মাত্র ৭ দিনের এই চ্যালেঞ্জটি নিয়ে আপনিও পারবেন প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে!

ভুলগুলো ছোট ছোট, কিন্তু হয় হররোজ!

সকালে ঘুম থেকে উঠে কল ছেড়ে দাঁত ব্রাশ করছেন; চোখ থেকে তখনো ঘুম যায় নি। আপনি দাঁত মাজছেন, ওদিকে কলের পানি পড়ছে। এভাবে একদিনে কত পানিই আর অপচয় হয়- এক লিটার, দুই লিটার, তিন লিটার? কিন্তু মাস বছর পেরিয়ে আপনি হয়তো হাজার লিটার পানি অপচয় করে ফেলছেন প্রতিদিন সকালে মাত্র দুই মিনিট দাঁত মাজতে গিয়ে!

কথায় আছে- অপচয়ে সমুদ্র শুকায়! দিনকে দিন পানির স্তর নেমে যাওয়ার দরুন ক্ষরার মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়া আর সুপেয় পানির অভাবই প্রমাণ করে এই প্রবাদবাক্যটির সার্থকতা।

গ্যাস ও বিদ্যুতেরও অপচয় হয় আমাদের যথেচ্ছাচার আর অসচেতনতার জন্যে

মাত্র একটি ম্যাচকাঠি বাঁচাতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা কিংবা ফ্যানের বাতাসে কাপড় শুকানোর মতো অবিবেচক কাজগুলোর কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের অপচয় হয় দেদার। অসচেতনতা বা অবহেলার দরুন অপচয় তো আছেই!

ধরুন, গোসলের জন্যে চুলায় পানি গরম করতে বসিয়ে আপনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন অন্য কোনো কাজে। ওদিকে হাঁড়ির পানি ফুটে শুকিয়ে যাবার উপক্রম। এ আর এমন কী- এই ভেবে আপনি আবারো হাঁড়িভর্তি পানি চুলায় চড়িয়ে দিলেন। মধ্যিখানে গ্যাসের হলো অপচয়!

প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়রোধ প্রয়োজন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার খাতিরেই

কারণ প্রাকৃতিক সম্পদ যতই থাকুন, অসীম কিন্তু না! গ্যাস বা কয়লার মতো প্রাকৃতিক সম্পদ কিন্তু একদিনে তৈরি হয় না। অপচয়ের মাধ্যমে যে ক্ষয় হচ্ছে তা পূরণ হতে লাগবে বহু বছর। কাজেই এগুলোর অপচয়ের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছি ঝুঁকির মুখে।

অবশ্য আমাদের অপচয়ের ফল কেবল পরবর্তী প্রজন্মই ভোগ করবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই! ইতোমধ্যে শহর তো বটেই, গ্রামাঞ্চলেও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিচ্ছে খরার মৌসুমে। অগভীর নলকূপ হয়ে পড়ছে পানিশূন্য।

আসলে কঠিন সত্য হলো অপচয় অভিশাপ ডেকে আনে। প্রকৃতির সাথে অবিচার করা হলে প্রকৃতিও নির্মমভাবে এর প্রতিশোধ নেয়।

আপনি অপচয় করছেন, প্রকৃতি হিসেব রাখছে। জীবনের কোন প্রান্তে গিয়ে এই দায় চুকাতে হবে তা সময়ই বলবে!

তাই আসুন প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধ করি

রোজ রোজ ভুলের কারণে যেমন অপচয় হয়, তেমনি প্রতিদিনের একটু একটু সচেতন প্রয়াসের মাধ্যমেই সম্ভব প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন।

শুরুটা হোক তবে এখন থেকেই! আগামী এক সপ্তাহ আন্তরিকভাবে অনুসরণ করুন এই করণীয়গুলো :

১ম দিন

খেয়াল রাখুন অপ্রয়োজনে বৈদ্যুতিক বাতি বা পাখা চালু থাকছে কিনা। মাঝেমধ্যে এসি বন্ধ করে জানালা খুলে প্রাকৃতিক বাতাস আসার সুযোগ করে দিন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি, ফ্যান, রেফ্রিজারেটর ও অন্যান্য ইলেক্ট্রিক সামগ্রী ব্যবহার করুন। কাজ না থাকলে কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার বন্ধ রাখুন মনে করে।

২য় দিন

ট্যাপের পানি চালু রেখে অন্য কোনো কাজ করবেন না। বাথরুমে ঝর্নার বদলে বালতিতে পানি ভরে গোসল করুন। ওজু করুন মগ বা বদনায় পানি নিয়ে।

ট্যাপের ফাঁক গলে ফোটা ফোটা পানি পড়ছে কি? কিংবা নষ্ট হ্যান্ড-শাওয়ার থেকে? হলে ওগুলো সারাই করার ব্যবস্থা করুন।

গ্লাসভরে পানি নিয়ে কিছুটা রেখে উঠি আমরা অনেকেই, যেটা শেষমেশ ফেলে দিতে হয়। তাই গ্লাসে ততটুকু পানিই নিন যতটুকু আপনি পান করবেন।

৩য় দিন

প্রাকৃতিক আলোর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করুন; দিনের বেলা যতটা সম্ভব কাজ করুন প্রাকৃতিক আলোয়।

জানালার পর্দা সরিয়ে রাখুন, খুলে দিন বারান্দার দরজা। খবরের কাগজটা আজ নাহয় বারান্দায়ই পড়লেন!

৪র্থ দিন

কাগজ তৈরির অন্যতম উপকরণ কাঠ। Global Forest Resource Assessment-এর তথ্যমতে বিশ্বজুড়ে কাগজের চাহিদা মেটাতে দৈনিক ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার গাছ কাটা পড়ে। তাই গাছ বাঁচাতে ঠিক করুন আজ যথাসম্ভব পেপারলেস হবেন আপনি।

বাজারের ফর্দ কিংবা শর্ট রিমাইন্ডার লিখুন পত্রিকা বা ফেলনা কাগজে। ই-মেইলে যোগাযোগ করা গেলে কাগজের চিঠি বাদ দিন। প্রিন্ট করুন বুঝেশুনে, যতটা জরুরি ঠিক ততটাই। আর খসড়া লেখা বা পরীক্ষামূলক প্রিন্ট করুন ব্যবহৃত কাগজে, যার একটা পাশ ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

৫ম দিন

পানি পান শেষে হাতের বোতলটা ছুঁড়ে ফেলবেন না; এটাকে কাজে লাগান পুনরায় পানির প্রয়োজন মেটাতে। আরো ভালো হয় যদি সাথে সবসময় স্টিল বা কাঁচের একটা বোতল রাখেন।

আর কাগজের ওয়ান-টাইম কাপের বদলে কাচের কাপে চা-কফি পান কাগজ বাঁচাবে, হবে স্বাস্থ্যকরও।

৬ষ্ঠ দিন

নষ্ট বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ায়। তাই ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র ডিস্টার্ব করলে তা সারানোর উদ্যোগ নিন।

৭ম দিন

রি-ইউজ বা পুনরায় ব্যবহারের সুযোগ নিন। যেমন- দৈ-এর ভাঁড় কিংবা পানির বোতল হতে পারে ফুলের টব; কাপড়ের জালিব্যাগ উৎকৃষ্ট মাজুনি।

একটু চিন্তা করলে হাতেই কাছেই পেয়ে যাবেন আপাত ‘ফেলনা’ জিনিস থেকে দৈনন্দিত প্রয়োজন পূরণের হাজারটা আইডিয়া!

এই ৭টি টাস্ক এক সপ্তাহে সম্পন্ন করুন। পরের সপ্তাহে আবার শুরু করুন প্রথম থেকে। শুরুতে একটু একঘেয়ে পারে, কিন্তু টাস্ক শেষে যখন আত্মপর্যালোচনা করবেন কতটা রিসোর্স বাঁচালেন এবং সেজন্যে নিজেই নিজেকে অভিনন্দন জানাবেন তখন দেখবেন কেমন ভালোলাগা কাজ করছে। আর আপনার এই নীরব বিপ্লব হয়তো চারপাশের আরো বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে এই ’এক সপ্তাহের চ্যালেঞ্জটি’ গ্রহণে।