রসুন : এক বিস্ময়কর ওষধি!

published : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আধুনিক অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার জনক Hippocrates এর একটি বিখ্যাত উক্তি “Let food be thy medicine and medicine be thy food”; মানে আপনার খাবার এমন হওয়া উচিত যা ওষুধের মতো কাজ করবে। কারণ এ-ধরণের খাবার আমাদের সুস্থ রাখবে, কর্মময় দীর্ঘজীবনের দিকে নিয়ে যাবে। তেমনি একটি ‘ওষুধ’ হচ্ছে রসুন।

Herbal Wonder Drug!

ব্যাবিলন, মিশর, গ্রিস, রোম, চীন, প্রাচীন ভারত- প্রাচীন এই সভ্যতাগুলোর মানুষেরা নিয়মিত কাঁচা রসুন খেতেন। খেলে কী হবে তা জানতেন না; তবে খেয়ে সুস্থ থাকতেন।

এখনকার কালের বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, নিঃসন্দেহে রসুন একটি হারবাল ওয়ান্ডার ড্রাগ- বিস্ময়কর ভেষজ ওষুধ।

কাঁচা রসুনের গুণাগুণ রয়েছে এর সালফার কম্পাউন্ডে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে Allicin, Diallyl disulfide, S-allyl cysteine। এমনি সময় এই সালফার কম্পাউন্ড রসুনের মধ্যে থাকে না। এটি তৈরি হবে যখন আপনি কাঁচা রসুন কাটবেন, থ্যাতলাবেন বা চিবাবেন। কাঁচা রসুনের যা গুণাগুণ তা সালফার কম্পাউন্ড-ই উপহার দেবে। 

রসুন অত্যন্ত পুষ্টিকর! 

রসুনে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১ এবং ভিটামিন বি-৬। আরো রয়েছে বেশ কয়েকটি মিনারেল- ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, কপার, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন। 

রক্তের এলডিএল কোলেস্টেরল-ই দায়ী হৃদরোগ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপের জন্য। নিয়মিত কাঁচা রসুন খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমতে থাকবে। ফলে সহজেই আপনি এই রোগগুলো প্রতিরোধ করতে পারবেন। 

সুস্থ থাকতে চাইলে আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে হবে। গবেষকরা বলছেন, কেউ যদি একটানা ১২ সপ্তাহ কাঁচা রসুন খায় তবে তার ইমিউন সিস্টেম চাঙা হবে। সর্দি, ঠান্ডা এবং ফ্লু প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বহুগুণ। 

করোনাকালে যারা নিয়মিত কাঁচা রসুন খেয়েছে তারা করোনামুক্ত থেকেছে। করোনা হলেও ভোগান্তি কম হয়েছে তাদের। কারণ তাদের ইমিউন সিস্টেম ছিল অনেক শক্তিশালী।

ন্যাচারাল অ্যাসপিরিন! 

হৃদরোগীরা প্রতিদিন নিয়ম করে এসপিরিন খান। অ্যাসপিরিন রক্তকে তরল রাখতে সাহায্য করে। 

নিয়মিত কাঁচা রসুন খেলে অ্যাসপিরিন খাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ রসুন রক্তকে তরল রাখতে সাহায্য করে। কাজেই কাঁচা রসুনকে বলা যায় ন্যাচারাল এসপিরিন। 

ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক

এন্টিবায়োটিকের উৎস পেনিসিলিন আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯২৮ সালে। অর্থাৎ, এন্টিবায়োটিক এর ইতিহাস হচ্ছে  ৯৬ বছর। তার আগে মানুষ কি অসুস্থ হয়েছে আর মরে গেছে? না! তারা এমন কিছু ন্যাচারাল ওষুধ খেতেন যা তাদেরকে সুস্থ রাখত। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কাঁচা রসুন। 

কাঁচা রসুন ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। তাই নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস থাকলে কোনো জায়গা কেটে বা ছড়ে গেলে সহজেই এটা শুকিয়ে যায়। 

দেহের অভ্যন্তরীণ আবর্জনা দূরীকরণে ভূমিকা রাখে 

আমাদের সেলের ভেতরে প্রতিনিয়ত নানা রকম বর্জ্য পদার্থ তৈরি হচ্ছে। কাঁচা রসুনের এন্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে এসব ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা করে। 

বাহির থেকেও অনেক ক্ষতিকর পদার্থ আমাদের শরীরকে ক্ষতি করতে চেষ্টা করে। এই ক্ষতিকর পদার্থগুলোকেও প্রতিহত করতে পারে কাঁচা রসুনের এন্টি-অক্সিডেন্ট। 

শক্তিশালী ডিটক্স!  

এখনকার সময়ের অস্বাভাবিক এবং ক্যামিকেল সমৃদ্ধ খাবার আমাদেরকে অসুস্থ করে তুলছে। তাই বিশ্বব্যাপী ডিটক্স পদ্ধতি খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। তিন, পাঁচ, সাত, দশ, পনেরো দিনের ডিটক্স করা হচ্ছে যেন শরীরের ভেতরে যত ময়লা আবর্জনা আছে সব বের হয়ে যেতে পারে। 

কাঁচা রসুন শরীরের ভেতরের হেভি মেটালসকে বের করে দিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, কাঁচা রসুন এটি পাওয়ারফুল ডিটক্স। 

মহিলাদের হাড়ক্ষয় প্রতিরোধ করে

কাঁচা রসুন মহিলাদের হাড়ক্ষয় প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। 

একটি বয়সের পর থেকে মহিলাদের এস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে। এর সাথে সাথে শুরু হয় তাদের হাড়ক্ষয়। 

মহিলাদের এই হাড়ক্ষয় প্রতিরোধ করার জন্য কাঁচা রসুন অত্যন্ত কার্যকর। কেননা কাঁচা রসুন খেলে এস্ট্রোজেন হরমোনের নিঃসরণ কিছুটা হলেও বাড়ে। ফলে Osteoporosis বা হাড়ক্ষয় তুলনামূলক অনেক কম হয়।

দীর্ঘজীবনের জন্যে রসুন 

আমরা প্রত্যেকেই সুস্থ থাকতে চাই। চাই সুস্থ কর্মময় দীর্ঘ জীবনের অধিকারী হতে। আমাদের এই চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করতে পারে কাঁচা রসুন। 

তাই নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে বা অন্য যে-কোনো সময় ১/২ কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খান। এমনি খেলে জ্বালাপোড়া করতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাতের সাথে মেখে খেতে পারেন। 

এভাবে এখন থেকেই নিয়মিত রসুন খেলে আপনার সুস্থতা বাড়তে, আপনি হবেন সুস্থ কর্মময় দীর্ঘজীবনের অধিকারী।