published : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
ওটা ছিলো তাদের গেমস ক্লাব। ৪৫ মিনিট খেলাধুলা করে ক্লাসে ফেরার পর ব্যাগ থেকে বই বের করে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাচ্চাগুলো রীতিমতো হতভম্ব। ওদের মধ্যে ১০/ ১২ জনের বই থেকে কে যেন কয়েকটা পাতা ছিঁড়ে নিয়েছে। যেসব পাতা ছেঁড়া হয়েছে, সামনের পরীক্ষায় সে বিষয়গুলি রয়েছে। বোকা বোকা চোখে এ ওর দিকে তাকায়। কী করবে এখন! কে করলো এটা? ঘটনা শুনে শিক্ষকরাও অবাক।
ঘটনাটা কোলকাতার সল্টলেকের ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুলে। ঘটেছিলো ২০০৭ সালের প্রথম দিকে। স্কুলের অধ্যক্ষা অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ওই ক্লাসে যারা ভালো ফল করে তাদের বই থেকেই এভাবে পাতা ছিঁড়ে নেয়া হয়েছিলো। মনে হয় ক্লাসেরই অন্য কোনো বাচ্চার কাজ এটা। কেন? অনিন্দিতা দেবীর উত্তর-‘প্রতিযোগিতা, আবার কী! আসলে ওই ১০/ ১২ জন লেখাপড়ায় ভালো। ওদের বই থেকে পাতাগুলি ছিঁড়ে নিলে পরীক্ষার আগে বিষয়টি পড়তে পারবে না ওরা। হিসেব সহজ।’
দৌড়, দৌড়, দৌড়! খুব ভালো নম্বর, সবার থেকে বেশি নম্বর, প্রথম হওয়ার মতো নম্বর পেতেই হবে। প্রতিযোগিতার চাপে পড়ুয়ারা বিভ্রান্ত। চাপ কমাতে তাই মেডিটেশনের সাহায্য নিচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। অনেকে আবার নিয়মিত কাউন্সেলিং-ও করাচ্ছেন। ভারতীয় বিদ্যাভবনে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে পড়ুয়াদের পাঁচ মিনিট মেডিটেশন করাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। একেবারে খুদেরাও যেমন রয়েছে, তেমনি বাদ যাচ্ছে না একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়ারাও।
স্কুলে মিড টার্ম পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা শুরু হয় বেলা ১১টায়। তার আধঘণ্টা আগে সাড়ে ১০টায় প্রার্থনা ও মেডিটেশন শুরু। টানা ৩০ মিনিট চোখ বন্ধ করে ডেস্কের ওপরে দুহাত রেখে পিঠ সোজা করে বসা। কিন্তু চোখ আর কতক্ষণ বন্ধ রাখা যায়? পাশের বন্ধু কী করছে, টিচার কোথায় গেলেন, এগুলো তো দেখতে ইচ্ছে করে। অধ্যক্ষা বলেন, ‘ওরা যে একভাবে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারবে না, সেটা ধরে নিয়েই আমরা এটা শুরু করেছি। তবে ওই যে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকল, মনটা একটু শান্ত হলো, সেটাতেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।’
পরীক্ষার হলে ঢুকেও বইতে চোখ বুলিয়ে নেয়ার অভ্যাসটা ভালো নয়। ওতে বাচ্চাদের মন আরো চঞ্চল হয় বলে শিশু-মনোবিদরা জানান। সেই জায়গায় ধ্যান ওদের স্থির করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন প্রথম পিরিয়ডের শুরুতে পাঁচ মিনিটের জন্যে এ অভ্যাসটি করানো হবে বলে অধ্যক্ষা জানান। তিনি বলেন, ‘মিথ্যা কথা বলবো না’, ‘সহপাঠীদের সাহায্য করবো’-এ ধরনের কিছু কথা ওরা যদি নিয়মিত মনে মনে আওড়ায়,তাহলেও ওদের মনে এর প্রভাব পড়বে।
অভিনব ভারতী স্কুলের অধ্যক্ষা সঙ্ঘমিত্রা মুখোপাধ্যায় জানান, বাচ্চাদের চাপ কমাতে তারা নিয়মিত কাউন্সেলিং করান। তিনি বলেন, অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সব থেকে বেশি চাপ কাজ করে। এর কারণ কী তা ঠিক বোঝা যায় না। এই চাপকে তারা বলছেন ‘আনডিফাইন্ড স্ট্রেস’।
চীনের স্কুলগুলোতে মেডিটেশন চর্চার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। নতুন স্কুল, নতুন ক্লাস, নতুন সেমিস্টার এবং নতুন সিলেবাস নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে সাধারণ ভীতি কাজ করে, তা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন স্কুলে গঠন করা হয়েছে মেডিটেশন ক্লাব। প্রতি বৃহস্পতিবার এই ক্লাবের সদস্য শিক্ষার্থীরা মেডিটেশন ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়। ফলে দেখা গেছে, অন্যান্যদের তুলনায় তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে এবং পরীক্ষায় তাদের ফলাফলও আগের থেকে ভালো।
তথ্যসূত্র : দি গার্ডিয়ান
আনন্দবাজার পত্রিকা