published : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১
ভালো প্রতিষ্ঠানের কদর আমাদের দেশে এতই বেশি যে বিষয়ের উপযোগিতা বা চাকরির বাজারে মূল্য আছে কিনা – সেটা বেমালুম ভুলে আমরা স্রেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পেছনে ছুটি। ঢাকা ভার্সিটি বা বুয়েট/মেডিকেলে পড়তেই হবে –ক'জন আছেন যারা এমনটা ভাবেন না? কিন্তু নামী প্রতিষ্ঠানে পড়েছে বলেই কি সবাই সফল হয়েছে? হ্যাঁ, পড়তে পারলে আপনার জন্যে সামনের পথটা অনেক সহজ হয়ে যায়, কিন্তু ভারি প্রতিষ্ঠানের তকমা না লাগিয়েও সফল হয়েছেন বহু মানুষ। তাই প্রতিষ্ঠানের নামের চাইতে নিজের পছন্দ ও ভবিষ্যত পেশার কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন। অনেক বড় বড় বিবিএ-এমবিএ যেমন কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনি ইংরেজি সাহিত্য বা নৃতত্ত্বে পড়ালেখা করেও অনেকে সফল হয়েছেন।
দেখবেন এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন- যার হয়তো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই; অথচ তার অধীনে ১০/১২ জন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট চাকরি করছেন! কারণ উপরে উঠবার জন্যে ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি আরও কিছু গুণ থাকা দরকার। একই কারণে দেখবেন আপনার চেয়ে কম সিজিপিএ নিয়েও কেউ আপনার চেয়ে বেশি বেতনের চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। কারণ তার আত্মবিশ্বাস, আকর্ষণীয় উপস্থাপন এবং ব্যক্তিত্বের বলিষ্ঠতা ইন্টারভিউ বোর্ডকে আশ্বস্ত করেছে। কাজেই এ গুণাবলিকে আয়ত্ত করুন।
একটা সময় ছিল ডাক্তারি/ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যুগ। দলে দলে সবাই এগুলো পড়তে যেত। আবার এখন এসেছে বিবিএ/ এমবিএ-র সময়। যে যেখান থেকে পারছে বিবিএ করছে- সেটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হোক, বা বেসরকারিই হোক। অথচ হাতে গোনা কয়েকটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাদে বাকিগুলোর পড়ালেখার মান মোটেও উন্নত নয়। আবার স্রেফ ডাক্তারি পড়ব বলে অনেকে লাখ-লাখ টাকা খরচ করে প্রাইভেটে পড়ছে। প্রশ্ন হলো ক'জন সত্যিকার অর্থে এই বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান? বেশিরভাগই কিন্তু হুজুগের বশে সিদ্ধান্ত নেন।
আবার চাকরি বা ব্যবসার বেলায়ও আমরা এই হুজুগেই পড়ে যাই। সবাই ফোন কোম্পানিতে চাকরি নিচ্ছে- অতএব আমিও সেখানেই যাবো; অথবা সবাই এখন অমুক জায়গায় ইনভেস্ট করছে- আমাকেও ওখানেই যেতে হবে- এমন ধারণা আসলে নিজের প্রতিভা বিকাশের জন্যে ক্ষতিকর। কারণ ট্রেন্ডকে ফলো করে আসলে এগোনো যায় না। বরং যারা বড় কিছু করেছেন তারা সবাই নতুন কিছু করেছেন।
এটাকে আমরা বলি কেরানিসুলভ মনোভাব। ব্যবসাতে ঝুঁকি আছে, চাকরিতে নেই? আবার অনেকে বলেন, বিশেষত সরকারি চাকরির ব্যাপারে, যে সরকারি চাকরি সবচেয়ে ভালো- কারণ এটা স্থায়ী। আসলে বাস্তবতা হলো চাকরিতে স্থায়িত্ব খুঁজতে গেলে আপনার কাজে স্বকীয়তা থাকবে না, তৃপ্তি এবং সাফল্য বলতে যা বোঝায় তা আপনি পাবেন না। আর জীবনেরই যেখানে স্থায়িত্ব বা নিরাপত্তা নেই, সেখানে চাকরির স্থায়িত্ব বা নিরাপত্তা কীভাবে হবে? কাজেই সাহসী হোন, আত্মবিশ্বাসী হোন। সাহস করে ঝুঁকি নিতে বা নিজেকে প্রমাণ করতে ভয় পাবেন না। তাহলেই আপনি সফল হবেন।
ক্যারিয়ার সাফল্যের কোনো শর্টকাট নেই। কাজেই অল্প আয়াসে কেউ যদি টাকা কামাতে চান, হয় তাকে হতাশ হতে হবে অথবা অবৈধ পথে যেতে হবে। আর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিইও বা সিওও-দের যারা আমাদের অনেক তরুণ-তরুণীরই ক্যারিয়ার সাফল্যের মডেল তাদের দিকে যদি তাকান, দেখবেন তাদের জীবনে কাজ ছাড়া কিছু নেই। অল্প আয়াসে বা অল্প দিনে কখনো সাফল্য আসে না।
অনেক অর্থ খ্যাতি বা ক্ষমতা অর্জন করলেই সুখী হওয়া যায় না। সুখী হওয়ার সাথে বা প্রশান্তি অর্জনের সাথে এ জিনিসগুলোর ব্যাবধান বিস্তর। তা না হলে আমেরিকায় বিষণ্নতায় ভোগা এবং আত্মহত্যাপ্রবণ পেশার র্যাংকিংয়ে সিইও-রা ওপরে থাকতেন না। শীর্ষে পৌঁছানো মানেই মানসিক পরিতৃপ্তি, সুখ বা প্রশান্তি নয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে পেশায় মানুষের সেবা করার সুযোগ রয়েছে সেসব পেশায় নিয়োজিতদের মানসিক তুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। কাজেই শীর্ষে পৌঁছানোর ইঁদুর দৌড়ে না নেমে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করুন। আপনি সুখী হবেন।