কোয়ান্টামের যে ৬ ভাবনা আজ বাস্তব

কোনো কিছু বাস্তব অস্তিত্বে আসার আগে জন্ম নেয় ভাবনার জগতে। ভাবনার শক্তি বদলে দেয় বাস্তবতা।

কথাটি কোয়ান্টামের ক্ষেত্রেও খুবই প্রাসঙ্গিক। তিন দশকে কোয়ান্টাম এমন অনেক কিছুর কথা-ই বলেছে, যেগুলো তখন হয়তো কল্পনাও করা যেত না, কিন্তু এখন সেগুলো বাস্তব।

১. কোমল পানীয়ের বদলে ডাব হয়েছে জনপ্রিয়

একটা সময় পেপসি, কোকাকোলা ইত্যাদি সফট ড্রিঙ্কস রীতিমতো আসক্তির বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। স্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর এই তথাকথিত কোমল পানীয়ের বিরুদ্ধে কোয়ান্টাম সোচ্চার হয় সোয়া শতক আগে। আহ্বান জানায় ক্লান্তি কাটাতে সফট ড্রিংক্সের পরিবর্তে ডাব খাওয়ার। আমরা খাওয়া শুরু করলে ডাব হবে সহজলভ্য- এই ছিল আমাদের ভাবনা।

সেই সময়টাতে ঢাকা শহরে নির্দিষ্ট কিছু কিছু দোকান ছাড়া ডাব পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন শহরের গলিতে গলিতে পাওয়া যায় ডাব। বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও এখন দেশে এর চাষাবাদ হচ্ছে।

২. ইলিশ বেড়েছে পরিমাণে ও গড় ওজনে

পান্তা-ইলিশ নামক অপসংস্কৃতির কবলে পড়ে দেশে একটা সময় প্রজনন মৌসুমে নির্বিচারে নিধন হতে থাকে মা ইলিশ। পরিণামে ইলিশে সমৃদ্ধ এই বাংলায় ইলিশ হয়ে দাঁড়ায় দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য।

২০১৩ সালে কোয়ান্টাম আহ্বান জানায় পান্তা-ইলিশ বর্জনের। আমরা বলেছিলাম, বৈশাখে যদি আমরা ইলিশ খাওয়া বন্ধ করি তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যে ইলিশের সাইজ বড় হবে।

আমাদের এই ভাবনা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। পরবর্তীতে বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, সুশীল সমাজের মানুষেরাও পান্তা-ইলিশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা ঘোষণা দেন নববর্ষের খাদ্যতালিকায় ইলিশ রাখছেন না!

ফলাফল- ৫/৬ বছরে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে বহুলাংশে। ওয়ার্ল্ডফিশের মতে, বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশই এখন উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে।

বেড়েছে গড় ওজনও। ২০১৩ সালে ইলিশের গড় ওজন ছিল ৫১০ গ্রাম। এখন তা ৮৫০/৯০০ গ্রাম!

৩. দেশেই এখন আবাদ হচ্ছে ‘সৌদি’ খেজুর!

মিষ্টির বদলে খেজুর- একই সাথে মিষ্টি বর্জন আর খেজুর খাওয়ার দুই সুন্নত পালনের আহ্বান জানায় কোয়ান্টাম।

দেশে তখন পাওয়া যেত হাতেগোনা কয়েকটি জাতের খেজুর। ছিল না সহজলভ্য। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করেছি, নিজেরা যখন এই সুন্নত দুটি পালন করবো তখন দেশেই খেজুর উৎপন্ন হবে শুধু না, আমরা পরিণত হবো শীর্ষ খেজুর রপ্তানিকারক দেশে।

সেই ভাবনা আজ অনেকটাই বাস্তব! মাগুরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাগেরহাটসহ দেশের প্রায় ২০টি জেলায় এখন আবাদ হচ্ছে ‘সৌদি’ খেজুর আজওয়া, বেরহি এবং মরিয়ম।

দেশে এখন খেজুর সহজলভ্য, দামেও বেশ সস্তা। ছোটখাট দোকান তো বটেই, শহরের রাস্তায় কার্টে বিক্রি হচ্ছে খেজুর।

৪. ডিলিট ফেসবুক

ফেসবুক যে আমাদের মেধা, মনন, সামাজিক বুনন আর মনের প্রশান্তির জন্যে কতটা ক্ষতিকর তা এখন প্রমাণিত সত্য। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ‘ডিলিট ফেসবুক’ আন্দোলন শুরুর বহু আগেই কোয়ান্টাম ডাক দিয়েছিল ফেসবুক বর্জনের। সে সময়টাতে না ছিল কোনো দৃষ্টান্ত, না ছিল বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি। ছিল শুধু বিশ্বাস- আমরা শুরু করলে সত্যের বাণী পৌঁছে যাবে সর্বত্র!

হয়েছেও তা-ই! কোয়ান্টামের গণ্ডি পেরিয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যেও হিড়িক পড়ে ফেসবুক ডিলিটের।

সামগ্রিক চেতনার প্রভাব পৌঁছে গেছে বহির্বিশ্বেও। কোয়ান্টাম বলার এক বছরের মধ্যে ডিলিট হয়েছে দেড়শ’ কোটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট!

৫. দেশীয় অর্থনীতির প্রসার

বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ দশ জাতির এক- কোয়ান্টাম ১৯৯৩ সালে যখন এই কথা বলতে শুরু করে তখন অনেকেই সেটাকে পাগলের প্রলাপ আখ্যা দিয়েছিল। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র এই দেশটি যে একদিন ঘুরে দাঁড়াবে তা বিশ্বাস করাটা আসলেই কঠিন ছিল সেসময়।

কিন্তু আজ?

বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, আইডিবির মতো সংস্থাগুলো এখন বলছে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ‘ইকনোমিক সুপার পাওয়ার’, যার লক্ষণ এখন দৃশ্যমান। অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনেক সূচকেই আমরা এখন সেরা ১০ জাতির এক।

৬. দিনাজপুর টু কক্সবাজার রেললাইন

‘দিনাজপুর থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাবে ট্রেন’- এই সংবাদ শিরোনাম এখন আর কাউকে চমকায় না। কিন্তু গত নব্বইয়ের দশকে কোয়ান্টাম যখন এটা বলেছিল তখন অনেকেই সেটাকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল।

আসলে ভাবনা যে কত শক্তিশালী আর সঙ্ঘবদ্ধ ভাবনা যে কী অসাধ্য সাধন করতে পারে তার প্রমাণ এই দিনাজপুর-কক্সবাজার রেলপথ।

এই রেল প্রকল্পে কোনো সক্রিয় অংশগ্রহণ কোয়ান্টামের কারোরই হয়তো নেই, এক কোদাল মাটি কাটিনি আমরা কেউই। আমরা শুধু ভেবেছি, বিশ্বাসটাকে দৃঢ় রেখেছি। কালক্রমে ভাবনা-ই রূপ নিয়েছে বাস্তবতায়।