লেবু : সিজনাল ফ্লু প্রতিরোধে সবচেয়ে সস্তা, কিন্তু কার্যকরী উপায়

published : ১৪ আগস্ট ২০২৫

প্রকৃতি প্রতিটি ঋতুর জন্যে আমাদের উপহার দেয় বিশেষ বিশেষ ফল। যে অঞ্চলে যে মৌসুমে যে ফল হয় সেই ফলে সেই মৌসুমের সিজনাল রোগগুলোর প্রতিষেধক থাকে- আয়ুর্বেদের হাজার বছর আগের এই সূত্র আমাদের জীবনে এখনো কার্যকর।

বিশেষ করে বর্ষা ও শরতের সময় যখন ভাইরাল জ্বর, ফ্লু, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায় তখন প্রকৃতি আমাদের উপহার দেয় আনারস, পেয়ারা, জাম্বুরা, কমলা, মাল্টা, লেবুর মতো উপকারী ফল। এই ফলগুলো শুধু স্বাদেই নয়, গুণেও অনন্য।

তবে সবচেয়ে অবহেলিত, কিন্তু সাশ্রয়ী ও উপকারী একটি ফল হচ্ছে লেবু। যাকে আমরা অনেকেই সবজি ভেবে ভাত বা ডালের সঙ্গে খেয়ে থাকি, সেটি প্রকৃতপক্ষে একটি ফল!

লেবু মাল্টা কমলা: গুণাগুণে কে সেরা?

আমরা যাকে মাল্টা বলে চিনি, সেটির ইংরেজি নাম Orange। আর যে কমলা লেবুকে অরেঞ্জ মনে করি, সেটি আসলে Tangerine। আমাদের পরিচিত লেবু হচ্ছে Lemon। এই তিনটি ফলই ভিটামিন সি-এর দারুণ উৎস, বিশেষ করে এদের খোসায় থাকে ভিটামিন সি-এর সর্বোচ্চ ঘনত্ব।

গবেষণা অনুযায়ী প্রতিটি ফলের খোসায় ভিটামিন সি-এর পরিমাণ:

ফলভিটামিন সি (প্রতি ১০০ গ্রামে)
খোসায়ভেতরের অংশে
মাল্টা১৩৬ মি.গ্রা.৫৩.২০ মি.গ্রা.
কমলা লেবু (ট্যানজেরিন)১৩৬ মি.গ্রা.২৬.৭০ মি.গ্রা.
লেবু (লেমন)১২৯ মি.গ্রা.৫৩ মি.গ্রা.

দেখা যাচ্ছে, দামে সস্তা হলেও লেবুতে ভিটামিন সি মাল্টার প্রায় সমান। এমনকি কমলা লেবুর কোষে যেখানে মাত্র ২৬.৭০ মি.গ্রা. ভিটামিন সি পাওয়া যায়, সেখানে লেবুর রসে পাওয়া যায় এর প্রায় দ্বিগুণ!

শুধু ভিটামিন সি নয়— আছে আরও অনেক পুষ্টিগুণ!

লেবুতে থাকে—

  • আয়রন : মাল্টা বা কমলার চেয়ে অনেক বেশি
  • ফসফরাস : হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী
  • সোডিয়াম : শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স রক্ষা করে। (মাল্টায় সোডিয়াম থাকে না)

মাল্টায় ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার ও জিংক পাওয়া যায়। তবে দাম ও সহজপ্রাপ্যতার দিক থেকে লেবুই সবচেয়ে বুদ্ধিমান পছন্দ। দামের তুলনা করলেই আপনি তা বুঝতে পারবেন। চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি মাল্টা ও কমলার দামে যেখানে ৪০০-৪৫০ টাকা বা তারও বেশি, সেখানে এক কেজি লেবু কিনতে পারবেন মাত্র ৫০ টাকা বা তারও কমে!   

লেবু খাবেন কীভাবে?

অনেকেই লেবুর রস পান করেন, কিন্তু খোসাটা ফেলে দেন। অথচ খোসাতেই থাকে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি। লেবুর রসে সাইট্রিক এসিড আছে বলে এর স্বাদ টক। কিন্তু লেবুর খোসায় আছে অ্যাসকরবিক এসিড। তাই এতে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ বেশি। এই Ascorbic acid শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

প্রতিদিনের খাবারে লেবুর ব্যবহার:

  • মাঝারি আকারের ১টি লেবুর অর্ধেক খোসা কুচি করে সালাদ, ভাত বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মেশাতে পারেন
  • লেবুর রস পান করুন শরবতের মতো করে। স্বাদের জন্যে গুড় মেশাতে পারেন। তবে চিনি মেশাবেন না।  
  • আদা ও মধুর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন— এই দ্রবণ জ্বর, ঠান্ডা ও গলা ব্যথায় উপকারী

সচেতন হোন; ফল হিসেবে লেবুর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ান

লেবুকে শুধুমাত্র ‘ভাতের সাথে খাওয়ার একটি উপাদান’ হিসেবে না দেখে ফল হিসেবে গ্রহণ করুন। এতে আপনি যেমন পুষ্টি পাবেন, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।

লেবুকে যদি আমরা ফল ভাবি এবং মাল্টা ও কমলা লেবুর বিকল্প হিসেবে লেবুকে গ্রহণ করি তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে; বর্ষাকালে, যখন ডেঙ্গু ও ভাইরাল জ্বরের প্রাদুর্ভাব বাড়ে, তখন আমরা অনেক বেশি সুস্থ থাকব। 

প্রকৃতি প্রতিটি মৌসুমেই আমাদের জন্য রোগ প্রতিরোধের সঠিক পথ বলে দেয়। আমরা যদি তা চিনতে এবং অনুসরণ করতে পারি, তাহলেই বাঁচব অনেক রোগ, ব্যয় ও কষ্ট থেকে।

লেবু ফল— হ্যাঁ, ফলই! এটি যেন আপনার পাতে নিয়মিত থাকে।