সুস্বাস্থ্য ॥ প্রাচুর্যের অন্যতম ভিত্তি

ভবিষ্যতের কথা ভেবে সঞ্চয়ের প্রবণতা মানুষের বহু প্রাচীন অভ্যেস। গ্রামে ঘরের বাঁশের খুঁটিতে ফুটো করে, টিনের কৌটায়, মাটির ব্যাংকে কিংবা কমার্শিয়াল ব্যাংকে টাকা জমানোর অভ্যেস কমবেশি সবারই আছে। কিন্তু চাইলেও সবাই পারে না কাক্ষিত পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে। পারে কেবল বুদ্ধিমান ও হিসেবিরাই।

আধুনিককালে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তিরাই হলেন সেই হিসেবি বুদ্ধিমান ও দূরদর্শী। তারা জানেন, সুষম প্রাকৃতিক খাবার, ব্যায়াম আর নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে তারা অর্জন করেছেন যে সুস্বাস্থ্য, তা-ই হতে পারে তাদের অর্থ সঞ্চয়ের মূল হাতিয়ার। কীভাবে?

‘সুস্বাস্থ্য প্রাচুর্যের অন্যতম ভিত্তি’-বলেছেন ব্রুস পিয়েনসন, তিনি আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবা-দানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তার ভাষায়, ক্রনিক রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধ, ডাক্তার ও হাসপাতালের পেছনে খরচের পরিমাণটা কিন্তু আদতে কম নয়। একটি জনস্বাস্থ্য বীমা প্রতিষ্ঠানের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসাখাতে বাৎসরিক মোট ব্যয়ের পরিমাণ সুস্থদের তুলনায় চারগুণ বেশি, অথচ যা হতে পারতো তাদের অবসর জীবনের একটি বড় সঞ্চয়।

হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ অনেক জটিল রোগের একটি বড় কারণ মেদস্থূলতা। গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে মেদস্থূলদের খরচের পরিমাণ অন্যান্যদের তুলনায় তিনগুণ বেশি। আমেরিকান সরকার কর্তৃক পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, সে দেশে প্রতিজন ডায়াবেটিক রোগীর বাৎসরিক অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ ৫৫০ ডলারের বেশি, কারো কারো ক্ষেত্রে এটি ১২০০ ডলার পর্যন্ত। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে এ খরচ ৬০০ ডলারেরও বেশি। এ রিপোর্টের শেষে উল্লেখ করা হয়েছিলো, ওজন কমিয়ে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে এসব রোগ এড়ানোর মাধ্যমে গড়ে তুলুন ভবিষ্যতের বড় সঞ্চয়।

শুধু তা-ই নয়, ধূমপান বর্জনের মাধ্যমে সিগারেট খরচ বাঁচিয়েও প্রতিবছর সঞ্চয়ের পরিমাণ বহুগুণ বাড়াতে পারেন আপনি। এভাবে ধূমপান থেকে সৃষ্ট শ্বাসতন্ত্রের রোগ এজমা ও জীবনঘাতী ক্যান্সারসহ ফুসফুসের বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের সম্ভাবনা আপনি ঠেকিয়ে রাখতে পারেন, ভবিষ্যতের সঞ্চয়কে করতে পারেন অধিকতর মজবুত।

এ সংক্রান্ত যাবতীয় গবেষণার উপসংহারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, বর্জন করুন ভাজাপোড়া ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, টেনশন। এর পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও বিজ্ঞানসম্মত সুস্থ জীবন-অভ্যাস গড়ে তুলুন। আর এর সাথে জীবনে সঙ্গী হোক মেডিটেশনের প্রশান্তি, যা আপনাকে দেবে সার্বিক সুস্থতা ও কর্মময় দীর্ঘজীবন। সেইসাথে নিশ্চিত করবে আপনার ভবিষ্যত সঞ্চয়।

তথ্যসূত্র : টাইম ম্যাগাজিন (২২ সেপ্টেম্বর, ২০০৮)