published : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১
ইসলামসহ অন্যান্য সকল ধর্মে দান এবং তার মাহাত্ম্যের যে কথা বলা হয়েছে, আমাদের সমাজে প্রচলিত ভিক্ষা-ব্যবসা কোনোভাবেই তার আওতায় পড়ে না। সম্প্রতি সাপ্তাহিক ২০০০, দৈনিক যায় যায় দিন ও দৈনিক ইত্তেফাকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ সংক্রান্ত কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ভিক্ষুকদের ঘিরে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে এক বিশাল নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে পেশাদার ভিক্ষুক-গডফাদাররা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তারাই পরিচালনা করছে রাজধানীর ভিক্ষাভিত্তিক ব্যবসাকে। ভিক্ষুক-গডফাদাররা সারা দেশ থেকে ভিক্ষুক সংগ্রহ করে তাদের ভিক্ষার নানা কৌশল শিখিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে। সাধারণভাবে ১০০ টাকায় ৫০ টাকা, কখনো কখনো ৪০/ ৪৫ টাকা পায় ভিক্ষুকরা, বাকিটা চলে যায় ভিক্ষুক-গডফাদারদের পকেটে।
ভিক্ষাবৃত্তিতে ঢাকা শহরে বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা আয় করে সঙ্ঘবদ্ধ ভিক্ষুকের দল। এদের প্রতিদিনের আয় গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। মাসিক আয় ৯ হাজার টাকা এবং বছরে আয় ১ লাখ টাকার ওপর। (সাপ্তাহিক ২০০০, ১৮.০২.২০০৫)
ভিক্ষুক জমির আলীর জমি আছে ৩৫ বিঘা। ভিক্ষার টাকা জমিয়ে প্রতিবছর রংপুরে তার গ্রামের বাড়িতে এক বিঘা করে জমি কেনেন। ছেলেমেয়েদের জন্মদিনে পাঠান ঢাকার অভিজাত কনফেকশনারির কেক।
১২টি বেবিট্যাক্সি ও ২টি মাইক্রোবাসের মালিক ভিক্ষুক জালাল মোল্লার মাসিক আয় ৬০ হাজার টাকা। গ্রামের বাড়িতে তার দোতলা বিল্ডিংয়ের নাম দিয়েছেন মুসাফিরখানা।
ভিক্ষুক করম আলী শেখের আছে সুদের ব্যবসা। শহরে ভিক্ষুক সেজে ভিক্ষা করলেও গ্রামে রয়েছে তার আলিশান বাড়ি, প্রাইভেট রিকশা। রিকশাওয়ালার বেতনই দেন মাসে আড়াই হাজার টাকা। (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৩.০১.২০০৭)
ভিক্ষাবৃত্তির একাধিক কলাকৌশল ছাড়াও কখনো কখনো ভিক্ষুকরা হয়ে ওঠে আতঙ্ক। একশ্রেণীর মাদকসেবী ভিক্ষুক হাতে ব্লেড নিয়ে ভয় দেখিয়ে রিকশা কিংবা বেবিট্যাক্সি যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। মাঝে মাঝে ছিনতাইও করে। আরেকদল ভিক্ষার নামে মানুষের মল-মূত্র গায়ে মেখে গায়ে মল ছিটিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে কেড়ে নেয় পথচারী বা রিকশাযাত্রীর সর্বস্ব।
ভিক্ষায় আরো বেশি আয়ের জন্যে পঙ্গু বা বিকলাঙ্গ হতে ডাক্তারের কাছেও ধর্না দেয় এদের কেউ কেউ। (দৈনিক যায়যায়দিন, ১২.১০.২০০৬)
আপনি যখন দানকে ভিক্ষায় রূপান্তরিত করছেন, তখন আপনি সামাজিক পরগাছা সৃষ্টিতেই সাহায্য করছেন। নবীজী (স.) এ জন্যেই ভিক্ষাবৃত্তিকে অপছন্দ করেছেন এবং ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূলে বাস্তব পদক্ষেপও নিয়েছেন।