হজের শুদ্ধাচার

আবু হুরায়রা (রা) বর্ণীত বোখারী ও মুসলিম শরীফের একটি হাদিস মতে, নবীজী (স) ঈমান ও জেহাদের পর হজকে সর্বোত্তম কাজ বলে অভিহিত করেছেন। তবে শর্ত হলো, হজটি হতে হবে ত্রুটি ও গুনাহমুক্ত।

আর হজ পালন ত্রুটিমুক্ত হবে হজের শুদ্ধাচারগুলো যথাযথভাবে পরিপালন করলে।

তাই আসুন জেনে নেই হজের শুদ্ধাচার-

প্রস্তুতি নিন আগে থেকেই

হজের নিয়মকানুন আগে থেকেই ভালোভাবে জেনে প্রস্তুতি নিন সেই মোতাবেক। 

নিয়মাবলী কী, সাথে কী কী নিতে হবে, কোথায় কখন কোন কাজটি করতে হবে এগুলো নিজ উদ্যোগে জেনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। অন্যথায় পড়তে পারেন জটিলতার মুখে।

বেশি বেশি ইবাদত ও জিকিরে নিমগ্ন থাকুন

অনেকেই হজক্যাম্পে শুয়ে-বসে আলসেমি করে সময় কাটিয়ে দেন। কার্ড খেলে সময় নষ্ট করেন এমন মানুষও আছেন। এটি একটি অশুদ্ধাচার!

আসলে হজের মূল উদ্দেশ্য আত্মিক পরিশুদ্ধি। তাই এসময় যত বেশি সম্ভব ইবাদত ও আল্লাহর জিকিরে আত্মনিমগ্ন থাকুন।

যতটা পারুন কাবা বা মসজিদুল হারামে অবস্থান করুন এবং ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাত্রি জাগরণ করুন। বিশ্রাম নিন ফজরের পর। দুপুরের খাবার খেয়ে এমনভাবে অবস্থান নিন যেন পরদিন ফজর পর্যন্ত হারাম শরীফে অবস্থান নিতে পারেন। 

হজ ফরজ একবার। তাই প্রতিটি নিয়ম ও অনুশাসনকে চেষ্টা করুন সর্বোচ্চ মনোযোগ, আন্তরিকতা ও স্রষ্টাপ্রেম দিয়ে পালনের। হেলায় সময় পার করলেন মানে সময়, শ্রম ও অর্থব্যয় থেকে স্রষ্টার আনুগত্য করার যে অসাধারণ সুযোগটি আপনার সামনে এসেছিল তাকে হাতছাড়া করলেন!  

সার্বক্ষণিক সঙ্গী হোক কোরআন মর্মবাণী!

আল্লাহ্‌র ঘরে তাঁর মেহমান হিসেবে কাটানো সময়টুকুর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে আল কোরআন বাংলা মর্মবাণীকে করুন আপনার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। নিবিড়ভাবে কাটানো সময়টিকে গ্রহণ করুন কোরআন অনুধাবনের চমৎকার সুযোগ হিসেবে। কারণ ব্যস্ত জীবনে নিজের জন্যে এতটা নিরবচ্ছিন্ন সময় আপনি জীবনে আর নাও পেতে পারেন!

মসজিদে নববীতে অবস্থানের সময় ওয়াক্ত নামাজ পড়ে নিন। বাকি বেশিরভাগ সময় মর্মবাণী পাঠের পাশাপাশি জিকির ও মেডিটেশন করুন।  

যতটা সম্ভব মৌন থাকুন

আবু হুরায়রা (রা) বর্ণীত বোখারী ও মুসলিম শরীফের আরেকটি হাদিস- “যদি কেউ হজ পালনকালে বাজে কথা বলা ও গুনাহ করা থেকে বিরত থাকে, তবে সে নবজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ অবস্থায় ফিরে যায়।“

তাই হজের পুরো সময় যতটা সম্ভব মৌন থাকুন।শুধু প্রয়োজনীয় কথা বলুন।

মুক্ত থাকুন ভার্চুয়াল ভাইরাস থেকে

কাবাঘর অত্যন্ত পবিত্র একটি জায়গায়। এই জায়গার সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষা করা একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে আপনার নৈতিক দায়িত্ব।

কাজেই কাবাঘরের সামনে সেলফি তোলা, তাওয়াফরত অবস্থায় লাইভ ভিডিও বা ফোনালাপ ইত্যাদি থেকে পুরোপুরি বিরত থাকুন।

বর্জন করুন অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা

বাহুল্য কেনাকাটা একটি রোগ। তাই হজে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা, লাগেজ বোঝাই করে পরিচিতদের জন্যে উপহার কেনা থেকে বিরত থাকুন। হজে গিয়ে তাসবিহ টুপি জায়নামাজ কিনে দেশে নিয়ে আসা অর্থহীন কাজ।

যদি এই ধরণের কিছু কাউকে উপহার দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন তাহলে সেটা দেশ থেকেই কিনে নিতে পারেন। তাতে একদিকে হজের মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচবে। অন্যদিকে আপনি রেহাই পাবেন বাড়তি ঝক্কি ও খরচ থেকে।

আপনার দায়িত্ব আপনিই নিন!  

নিজের নিরাপত্তা ও জিনিসপত্রের সুরক্ষার দায়িত্ব একান্তই আপনার। তাই সর্বাবস্থায় সচেতন থাকুন, যাতে মালামাল ও প্রয়োজনী সামগ্রী খোয়া না যায়।

আর যাওয়ার আগে চেকলিস্ট তৈরি করে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি জোগাড় করুন যাতে দরকারি জিনিসটি নিতে ভুল না হয়।  

তবে শুধু দরকারি জিনিসপত্রই সাথে রাখুন; অপ্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে বোঝা ভারী করবেন না।

সাথে যা যা রাখবেন

পাসপোর্টের ফটোকপি নোটারি করে নিন এবং বিমানের টিকেট ও মেডিকেল সার্টিফিকেটের ফটোকপি সাথে রাখুন যাতে হারিয়ে গেলে বিপদে না পড়েন। ভালো হয় যদি ডকুমেন্টগুলোসহ টাকা-পয়সা সাইড বা ওয়েস্ট ব্যাগে সার্বক্ষণিক সাথে রাখেন।

পশু যবেহ (হাদী) বা ফিদিয়ার জন্য ৭০০-৮০০ সৌদি রিয়াল আলাদা করে রাখতে ভুলবেন না। সঙ্গে কিছু বাংলাদেশী টাকাও রাখতে পারেন।

আপনার নাম, পাসপোর্ট নম্বর, হজ পরিচয়পত্র নম্বর, মোবাইল নম্বর, ট্রাভেল এজেন্টের নাম ও নং, হোটেলের নাম ও ঠিকানা, কোনো নিকট আত্মীয়ের নাম ও ঠিকানা এবং মুয়াল্লিম নং আপনার সকল ব্যাগে ইংরেজিতে লিখে রাখুন।

হজপূর্ব ও হজকালীন এই শুদ্ধাচারগুলো আন্তরিকতার সাথে পরিপালন করুন

হজ থেকে ফিরে এসেও হজের অনুভূতি লালন করুন ও দৈনন্দিন জীবনাচারে এর প্রতিফলন ঘটান। ইনশাআল্লাহ আপনার হজপালন হবে অধিকতর তৃপ্তিদায়ক ও অর্থবহ।