published : ২১ আগস্ট ২০১৬
একসময় মনে করা হতো সম্পদই সুখের উৎস। সম্পদ বাড়ালেই বোধ হয় মানুষ সুখী হবে। সম্পদের পেছনে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে গিয়ে গজিয়ে উঠলো একের পর এক বস্তুবাদী সমাজ, বস্তুবাদী সভ্যতা।
কিন্তু ভুল ভাঙতে শুরু করল খুব দ্রুতই। দেখা গেল, অঢেল সম্পদ আর সীমাহীন প্রাচুর্য থাকার পরও মানুষ সুখী হতে পারছে না। ২০১৫ সালের এক গ্লোবাল ওয়েল্থ রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবীতে ব্যক্তি মালিকানাধীন যে মোট ১৩২ ট্রিলিয়ন সম্পদ আছে, তার ৪২ শতাংশই (৬৩.৫ ট্রিলিয়ন) আছে আমেরিকানদের হাতে। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘ বিশ্বে সুখী দেশগুলোর যে তালিকা করেছে, তার শীর্ষে এ পর্যন্ত একবারও যেতে পারে নি আমেরিকা।
কেন? কারণ মানুষ যখন শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে, নিজের জন্যেই সঞ্চয় করে, সে খুব দ্রুত ক্লান্ত আর নিরানন্দ হয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের এক যৌথ গবেষণার ফল প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে। ৬৩০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক এ গবেষণাটিতে অংশ নেন। প্রথমে তাদেরকে তাদের বার্ষিক আয়ের বিবরণ দিতে বলা হয়। এরপর মাসে তারা যে ব্যয়গুলো করেন, তার বিস্তারিত বিবরণ দিতে বলা হয়। নিজেদের জন্যে ব্যয় ছাড়াও দান, উপহারসহ সব ধরনের ব্যয়েরই বিবরণ দিলেন তারা। এরপর তারা সুখী কি না, তা যাচাইয়ের জন্যে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হলো তাদের।
দেখা গেল, যারা দান করেছেন, অন্যদের উপহার দেবার জন্যে ব্যয় করেছেন, তারা অনেক বেশি সুখী মনে করছেন নিজেকে, তাদের চেয়ে যারা এদের মতো অত দান করেন নি। অন্যকে দেয়ার চেয়ে নিজের জন্যেই বেশি খরচ করেছেন ঐ মানুষগুলো।
এদের মধ্যে ১৬ জন কর্মীকে বেছে নেয়া হলো, যারা একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। এদের প্রত্যেকেই বছর শেষে কোম্পানি বোনাস হিসেবে পেলেন ৩০০০ থেকে শুরু করে ৮০০০ ডলার। মজার ব্যাপার হলো, এই বোনাস পেয়ে তারা যত না খুশি হলেন, তার চেয়ে বেশি খুশি হলেন যখন আয়ের একটা অংশ তারা দিয়ে দিলেন সোশাল চ্যারিটি ফান্ডে।
এই গবেষণায় দেখা যায়, দানের এই তৃপ্তি আর আনন্দের জন্যে দিনে মাত্র পাঁচ ডলার ব্যয়ও যথেষ্ট হতে পারে।
আসলে দান যে শুধু তৃপ্তি আর প্রশান্তিই এনে দেয়, তা নয়, সম্পদে বরকত এনে দেয়, দূর করে বালা মুসিবত, দুর্দশা। একবার বনী ইসরাইলের এক লোক স্বপ্নে দেখল, তার জীবনের দুই অংশ। এক অংশে তার খুব সম্পদ, প্রাচুর্য, বিলাসিতা থাকবে। আরেক অংশে থাকবে দারিদ্র, অভাব, দুঃখ, কষ্ট। স্বপ্নেই তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, এ দুই অংশের মধ্যে কোন অংশ সে প্রথমে পেতে চায়, তা বেছে নেয়ার স্বাধীনতা তার আছে।
এটুকু দেখেই ঘুম ভেঙে গেল তার। বিষয়টি তাকে খুব ভাবাচ্ছিল। স্ত্রীর সাথে আলাপ করল। স্ত্রী তাকে পরামর্শ দিল, ঠিক আছে, যেহেতু দুটো অংশই তোমার নিয়তি, কাজেই প্রথমে তুমি সম্পদ আর প্রাচুর্যই চাও। পরদিন সে আবারো স্বপ্নে দেখল। স্বপ্নেই বলল, সে প্রথম প্রাচুর্যময় জীবনই চায়।
তা-ই হলো, পরদিন থেকেই জমি, ব্যবসা ইত্যাদি নানানভাবে বিপুল অর্থ সমাগম হতে লাগল তার বাড়িতে। এদিকে তার স্ত্রী একজন বুদ্ধিমতী মহিলা ছিল। স্বামীর এই বিপুল ধন সম্পত্তিকে শুধু নিজেদের জন্যে খরচ না করে সে স্বামীকে দিয়ে উদার হাতে সে বিলাতে লাগলো গরীব আত্মীয়, প্রতিবেশী, অভাবীদের মাঝে। এত বেশি দান খয়রাত করতে লাগল যে আস্তে আস্তে সে জনপদের চেহারাই পাল্টে গেল।
এদিকে বনী ইসরাইলীর জীবনের প্রথম অংশ শেষ হয়ে এল। এবার দ্বিতীয় অংশের পালা- দুঃখ, অভাব, বিপদ আর ঝামেলার জীবন!
কিন্তু কোথায় সেসব! বনী ইসরাইলী দেখল, সে-তো দিব্যিই আছে। কোনো বিপদাপদ, ঝামেলা নেই। প্রাচুর্যেরও কমতি নেই।
এমন সময়ই সে আবারো স্বপ্ন দেখল, গায়েবি কণ্ঠ তাকে বলছে, যেহেতু তুমি তোমার সম্পদ গরীব দুঃখীদের জন্যে ব্যয় করেছ, আল্লাহ তাই তোমার ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তোমাকে তিনি আরো সম্পদ দান করবেন। যাতে তুমি আরো বেশি বেশি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে পার।
তাই আপনার উপার্জনের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মানুষের জন্যে ব্যয় করুন। প্রাকৃতিক নিয়মেই আপনি ভালো থাকবেন, আনন্দে থাকবেন, সুখী হবেন। আপনার সম্পদেও বাড়বে সমৃদ্ধি। প্রাকৃতিক এ নিয়ম এত পরীক্ষিত যে, একবার তার প্রমাণ পেলে আপনি নিজেই চমকিত হবেন, উল্লসিত হবেন। সবসময়ের জন্যেই দাতা হওয়ার প্রেরণা পাবেন আপনি।