আমাদের জন্যে সেরা কর্মক্ষেত্র তৈরি করব আমরাই; সফল ৫ স্টার্ট-আপের কথা

লেখাপড়া কেন করেন, বা লেখাপড়া শেষে কী করবেন- এই প্রশ্নের জবাবে হয়তো ৯০ শতাংশ ছেলেমেয়েই বলবে ‘ভালো’ চাকুরীর কথা। ভালো চাকুরী মানে অনেক বেতন, আর বোনাস প্রমোশন হাউজিং ফ্যাসিলিটি কার ফ্যাসিলিটি। সেই সাথে ব্র্যান্ড ভ্যালু; কারণ বুক ফুলিয়ে বলতে হবে তো, অমুক জায়গায় তমুক পদে চাকুরী করি! সাফল্যের ষোলকলা পূর্ণ হবে চাকুরিটা যদি হয় সরকারি!

কিন্তু পেশা মানে কি কেবলই চাকুরী?

সেরা কর্মক্ষেত্র মানে কি শুধু বিসিএস, ব্যাংক, মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানী বা ঝা-চকচকে করপোরেট প্রতিষ্ঠান? এটা মানে কি নয় মেধা বিকাশের, পৃথিবীতে কিছু করে রেখে যাবার সুযোগ? আনন্দ কি এটা বলতে পারা নয় যে, আমি কিছু কাজ করতে পেরেছি- আমার পরিবারের জন্য, দেশের জন্য, মানুষের জন্য?

আসলে পেশাজীবন সার্থক হবে যদি এর মাধ্যমে প্রাচুর্যবান হওয়ার পাশাপাশি নিজের ও অন্যের কল্যাণে মেধার সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়।

কিন্তু চাকুরি করে একজন মানুষ কতটা প্রাচুর্যবান হতে পারবেন? কারণ স্যালারির তো একটা সীমা আছে! আবার পেশাজীবনে পার্থিব সকল প্রাপ্তির পরও একটা শূন্যতাবোধ এসে যায়, যে পৃথিবীর বুকে নিজের কোনো চিহ্ন তো রেখে যেতে পারলাম না!

নিজের ও অন্যের কল্যাণে কাজ করার ইচ্ছাপূরণ হতে পারে স্বাধীন পেশার মাধ্যমে

যেখানে আপনার অবস্থান চাকুরিজীবী নয়, চাকুরিদাতা!

আনন্দের ব্যাপার হলো তরুণসমাজে পেশা নিয়ে চিন্তাধারা বদলাচ্ছে। অনেক যোগ্যতা ও মেধাসম্পন্ন তরুণ লেখাপড়া শেষে চাকুরি না খুঁজে নিজের মেধা ও পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন বিশ্বমানের স্টার্ট-আপ।

এমনই ৫ সফল স্টার্ট-আপের গল্প।

রিভ সিস্টেমস : শুরুটা যার গ্যারেজ থেকে

বৈশ্বিকভাবে ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি)-নির্ভর সাশ্রয়ী টেলিযোগাযোগের জন্যে অন্যতম সেরা সফটওয়্যার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমস। ২০০৩ সালে ঢাকার খিলগাঁয়ে একটি গ্যারেজ এম রেজাউল হাসান তার বন্ধুদের নিয়ে শুরু করেন এই কোম্পানি।

মোবাইল ভিওআইপি, ভিওআইপি বিলিং, ব্যান্ডউইথ অপটিমাইজেশন, ই-গভার্নেন্স, মোবাইল ওটিটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিজেদের নেতৃস্থানীয় অবস্থানে নিয়ে গেছে এই বাংলাদেশী বহুজাতিক, সেবা দিচ্ছে পৃথিবীর ৭৮টি দেশে ৪,৫০০-রও বেশি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে।

'বিশ্বজোড়া পাঠশালা' খান একাডেমি

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল এবং এমআইটিতে লেখাপড়া শেষে সালমান খান কর্ম জীবন শুরু করেন পার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠানে নবীশ হিসেবে। পরবর্তীতে যোগ দেন হেজ ফান্ড প্রতিষ্ঠানে পুঁজি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গবেষনার কাজে। কিন্তু চাকুরিগুলো থেকে কোন তৃপ্তি না পাওয়ায় উদ্যোগী হন ভিন্নধর্মী একটি কাজে- অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাদান; প্রতিষ্ঠা করেন ‘খান একাডেমী’।

২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির স্লোগান হচ্ছে, "সকলের জন্য, সব জায়গায় বিনামূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষাদান"। বাস্তবেও প্রতিষ্ঠানটি তাই-ই করছে সফলভাবে। খান একাডেমির ওয়েবসাইট ও ইউটিউবে আছে প্রায় ১০ হাজার ভিডিও, ৩ হাজার আর্টিকেল এবং ৫০ হাজার এক্সারসাইজ, যার সবই সবার জন্য উন্মুক্ত। বিশ্বজুড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী এবং ২ লাখ শিক্ষক যুক্ত রয়েছেন এই প্ল্যাটফর্মে।

নিউজক্রিড

ঢাকার বনানীর একটি গ্যারেজে তরুণ তিন বন্ধুর উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে নিউজক্রিড। বিভিন্ন বিজনেস ব্র্যান্ডগুলোকে কন্টেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে তারা। তাদের ক্লায়েন্টের মধ্যে আছে প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, ব্লু ক্রস ব্লু শিল্ড, স্প্রিন্ট, জেরক্স, ভিসা, ব্যাংক অব আমেরিকা, এআইজি, দ্য হার্টস্ট কর্পোরেশন এবং টাইম ইংকের মতো নামি-দামি ব্র্যান্ড। তাদের ব্যবসায়িক প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশ ছাড়িয়ে আমেরিকায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

অনলাইন পাঠশালা ‘টেন মিনিট স্কুল’

10 Minute School-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আইমান সাদিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-তে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করার পর চাকুরির রেসে সামিল না হয়ে ভিন্ন কিছুর কথা ভাবেন। শিক্ষক হওয়ার আজন্মলালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন তিনি। তবে সরাসরি শ্রেণীকক্ষে নয়, ক্লাস নেন তিনি অনলাইন ক্লাসরুমে! আর এটা সম্ভব হয়েছে ২০১৫ সালে অনলাইন এডুকেশনাল প্ল্যাটফর্ম 10 Minute School প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।

পাবলিক পরীক্ষাগুলোসহ ১ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্যে একাডেমিক সিলেবাসের বিভিন্ন টপিকে ছোট ছোট ভিডিও, স্মার্টবুক, কুইজ ও ব্লগের মাধ্যমে শিক্ষাদানের কাজটি করে থাকে এই প্রতিষ্ঠান। আর এর মধ্য দিয়ে তারা পৌঁছেছে লাখো শিক্ষার্থীর কাছে।

টেক সেন্ট্রাল সলিউশনস

মাহমুদুর রহমান ইরেশ ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পর ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার একটি কোম্পানিতে জয়েন করেন। সেখান থেকে আরেকটি মালয়েশিয়ান মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। কিন্তু তিনি অচিরেই বুঝতে পারলেন চাকুরি করে প্রাচুর্যবান হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা যাবে না। তাই একটা পর্যায়ে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন স্বাধীন পেশা- এন্ট্রিপ্রেনিয়রশীপ।

এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে ২০১৪ সালে গড়েন Tech Central Solutions (TCS) নামে একটি টেক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি মূলত SCADA, PLC programming, CCTV monitoring, ERP systems নিয়ে কাজ করছে। কালে কালে ইরেশ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। তাকে ধরা হয় মালয়েশিয়ার একজন উদীয়মান তরুণ প্রবাসী বাংলাদেশি। প্রতিটি নতুন ভেঞ্চারে যার লক্ষ্য থাকে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

আরো পড়ুন:-