published : ১৬ নভেম্বর ২০২৪
ইলেক্ট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রসারের কারণে পৃথিবীর যাবতীয় খবরাখবর পাওয়া এখন মূহুর্তের ব্যাপার। প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন মানুষও অনায়াসে জেনে যায় দেশ-বিদেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে। সেই খবর তারা পরিচিত-অপরিচিত সবার মাঝে অবাধে ছড়িয়েও দিতে পারে। নিঃসন্দেহে এটি চমৎকার একটি ব্যাপার।
তবে যে-কোনো খবরের ক্ষেত্রে পাঠক হিসেবে দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- খবর ‘গ্রহণ’ এবং ‘প্রচার’। ইংরেজিতে যাকে বলা হয়- ‘Absorb’ এবং ‘Disseminate’। এই দুটি বিষয়ে অসচেতনতা অনেক সময় ব্যক্তিগত থেকে সামগ্রিক পর্যায়েও দুর্ভোগ ডেকে আনে।
লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের এই যুগে যুক্তিবুদ্ধির মাথা খেয়ে যে-কোনো তথ্যকে সত্য বলে মেনে নিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়াটা এখন যেন রেওয়াজে পরিণত হচ্ছে। তাই এর ফলে সৃষ্ট অস্থিরতা, অশান্তি, ভুল বোঝাবুঝি, ঘৃণা, সন্ত্রাসের দায় এড়ানোর সুযোগ কিন্তু পাঠকেরও নেই!
মনোবিজ্ঞানে একটি কথা আছে যে, মানুষ সাধারণত সে কথাগুলোই গ্রহণ করে যেগুলো তারা শুনতে চায়, হোক তা ভুল। তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। এ-ধরণের মাইন্ডসেট পাঠকের ‘দায়িত্বশীল’ আচরণের পরিপন্থী।
তাহলে সংবাদ গ্রহণ ও প্রচারে একজন সচেতন পাঠকের কর্তব্য কী?
উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতা মূল্যায়ন করুন : সংবাদ গ্রহণ বা শেয়ার করার আগে এর উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করুন। বিশ্বস্ত উৎসগুলোর সাধারণত নির্ভুলতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ইতিহাস থাকে।
ক্রস-ভেরিফিকেশন : তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করতে একাধিক বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য উৎসের সাথে ক্রস-চেক করুন। এটি ভুল তথ্য বা জাল খবর ছড়ানো এড়াতে সাহায্য করে।
ফ্যাক্ট-চেকিং টুল : তথ্য প্রচার করার আগে তথ্যের নির্ভুলতা যাচাই করতে ফ্যাক্ট-চেকিং টুল বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। শেয়ার করা সংবাদের সত্যতা বজায় রাখার জন্য এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পক্ষপাতিত্ব এড়িয়ে চলুন : সংবাদ গ্রহণ করার সময় ব্যক্তিগত পক্ষপাতগুলিকে একপাশে রেখে উপস্থাপিত তথ্যগুলিতে লক্ষ্য রাখুন। নিরপেক্ষ পঠনের এই অভ্যাস আপনাকে মাইন্ড সেট বা আবেগ দিয়ে প্রভাবিত না হয়ে সংবাদকে বস্তুনিষ্ঠভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
ভারসাম্যপূর্ণ প্রচার : অন্যদের বিভ্রান্ত করতে পারে এমন সংবাদ গ্রহণ এবং শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
জল্পনা এড়িয়ে চলুন : কেবলমাত্র যাচাইকৃত তথ্যই প্রচার করুন এবং গুজব বা জল্পনা ছড়ানো এড়িয়ে চলুন। কারণ এটি ভুল তথ্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
অর্থাৎ, বাহবা কুড়াতে নয়, সস্তা জনপ্রিয়তার মোহ কিংবা লাইক কমেন্ট শেয়ারের হাতছানিতেও নয়, সংবাদ প্রচার হতে হবে শুধুমাত্র একে ছড়িয়ে দিতে। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হবে গ্রহীতার কল্যাণ। এজন্যে যা করবেন-
গোপনীয়তাকে সম্মান করুন : বাধ্যতামূলক জনস্বার্থ ছাড়াই ব্যক্তিদের গোপনীয়তাকে আক্রমণ করে এমন খবর শেয়ার করা এড়িয়ে চলুন। নৈতিক প্রচার জড়িতদের অধিকার এবং মর্যাদাকে সম্মান করে।
চাঞ্চল্যকরতা এড়িয়ে চলুন : চাঞ্চল্যকর বা অতিরঞ্জিত সংবাদ শেয়ার করা বা ফ্রেম করা থেকে বিরত থাকুন। এটি ঘটনাকে বিকৃত করতে পারে এবং ভুল ব্যাখ্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। সমাজে ঘৃণার সৃষ্টি করতে পারে।
পটভূমি বা প্রাসঙ্গিকতা বুঝুন : ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পটভূমিসহ বিস্তৃত প্রেক্ষাপট বোঝার চেষ্টা করুন। প্রসঙ্গ সংবাদের তাৎপর্য বুঝতে সাহায্য করে।
ভুল না হতে এবং ভুল হয়ে গেলে করণীয়
উৎস প্রকাশ করুন, স্বচ্ছতা বজায় রাখুন : খবর শেয়ার করার সময় কোথা থেকে তথ্য পেয়েছেন তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। এটি অন্যদের তথ্য যাচাই করতে এবং আপনার প্রতিবেদনের ভিত্তি বুঝতে দেয়।
ভুল সংশোধন : তবে এতসবের পরও ভুল হয়ে যেতেই পারে। আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার শেয়ার করা খবরটি ভুল ছিল, যাদের সাথে শেয়ার করেছেন অবিলম্বে তাদেরকে এ-ব্যাপারে অবহিত করুন।
ভুল, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অপতথ্য নয়; খবর গ্রহণ ও শেয়ার হোক মানবতার কল্যাণে।