক্সট্রিমে যাবেন সেটা আপনার ধ্বংস ছাড়া কিছু করবে না।
সম্প্রতি কিটো এবং ভেগান পদ্ধতি খুব জনপ্রিয়। এই ভেগান কিটো এসব কিন্তু খাবার নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি নয় এগুলো হলো থেরাপি বা ওষুধ। সবসময় মনে রাখবেন, ওষুধ কখনো নিজের ইচ্ছায় খাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে খেতে হয় রোগ প্রতিকারের জন্যে। ধরতে পারেন এই ভেগান কিটো এসবও এক ধরনের প্রতিকার। কীসের প্রতিকার?
আপনি যে জুলুম করেছেন নিজের ওপরে এক্সট্রিম করে অর্থাৎ প্রচুর খাওয়া-দাওয়া করেছেন অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শরীরের ১২টা বাজিয়েছেন এটার এক্সট্রিম হচ্ছে থেরাপি। তো এই থেরাপিটা কিন্তু নরমাল জিনিস না।
বিষয়টার আরো সহজ উদাহরণ দেয়া যায়। ধরুন, দেশে যখন চোর ডাকাত বেড়ে যায় তখন আসে মার্শাল ল’। মার্শাল ল’টা হলো আরেকটা এক্সট্রিম। মার্শাল ল’ অরাজকতার প্রতিষেধক না। এটা হচ্ছে এক্সট্রিম এটা প্রতিকার। ঠিক তেমনি অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলে যে অতিরিক্ত ওজন বেড়েছে এটা কমাতেই এই কিটো এই ভেগান। যা এক্সট্রম্লি প্রতিকার করে।
আসলে এই যে ফিটনেস ইন্ডাস্ট্রি ১০০ বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি আমেরিকাতে একশ বিলিয়ন ডলার। ওয়েট লস্ট ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে সেভেনটি থ্রি বিলিয়ন ডলার। আর ভেগান হচ্ছে ২৪ বিলিয়ন ডলার! ব্যবসা।
ভেগান ফুড কিন্তু ঠিক এবং খাবারের মধ্যে ক্ষতিকর খাবার নাই। কিন্তু মূল অসুবিধাটা হচ্ছে ভিটামিন বি-টুয়েলভ ডেফিসিয়েন্সি। এবং বি-টুয়েলভতে বেশি ডেফিসিয়েন্সি হয়ে যায় তাহলে বয়স হলে ব্রেনটা শ্রিঙ্ক করবে শেকিং হবে। ভিটামিন বি-১২ ডেফিশিয়েন্সি বেশি হলে যা যা হয় সবকিছু হবে। এবং বোনটা দুর্বল হয়ে যাবে।
তাহলে এ ব্যাপারে করণীয় হচ্ছে- এই থেরাপি আপনার জন্যে প্রযোজ্য কিনা, আপনার ফিজিকেল কন্ডিশনের উপযুক্ত কিনা, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে কিনা এই বিষয়গুলো যাচাই করা।
শরীর যদি একবার ভেঙে যায় এটাকে জোড়া লাগানো বা এটাকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম ব্যাপার। এজন্যে যে-কোনো থেরাপি ভেগান হোক বা কিটো বা আরো যা পদ্ধতি আছে এগুলো ইউটিউব দেখে অনুসরণ করবে না।
কারণ ভেগানটা মূলত হার্ট ডিজিজের জন্যে উদ্ভাবিত হয়েছে। আপনার হার্ট ডিজিজ নাই সুস্থ মানুষ আপনার কি ভেগান করার প্রয়োজন আছে? যদি না থাকে তাহলে সুস্থ খাদ্যাভ্যাস করুন।
অতএব যে-কোনো থেরাপি ব্যবহার করতে গেলে ইউটিউব দেখে বা ইউটিউবের বক্তব্য শুনে করবেন না।
আর আপনি অসুস্থ হয়ে গেলে ইউটিউব এর কোনো দায়-দায়িত্ব নেবে না। অতএব আপনার স্বাস্থ্য আপনাকেই রক্ষা করতে হবে।
আপনি যদি ওয়েট লুজ করতে চান তাহলে আপনাকে ধারাবাহিক ফর্মুলা ফলো করতে হবে।
ফর্মুলাটা খুব সহজ। পরিমিত আহার গ্রহণ করতে হবে। যা পেলাম তাই খেলাম, যত খুশি এবং যখন খুশি তখন খেলাম তা নয়। আপনার ব্রেনকে প্রোগ্রাম দিতে হবে।
যে-রকম একজন বিশ্বাসী মানুষ যদি হারাম খাবার দেখে সে কি খেতে আগ্রহী হয়? সে বলে যে, না খেয়ে আছি, ভালো আছি। কিন্তু হারাম খাব না। তো ব্রেনও সে-রকম। যখন প্রোগ্রাম হয়ে যাবে সে তখন অতিরিক্ত খাবার দেখলে প্রত্যাখান করে বলবে, আমার এই এই জিনিসটা খাওয়া উচিৎ না। আমি খাব না।
আসলে ফুড ইন্ডাস্ট্রি প্রথমে খাইয়ে উপার্জন করে এবং এদেরই প্যারালাল ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে ডায়েট ইন্ডাস্ট্রি। তারা আবার না খাইয়ে এবং এক্সারসাইজ করিয়ে, জিমখানা স্থাপন করে দ্বিতীয় দফায় উপার্জন করে। এবং সাধারণ মানুষ হচ্ছে ভিকটিমস এই দুই ইন্ডাস্ট্রির।
কোয়ান্টাম ফর্মুলা হলো- সবকিছুই খাবেন। যা কিছু আপনার ধর্মবিশ্বাস ও আপনার রুচি অনুমোদন করে, তা সবই খাবেন। খাবারের ব্যাপারে বিশ্বের সচেতন মানুষেরা এখন প্রাকৃতিক খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। পাশ্চাত্য স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ এখন টিনজাত, প্রক্রিয়াজাত ও পরিশোধিত খাবারের বদলে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।
ধরুন একজনের অবকাঠামো হচ্ছে চিকন। সে যদি বেশি খায় তাহলে তার বডি স্ট্রাকচার বাড়বে না। কিন্তু মেদ বাড়বে। ওজন কমানোরও প্রসেস আছে। সিস্টেম আছে। বিশেষত ফিগার ঠিক রাখতে আপনাকে যত্ন নিতে হবে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন।
উপরোক্ত ফর্মুলা প্রয়োগ করলে খাবারকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। খাবার আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে না।
সবসময় পরিমিত খাবার খান। বেশি খেলে রোগব্যাধি বেশি হবে।
এ ব্যাপারে নবীজী (স) বলেছেন, তুমি তোমার পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাবার ও এক-তৃতীয়াংশ পানীয় দ্বারা পূর্ণ করো। আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ ফাঁকা রাখো। দীর্ঘ নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে, এভাবে খাবার গ্রহণ করলে পাকস্থলীর ব্যাধি থেকে পুরোপুরি মুক্ত থাকা যায় এবং শরীরের ওজন সবসময় নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সকালবেলা ভরপেট নাশতা করুন, দুপুরে তৃপ্তির সাথে খান এবং রাতে খুব হালকা খাবার গ্রহণ করুন।
অর্থাৎ এক্সট্রিম কোনোকিছু না। না ব্যায়ামে, না খাবারে, না পোশাকে, না চিন্তায়। সবসময় মধ্যপন্থায় কাজ করতে হবে। এই মধ্যপন্থাটাই হচ্ছে শুদ্ধ।
আসলে খাওয়ার জন্যে বাঁচতে চাইলে খাবার মৃত্যু ডেকে আনবে। আর বাঁচার জন্যে খেলে খাবার প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত করবে। তাই প্রতিদিন মনে মনে বলুন, আমি বাঁচার জন্যে খাব।